সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫ : ঈদুল আযহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২৬ জন। গত বছরের তুলনায় প্রাণহানি বেড়েছে ২৯.০৩ শতাংশ। এবং এতে মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ১২ শত ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার।
বুধবার (১৮ জুন ২০২৫) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদুল আযহার আগে-পরে ১২ দিনে (৩ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত) দেশে ৩৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১২ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০৫৭ জন (গণমাধ্যম ও হাসপাতাল সূত্রে)। নিহতের মধ্যে নারী ৪৭, শিশু ৬৩।
১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১০৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.২৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪.৮৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৪৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৪.১০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫১ জন, অর্থাৎ ১৬.৩৪ শতাংশ।
এই সময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৮ আহত হয়েছেন। ৩২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১০৭ জন (৩৪.২৯%), বাস যাত্রী ৩৩ জন (১০.৫৭%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ আরোহী ১৮ জন (৫.৭৬%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১১ জন (৩.৫২%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৭৩ জন (২৩.৩৯%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-বিভাটেক) ২০ জন (৬.৪১%) এবং বাইসাইকেল আরোহী ৬ জন (১.৯২%) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩৬টি (৩৯.১৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২১টি (৩৪.৮৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৩৪টি (৯.৭৯%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৫৬টি (১৬.১৩%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৮১টি (২৩.৩৪%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৩টি (৪৬.৯৭%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৪৬টি (১৩.২৫%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫১টি (১৪.৬৯%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি (১.৭২%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রাম ট্রাক ১৮%, বাস ১৯.৩৫%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৮.৩১%, মোটরসাইকেল ২১.৭৩%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ২১.৩৯%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-বিভাটেক) ৬.৯৬%, বাইসাইকেল-রিকশা ২.২০% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.০৩%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮৯টি। বাস ১১৪, ট্রাক ৬৬, কাভার্ডভ্যান ১১, পিকআপ ১২, ট্রাক্টর ৪, ট্রলি ৬, ড্রাম ট্রাক ৭, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ২৯, অ্যাম্বুলেন্স ৩, মোটরসাইকেল ১২৮, থ্রি-হুইলার ১২৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪১ (নসিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-বিভাটেক), বাইসাইকেল-রিকশা ১৩ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১২টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.০৩%, সকালে ২৫.৬৪%, দুপুরে ১৮.৪৪%, বিকালে ২১.৬১%, সন্ধ্যায় ১২.৩৯% এবং রাতে ১৭.৮৬%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৩.৪২%, প্রাণহানি ২৭.৮৮%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৬৮%, প্রাণহানি ১২.৮২%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৮৫%, প্রাণহানি ১৪.১০%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.১০%, প্রাণহানি ১৩.১৪%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.০৫%, প্রাণহানি ৫.১২%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৭৪%, প্রাণহানি ৪.৪৮%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৫১%, প্রাণহানি ১২.১৭% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৬২%, প্রাণহানি ১০.২৫% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৬টি দুর্ঘটনায় ৮৭ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ফরিদপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৭টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এখানে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
* রাজধানী ঢাকায় ৩৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পুলিশ সদস্য ১ জন, সেনা সদস্য ১ জন, শিক্ষক ৩ জন, ইন্টার্নী চিকিৎসক ১ জন, পল্লী চিকিৎসক ১ জন, সাংবাদিক ২ জন, আইনজীবী ১ জন, ব্যাংক কর্মকর্তা ২ জন, এনজিও কর্মী ৩ জন, বিক্রয় প্রতিনিধি ৬ জন, গরু ব্যবসায়ী ৮ জন, ইউপি সদস্য ১ জন, পোশাক শ্রমিক ৪ জন, রাজমিস্ত্রি ২ জন, রঙ মিস্ত্রি ১ জন, থাই মিস্ত্রি ১ জন, প্রতিবন্ধী ২ জন এবং ৪৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনা:
২০২৪ সালের ঈদুল আযহার আগে-পরে ১৩ দিনে ২৬২ জন নিহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ২০.১৫ জন। এবছর প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। এই হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রাণহানি বেড়েছে ২৯.০৩ শতাংশ।
ঈদ উদযাপনকালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে। বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪.২০ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
