সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী জনগোষ্ঠী এখন বিশ্বের মোট আয়ের ২০ শতাংশ এবং মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে—এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব সোশ্যাল জাস্টিস: এ ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটি নভেম্বরে দোহায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে।
বৈষম্য হ্রাসে অগ্রগতি থমকে গেছে
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সালের তুলনায় বিশ্ব আরও ধনী, স্বাস্থ্যবান এবং শিক্ষিত হলেও এর সুফল সমানভাবে ভাগ হয়নি। আয় ও সম্পদে বৈষম্য কমানোর গতি থমকে গেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের চেয়ে ধনী ১ শতাংশ জনগোষ্ঠীর আয় প্রায় আড়াই গুণ বেশি এবং সম্পদ ২০ গুণেরও বেশি।
দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও মৌলিক সেবায় ঘাটতি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে এখনো প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ দৈনিক ৩ ডলারেরও কম আয়ে বেঁচে আছে, যাদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানীয় জলের নাগাল পায় না। ফলে বৈষম্যের পাশাপাশি মৌলিক চাহিদার ঘাটতিও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
শিশুশ্রমের ভয়াবহ চিত্রও এতে উঠে এসেছে। ২০২৪ সালে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত ছিল, যাদের অর্ধেকের বেশি বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত হয়ে শিক্ষা ও শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লিঙ্গ বৈষম্য স্থায়ী
নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পুরুষের প্রতিটি ১ ডলারের বিপরীতে নারী আয় করেছে মাত্র ৭৮ সেন্ট। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক লিঙ্গভিত্তিক মজুরি বৈষম্য দূর করতে আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর সময় লাগতে পারে। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ সময়কাল প্রায় এক শতক পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।
ইতিবাচক অগ্রগতি
তবে চিত্র সম্পূর্ণ অন্ধকার নয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—
১৯৯৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাসমাপ্তির হার বেড়েছে ১০ শতাংশ পয়েন্ট, নিম্ন মাধ্যমিকে ১৭ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ২২ শতাংশ পয়েন্ট।
১৯৯৫ সালের পর থেকে বৈশ্বিক শ্রম উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ, আর উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এটি বেড়েছে ২১৫ শতাংশ।
দেশগুলোর মধ্যে শ্রম উৎপাদনশীলতায় বৈষম্য ৪০ শতাংশ কমেছে।
শিশু শ্রমের হার ১৯৯৫ সালের ২০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৭.৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
১৯৯৫ সালে যেখানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ চরম দারিদ্র্যে বাস করত, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।
২০০০ সালে যেখানে কর্মরত জনগোষ্ঠীর ২৭.৯ শতাংশ কাজ করেও দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল, ২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে ৬.৯ শতাংশে।
কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুহারও ২০০০ সালের পর থেকে ১০ শতাংশের বেশি কমেছে।
এছাড়া বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনগণ অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এসেছে, যদিও এখনও প্রায় অর্ধেক মানুষ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আইএলও মহাপরিচালকের বার্তা
আইএলওর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হুংবো বলেন, ‘শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতায় বিশ্ব অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এখনও কোটি কোটি মানুষ সুযোগ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। সামাজিক ন্যায়বিচার শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক সংহতি ও শান্তির পূর্বশর্ত।’
ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও করণীয়
প্রতিবেদন সতর্ক করে বলেছে, যদি এখনই কার্যকর নীতি না নেওয়া হয় তবে পরিবেশগত সংকট, ডিজিটাল রূপান্তর ও জনমিতি পরিবর্তনের কারণে বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে। এ জন্য আয় বৈষম্য ও লিঙ্গ বৈষম্য কমানো, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং চলমান রূপান্তরগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে পরিচালনার ওপর জোর দিয়েছে আইএলও।
আসন্ন দোহা সামাজিক সম্মেলনে এসব সুপারিশ নিয়ে বৈশ্বিক আলোচনা হবে। পাশাপাশি আইএলওর নেতৃত্বে গঠিত ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন ফর সোশ্যাল জাস্টিস’—যেখানে সরকার, শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও অন্যান্য অংশীদাররা যুক্ত আছেন—তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় এই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দিকনির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি