২০ বছরেও সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যার বিচার হলোনা

প্রকাশিত: ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২০

২০ বছরেও সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যার বিচার হলোনা

|| রেজাউল ইসলাম || ঝিনেদা, ১৬ জুলাই ২০২০ : গত ২০ বছরেও দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিশিষ্ট সাংবাদিক জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি শামসুর রহমান কেবল হত্যার বিচার হলো না। আর কবে বিচার হবে, কি আদৌ হবে সে বিশ্বাস আর নেই। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই যশোর ব্যুরো অফিসে চেয়ারে বসে কাজ করা অবস্থায় সন্ত্রাসীরা তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। চেয়ারেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

হত্যার পর দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হেলিপ্যাডে যশোর এসেছিলেন। শামসুর রহমানের নামাজে জানাজার আগে লাশ সামনে রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিম সেদিন বলেছিলেন ” শামসুর রহমান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লিখে আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্ত তাকে রক্ষা করতে পারলাম না। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে একজন সাংবাদিকের লাশ, এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে।” তিনি সেদিন যশোরবাসীকে এ হত্যার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। দক্ষিনাঞ্চলবাসী আশায় বুক বেঁধেছিলেন দ্রুতই মন্ত্রীর আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি কার্যকর হবে। দু:খের বিষয় তা হলোনা, মামলা কখনো ঘুরপ্যাচে ঘুরতে লাগলো, কখনো ডিপ ফ্রীজে আটকা থাকতে লগলো।
সেবারের আওয়ালীগ সরকার গেল। আসলো খালেদা-নিজামীর চার দলীয় জোট সরকার। মেয়াদ শেষে তারাও বিদায় নিল। আসলো ৩ মাসের ইয়াজউদ্দিনের তত্বাবধায়ক সরকার। তিনিও গেলেন আসলো ফখরুদ্দিনের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়ক সরকার। ২ বছর পর নির্বাচন দিয়ে তিনারাও বিদায় নিলেন। আসলো সেই স্বারষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ বা মহাজোট সরকার। একটানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ প্রায় ১২ বছর ক্ষমতায়। এর মধ্যে আরো অনেকে শামসুর রহমান হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্ত আজো এ মামলার ঘুরপ্যাচ ও জটই খুললো না। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শামসুর রহমান হত্যার বিচার আদৌ হবে কিনা? এর আগে নিহত রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যার বিচারও প্রায় একই গ্যাড়াকলে আটকে রয়েছে।
শামসুর রহমান ছিলেন খুবই ভদ্র ও অমায়িক। তার ছোট ভাই সাংবাদিক সাজেদ রহমান বকুল ও প্রয়াত সাংবাদিক ফকরে আলমের মাধ্যমে শামসুর রহমান ভায়ের সাথে আমার পরিচয় ৯৭ সালের কোন একদিন। আমি তখন আজকের কাগজের কালীগঞ্জ( ঝিনেদা) প্রতিনিধি। এরপর প্রায়ই আমি তার যশোর অফিসে যেতাম। তার ব্যবহারে মুগ্ধ হতাম। তিনি কখনো আমার প্রতি বিরক্ত হতেন না। প্রখর ছিল তার দৃষ্টি ও অনুসন্ধানী রিপোর্ট। জনকন্ঠে তার রক্তাক্ত দক্ষিনপ্রান্তর শিরোনামে অনুসন্ধানী রিপোর্টটি দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছিল। এ রিপোর্ট সন্ত্রাসী ও আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যাংদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের চোখ খুলে দিয়েছিল। কোটচাঁদপুরের হুন্ডির সিরিজ রিপোর্টসহ অসংখ্য অন্যান্য অনুসন্ধানী রিপোর্ট তিনি করেছেন ও করতেন। খবরের পেছনের খবর, খবরের ভেতরের খবর তিনি সংবাদে তুলে আনতেন। তার মতো এতো বড় মাপের সাংবাদিক জেলা শহরে থেকে আর কেউ হতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই।
সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যার ২০তম বার্ষিকীতে বর্তমান সরকারের কাছে আবারো এ হত্যাকান্ডের বিচারের জোর দাবী জানাই। এবং শামসুর রহমান ভায়ের প্রতি জানাই গভীর ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