সিলেট ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
মো. আফজল হোসেইন, বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১০ জানুয়ারি ২০২৫ : শ্রীমঙ্গলে তিনদিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি ২০২৫) শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বিকাল সাড়ে ৩টায় এ ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রেড ১) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
তিনদিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যাল একটি অনন্য সাংস্কৃতিক উৎসব যা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। এই উৎসবটি শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং এটি একটি মঞ্চ যেখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সম্প্রীতির বন্ধনকে তুলে ধরা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম. সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ অতিথিবৃন্দকে অভ্যর্থনা জানিয়ে এই অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। এরপর, খাসিয়া গোষ্ঠীর জমকালো নৃত্য, ত্রিপুরার মনোমুগ্ধকর কাথারক নৃত্য, গারোদের উত্তেজনাপূর্ণ মল্লযুদ্ধ, জুম সম্প্রদায়ের আনন্দময় জুম নৃত্য এবং মনিপুরীদের মনোহর রাসলীলা নৃত্যের মধ্য দিয়ে হারমোনি ফেস্টিভ্যালের সূচনা হয়।
কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকাটি এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা রঙের কারুকার্য ও আলপনায় মনোমুগ্ধকরভাবে সাজানো হয়। এই ফেস্টিভ্যালে মনিপুরী, খাসিয়া, ত্রিপুরা, গারোসহ ২৬টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসব প্রাঙ্গণ জমজমাট হয়ে উঠে। অর্ধশত স্টলে তাদের স্থানীয় হস্তশিল্প, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যের বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে।
অতিথিবৃন্দ স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে লোকশিল্প ও কারুশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন দেখে মুগ্ধ হন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, চা শিল্প, পর্যটন এবং সংস্কৃতি – এই তিনটি শব্দ একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে চা শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত এবং সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই তিনটির সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ। চা, বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে বিশেষ করে সিলেটে একটি জীবনযাত্রার অংশ। চা বাগানের সবুজ চাদর, চা তৈরির প্রক্রিয়া, চা খাওয়ার রীতি, সবই বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ। চা- বাগানের শ্রমিকদের জীবনযাপন, তাদের গান, নাচ, এবং তাদের দৈনন্দিন কাজ সবই বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অনন্য দিক। জাতিতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ ও সংস্কৃতি আমাদের গৌরব বহন করে। কিন্তু বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাদের এ গৌরবময় সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে কমই জানে। আজকে আমরা সবাই মিলে শ্রীমঙ্গলে এই ফেস্টিভ্যাল উদযাপন করছি। এটা আমাদের জন্য এক অসম্ভব আনন্দের বিষয়। এই উৎসব শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সমাজের বিভিন্নতা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি উদযাপন। এই সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ সাধন এবং ঐ সকল সংস্কৃতিকে দেশের জাতীয় সংস্কৃতির মূল স্রোতধারার সহিত সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের নিজস্ব একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক। তাদের এই সংস্কৃতির প্রতিফলন মেলে তাদের পোশাক, নাচ, গান এবং খাবারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের লোকশিল্প ও কারুশিল্পের মধ্যে রয়েছে অনন্য সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের ছোঁয়া। এই শিল্পকর্মগুলো শুধু আমাদের দেশের ঐতিহ্যকেই ধারণ করে না, বরং এগুলো আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা তাদের এই সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।”
উক্ত অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেন, সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্প একে অপরের পরিপূরক। একটি দেশের সংস্কৃতিই সে দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে সে দেশের সংস্কৃতিও বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। তাই, একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পকে একসাথে বিকশিত করা জরুরী বলে মনে করেন তিনি ।
এছাড়াও তিনি বলেন, অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনার দুর্নিবার আকর্ষণের মায়াবী হাতছানি মানুষকে চালিত করে প্রতিনিয়ত। একঘেঁয়ে জীবনের ক্লান্তি এড়াতে মানুষ চায় বৈচিত্র্য, বিনোদন, ভিন্নতা। সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষ বিনোদন ও প্রকৃতির সৌন্দর্যপিপাসা মেটানোর জন্য রূপ- রস-গন্ধেভরা নৈসর্গিক প্রকৃতিতে অবগাহন করছে। জীবনে বৈচিত্র্য আনতে বের হচ্ছে ভ্রমণে।
পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব আরোপ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প নানাভাবে অবদান রাখছে। প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে সংস্কার করার মাধ্যমে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য দ্বারা যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে তেমনি দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধনের মাধ্যমেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। পর্যটন শিল্পের উৎকর্ষ সাধনের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। এজন্য সম্মিলিতভাবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যােগ গ্রহণ করার মাধ্যমেই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়ে বিশ্বের দরবারে স্থান নিয়ে দাঁড়াবে।
বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন ও পুলিশ সুপার সুর্দশন কুমার রায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের জনগণ।
উল্লেখ্য, এই ফেস্টিভ্যালে ২৬টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং শুক্রবার, শনি, ও রবিবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে রাত ৮ ঘটিকা পর্যন্ত উৎসবটি চলবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D