২৭ বছরেও রানার সম্পাদক মুকুল হত্যার বিচার হয়নি

প্রকাশিত: ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২৫

২৭ বছরেও রানার সম্পাদক মুকুল হত্যার বিচার হয়নি

Manual8 Ad Code

রেজাউল ইসলাম |

দীর্ঘ ২৭ বছরেও তৎকালীন সাহসী সাংবাদিক যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যার বিচার হলোনা।

১৯৯৮ সালের ৩০ আগষ্ট গভীর রাতে যশোর শহরে চিরুনি কলের সামনে সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে তাকে বোমা হমলায় নিহত করে। এ সময় তিনি পত্রিকা অফিস থেকে কাজ শেষে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। বোমার কয়েকটি স্প্লিন্টার তার বুকে বিদ্ধ হয়। তার অনেক আগে থেকে এবং এ হত্যাকান্ডের পরও দীর্ঘদিন যাবৎ দৈনিক রানার বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের সাহসী ও জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল। যতবড় অন্যায়-দূর্নীতির খবরই হোক না কেন, রানার ছাপতে কখনো পিছপা হয়নি। মুকুল ভাই নিজেও খুব সাহসের সাথে সম্পাদকীয় এবং কলাম লিখতেন। এ কারনেই সন্ত্রাসীরা গভীর চক্রান্ত করে তাকে অকালে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। তখনকার সরকার এ হত্যাকান্ডের সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল।

Manual8 Ad Code

পরবর্তীতে কয়েকবার সরকার অদল-বদল হয়েছে। মাঝখানে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিনের তত্বাবধায়ক সরকারও ছিল ২ বছর। কিন্ত কেউ মুকুল হত্যার সঠিক বিচারের উদ্যেগ নেয়নি। বরং রাজনৈতিক সরকার গুলো মুকুল হত্যা মামলার কল-কাঠি নেড়ে বিচারের পথ অনেকটা রুদ্ধ করেছে। মামলার তদন্তও ঘুরিয়েছে নিজেদের মতো করে। মুকুল হত্যার সুষ্ঠু বিচার আজ রাজনৈতিক ঘুর-প্যাচে বন্দী। বিচার পায়নি বলে হত্যাবার্ষিকীতে যশোরবাসী আগের মতো বড় বড় কর্মসূচী নিয়ে আর মুকুল হত্যার বিচার দাবী করে না। তারা মনে করে এ হত্যার বিচার আর হয়তো হবেনা। এখন ছোট কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে দাবী করে। যশোরের অপর সাংবাদিক জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি শামসুর রহমান হত্যা মামলার বিচারের অবস্হাও একই পথে।
১৯৯৯ সালে কালীগঞ্জ (ঝিনেদা) জাতীয় সাংবাদিক সংস্হার পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মুকুল হত্যার বিচারের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমি স্মারকলিপিও দিয়েছিলাম। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্টের দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছেও আমার আবারো জোরালো দাবী, শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে, যুদ্ধাপরাধী হত্যার বিচার করেছে, বোমা-গ্রেনেড হামলার বিচার করেছে, কিন্তু মুকুল হত্যার বিচার করেনি।
আপনার পক্ষেতো মুকুল ও শামসুর রহমান হত্যারও বিচার করা সম্ভব। যশোরের এ দুই অকুতোভয় সাহসী সিনিয়র সাংবাদিক হত্যার বিচার না হলে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছি একথা পরিপূর্ণতা পাবে না।

মুকুল ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমার ১৯৮৫ সাল থেকে। ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন করার কারনে মুকুল ভাইয়ের সাথে আমার অনেকটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও হয়েছিল। যশোর জেলা তৎকলীন ওয়ার্কার্স পার্টি সম্পাদক নুরুল আলম ভাইয়ের দৈনিক দেশহিতৈষী অফিসে মুকুল ভাইয়ের সাথে প্রায়ই দেখা হতো। তিনি নিজেও অনেক দিন ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ছিলেন। আমার সাংবাদিকতার হাতেখড়িও মুকুল ভাইয়ের মাধ্যমে দৈনিক রানারেই। প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠানোর মধ্য দিয়ে। ছাত্র সংগঠন ও পার্টির যেকোন কর্মসূচীর প্রেসবিজ্ঞপ্তি বা নিউজ পাঠিয়ে দিলে মুকুল ভাই গুরুত্ব সহকারে রানারে ছেপে দিতেন।
মুকুল ভাই নিহত হবার পরদিন আমি সকালে কালীগঞ্জে বাড়ীর ছোলা ও মসুরি বিক্রি করতে গিয়ে সংবাদ পেলাম। বিক্রি শেষেই লুঙ্গি পরা অবস্হায় বাসে চেপে মুকুল ভাইয়ের বাসায় পৌছালাম। তখন মুকুল ভাইয়ের নিথর দেহ গোসলের জন্য কলপাড়ে নেয়া হয়েছে। দেখলাম বুকে স্প্লিন্টার লাগা জায়গার দিকে তখনো হালকা রক্ত বের হচ্ছে। বাসার বাইরে শ্রদ্ধেয় নুরুল আলম ভাইসহ অসংখ্য লোক। সবার চোখে পানি, বুকে বেদনা। পরে একবার কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মুকুল ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সাইফুল আলম মুকুল ও শামসুর রহমান কেবল হত্যা এবং তাদের হত্যাকান্ডের বিচারহীনতায় দক্ষিণাঞ্চলে এমন সাহসী সাংবাদিক তৈরির পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। এ পথ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
মুকুল ভাইয়ের পিতা গোলাম মাজেদও দৈনিক রানারের সম্পাদক ছিলেন। স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে লেখায় তাকে জেলে ঢুকিয়ে চরম নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতনের কারনেই পরবর্তিতে জেল থেকে ছাড়া পেলেও তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর মুকুল ভাই রানার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। পরে মুকুল ভাইয়ের ছেলেরও অস্বাভাবিক অবস্হায় বাসার বাথরুম থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছিল। মুকুল ভাই হত্যাকান্ডের পর তার ছোটভাই আরএম টুটুল রানার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। ব্যাবসায়ীক কাজে নোয়াপাড়ায় অবস্হান কালে তারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় হয়। পত্রিকা ও সাহসী সাংবাদিকতার কারনে একটি বংশের পুরুষ সন্তানগুলো অকালে হারিয়ে গেল। যা বড়ই দু:খজনক ও বেদনাদায়ক।
আজকের এই দিনে আবারো সাহসী সাংবাদিক মুকুল ভাইসহ সকল সাংবাদিক হত্যার জোরালো বিচার দাবী করছি। সেইসাথে সকল শহীদ সাংবাদিকদের প্রতি রইল হাজারো সালাম ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

Manual5 Ad Code

উল্লেখ্য: মুকুল ভাইয়ের পিতা গোলাম মাজেদও অনেকদিন ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন।

Manual8 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code