ঈদযাত্রায় ১টি পরিবারের সকলেই নিহত হয়েছে। পিতা-পুত্র নিহতের ঘটনা ঘটেছে ৬টি। স্বামী-স্ত্রী নিহতের ঘটনা ঘটেছে ৩টি এবং মা-ছেলে নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১টি।
এবারের ঈদুল আযহায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ যাতায়াত করেছেন। ঈদের আগে ঘরমুখী যাত্রায় ছুটি কম থাকায় একসাথে বহু মানুষের যাত্রার কারণে যানবাহনের ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষ বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পিকআপে, ছোট ও স্বল্পগতির নানা প্রকার অনিরাপদ যানবাহনে যাত্রা করেছে। এই অবস্থা ঈদের ফিরতি যাত্রাতেও অব্যাহত ছিল। সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিকল হওয়া, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া এবং বৃষ্টিতে সড়ক নষ্ট হওয়ার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়েছে। চালকরা বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানোর কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এবং সড়কে দাঁড়ানো ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহত বেশি হয়েছে। যানবাহনের চাকা ফেটে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা বেড়েছে। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরম পর্যায়ে ছিল।
সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য:
ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ১২ শত ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০% যোগ করতে হবে। iRAP (International Road Assessment Program) এর Method অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য:
ঈদ উদযাপনকালে মাত্র ৪/৫ দিনে বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরিবহন করার মতো মানসম্পন্ন নিরাপদ গণপরিবহন আমাদের নেই। ফলে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে গন্তব্যে যাত্রা করেন এবং দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। অবশ্য দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আসলে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে কমপক্ষে ৩ বছরের একটি মধ্য-মেয়াদি টেকসই সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনার অধীনে রেললাইন সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে সড়ক পথের মানুষকে ট্রেনমুখী করতে হবে। নদীপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করতে হবে। সড়কে বিআরটিসি-র রুট বিস্তৃত করে বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সাথে সড়কের সকল মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ করতে হবে। ঈদযাত্রায় পোশাক শ্রমিকরা যাতে পর্যায়ক্রমে ছুটি উপভোগ করতে পারেন সেজন্য পরিকল্পনা সাজাতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের জন্য অঞ্চলভিত্তিক যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উদ্যোগ ঠিকমতো বাস্তবায়ন করলে পরবর্তী সকল ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে।
যানবাহনের চালকরা তাদের নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে মানসিকভাবে অস্থির থাকেন। তাদের মধ্যে জীবনবোধ ঠিকমতো কাজ করে না। সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। এই প্রেক্ষাপটে পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের সমন্বয় এবং ধারাবাহিকতা নেই। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
সুপারিশসমূহ:
১.দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ-র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে; ৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৯. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ১০. গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটসাইকেল ব্যবহার নিরৎসাহিত করতে হবে; ১১. ঈদের আগে-পরে সরকারী ছুটির সঠিকভাবে বিন্যাস করতে হবে; ১২. সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; ১৩. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১৪. গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে এবং ১৫. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সৈয়দ আমিরুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ :
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “দুর্ঘটনার এই চিত্র বাংলাদেশের সড়কে নিরাপত্তাহীনতা ও সীমাহীন অব্যবস্থার চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালনার প্রাথমিক শিক্ষা কোর্স (ব্যবহারিক সহ) চালু করাসহ দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করা, সকল সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো, গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা, সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ
সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা যথাযথ বাস্তবায়নে নতুন নতুন কৌশল ও ডিজিটালাইজড উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও ডিজিটাইজড করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রায় দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে, তা বাস্তবায়ন জরুরি।
যাত্রী ও পথচারীদের ব্যক্তি নিরাপত্তা ও বিধি-বিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন ও শৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ আইন প্রয়োগে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, মালিক, চালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে সেল তৈরি করে এবং প্রতি বিভাগ ও জেলায় একইভাবে সেল গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এ সেলকে সর্বদাই সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।”
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D