সিলেট ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
সাংবিধানিক অধিকার হারানো নাগরিকের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে তারা রিট করতে পারবেন। তবে রিট সব বিষয়ে করা যায় কি না?
এ বিষয়ে বলা হয়েছে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ-এ। হাইকোর্টকে কতিপয় ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দিয়েছে আমাদের সংবিধান। তবে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিট চলবে না। প্রতিপক্ষ হতে হবে রাষ্ট্র কিংবা তার কোন অঙ্গে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী।
‘অনুচ্ছেদ ১০২(১) কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যেকোন একটি বলবৎ করিবার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যেকোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করিতে পারিবেন।’
(২) হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আইনের দ্বারা অন্যকোনো সমফলপ্রদ বিধান করা হয় নাই, তাহা হইলে (ক) কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে-(অ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যেকোনো দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, এমন কোনো কার্য করা হইতে বিরত রাখিবার জন্য কিংবা আইনের দ্বারা তাঁহার করণীয় কার্য করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিয়া,অথবা (আ) প্রজাতন্ত্র বা কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যেকোনো দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিরকৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হইয়াছে বা গৃহীত হইয়াছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকরতা নাই বলিয়া ঘোষণা করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশ দান করিতে পারিবেন; অথবা
(খ) যেকোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে- (অ) আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনী উপায়ে কোন ব্যক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলিয়া যাহাতে উক্ত বিভাগের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইতে পারে, সেইজন্য প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করিয়া, অথবা (আ) কোন সরকারি পদে আসীন বা আসীন বলিয়া বিবেচিত কোন ব্যক্তিকে তিনি কোনো কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠানের দাবী করিতেছেন, তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশ দান করিতে পারিবেন।
উপরের অনুচ্ছেদের কথাগুলো ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়, হাইকোর্ট বিভাগ এমন কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেন যেখানে ভিন্ন কোনো আইনের মাধ্যমে কোনো প্রকার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই।
সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ক্ষতিগ্রস্থ বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার আইনি প্রতিকার লাভের জন্য সর্বনিম্ন এখতিয়ারাধীন আদালতে অভিযোগ দায়ের করবেন। যদি তিনি বিচারিক আদালত সমুহের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি উপরের আদালতে যাবেন। অতএব দেখা যায়, সাধারণত হাইকোর্ট অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রাথমিক আদালত নয়। তবে, কিছু কিছু বিষয়ে হাইকোর্ট প্রাথমিক বা বিশেষ অধিক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে থাকে। তেমনই একটি বিষয় হলো রিট। রিট করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার পেতে পারেন।
অনুচ্ছেদ ১০২(২)(ক)(অ) অনুসারে-কোনো ক্ষতিগ্রস্থ বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে হাইকোর্ট প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোনো দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, এমন কোনো কার্য করা হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।
এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আইনবহির্ভূত কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। অপরপক্ষে এই অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় অংশ আইনের দ্বারা তাঁর করণীয় কার্য করার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারে। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নির্দেশনার সহাবস্থান রয়েছে এই অনুচ্ছেদে যা দুটি স্পষ্ট ক্ষেত্র নির্দেশ করে যাতে হাইকোর্ট তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন, সেখানে জনগণের জন্য সরকার নতুন রাস্তা নির্মান করতে চায়। সেজন্য জমি অধিগ্রহণ করা দরকার। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মূল কর্মকর্তা হলেন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি)। তিনি প্রত্যাশিত সংস্থার কাছ থেকে অনুরোধ পাওয়ার পর ভুমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ভুমি অধিগ্রহণের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদেরকে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের ৩ ধারা মোতাবেক নোটিশ প্রদান করবেন। সেই নোটিশ পাওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তা শুনবেন। সেসব আপত্তি নিষ্পত্তি করে তিনি উক্ত আইনের ৭ ধারায় ক্ষতিপূরণ গ্রহণের জন্য নোটিশ প্রদান
করে ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। দেখা গেল আপনি ৩ ধারার নোটিশ পাননি। অইন অনুযায়ী
যেসব প্রক্রিয়ায় নোটিশ জারি করার কথা, তা মোটেও অনুসরণ করা হয়নি। আপনি সরাসরি ৭ ধারার নোটিশ পেলেন। এটি নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট আইনের বিধান লঙ্ঘন। এখন বোঝা দরকার এতে কোন মৌলিক আইনটি ভঙ্গ হয়েছে?
এক্ষেত্রে প্রধানত ভুমি অধিগ্রহণ আইন এবং সে সাথে সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৪২ নং অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে, যা ১০২(২)(ক)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
সংবিধানের ১০২(২)(ক)(আ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে বা গৃহীত হয়েছে ও তাঁর কোন আইনগত কার্যকরতা নাই বলে ঘোষণা করে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে, প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারীর আইন বহির্ভূত কাজের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(অ) অনুসারে, যেকোনো ব্যক্তির আবেদনক্রমে হাইকোর্ট বিভাগ যদি মনে করে কোনো ব্যক্তিকে আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনী উপায়ে প্রহরায় আটক রাখা হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনতে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। এটি সাধারণত বেআইনি আটকাদেশের বিরুদ্ধে নাগরিকের রক্ষা করার উপায়। কিন্তু নানা অজুহাতে বেআইনি আটক বন্ধ করা যায়নি। অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(আ)-তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে- হাইকোর্ট বিভাগ, কোন সরকারি পদে আসীন বা আসীন বলে বিবেচিত কোন ব্যক্তিকে তিনি কোনো কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত আছেন বলে দাবী করছেন, তা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।
স্পষ্ট করে বলা যায় যে অনুচ্ছেদ ১০২(২)(ক)(অ)-(আ) এর অধীনে আবেদন করতে গেলে কোন ব্যক্তির নিজের সংক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(অ)-(আ) এর অধীনে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে রিট আবেদন করতে পারবেন।
আমাদের সংবিধান ভারত, ব্রিটেন ও মালয়েশিয়ার সংবিধানের আদলে রচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এটি কতটা সঠিক বা কার্যকর সেপ্রশ্ন ভিন্ন, কিন্তু এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহের যথাযথ সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, সেটিই দেখার বিষয়। যেহেতু ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকে এই আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে তাই, কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যদি আপনার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে তাহলে, আপনি রিট করতে পারবেন না।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D