প্রত্যাবাসন শুরু না হলে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৫

প্রত্যাবাসন শুরু না হলে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান সম্ভব নয়

Manual1 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | কক্সবাজার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ : রোহিঙ্গা সংকটের অষ্টম বছরেও টেকসই সমাধানের কোনও আলোর দেখা নেই বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তাঁর ভাষায়, “যতদিন না রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে, ততদিন এই সংকটের কোনও স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”

রবিবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) কক্সবাজারে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার অষ্টম বছরপূর্তি’ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা, কিন্তু তহবিলের ঘাটতি

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “বিগত আট বছর ধরে সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত এক বছরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুই দফা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও বিষয়টি গুরুত্বসহ আলোচিত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ক্যাম্প এলাকায় নানা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের ফলে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও আন্তর্জাতিক তহবিল কমে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র আকার নিয়েছে। মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হলে উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন জরুরি।”

অ্যাকশনএইডের আট বছরের পথচলা

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ জানিয়েছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে গত আট বছরে সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শরণার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় কাজ করছে।
সংগঠনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, “মানবিক সহায়তার সঙ্গে কোনও আপস চলবে না। রোহিঙ্গাদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, তা বিশ্বকে মনে রাখতে হবে। তাদের জন্য ন্যায়বিচার ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য।”

তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য এখন সময় এসেছে একটি সমন্বিত জাতীয় মাস্টারপ্ল্যান তৈরির—যার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করবে।”

প্যানেল আলোচনায় টেকসই সমাধানের রূপরেখা

অনুষ্ঠানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা ছিল—
???? ‘হিউম্যানিটারিয়ান-ডেভেলপমেন্ট-পিস নেক্সাস স্ট্র্যাটেজি’
???? ‘প্রোমোটিং মাল্টি-সেক্টরাল অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ্রোচেস’

Manual2 Ad Code

এতে অংশ নেন শরণার্থী ত্রাণ কমিশনার কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা,
ইউএনএইচসিআরের সহকারী প্রতিনিধি (প্রোটেকশন) ডেভিড ওয়েলিন,
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের কক্সবাজার প্রধান জুয়ান কার্লোস মার্টিনেজ ব্যান্ডেরা,
ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর ডেভিড বাগডেন,
ইউএন উইমেনের আঞ্চলিক প্রধান সিলজা রাজান্ডার,
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিপিজে-এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহরিয়ার সাদাতসহ আরও অনেকে।

আলোচকদের মতে,
✅ টেকসই সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই একমাত্র উপায়।
✅ রোহিঙ্গা নারী ও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আয়মুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা জরুরি।
✅ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় কমিউনিটির অংশগ্রহণ ও এনজিওগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বাড়াতে হবে।
✅ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানবিক তহবিলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

Manual4 Ad Code

‘বিকন অব হোপ’ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৬ মানবিক কর্মী

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিকন অব হোপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করা হয় ছয়জন কর্মীকে।
তারা হলেন—
মাউং সোলাইমান শাহ, মোহাম্মদ ইদ্রিশ, কাজী মো. শোয়েব আমরান, মো. আজাদ মোরাল, জেসমিন প্রেমা এবং উম্মে হাফসা।

সংস্কৃতি ও মানবিকতার সংমিশ্রণ

অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র, নাটক ‘হত্তে থামিবো’ (অর্থ: কখন থামবে?) এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আদলে নির্মিত ‘ক্যাম্প হোপ’ প্রদর্শনী।
এছাড়া কক্সবাজারের এনজিও প্ল্যাটফর্মের কো-অর্ডিনেটর সুকর্ণা আব্দুল্লাহ,
আরডব্লিউ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা রাজিয়া সুলতানাসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Manual2 Ad Code

আট বছর পরও অনিশ্চয়তা

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সময়ের পরিক্রমায় এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষাধিক।
কিন্তু আট বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের কোনও নির্দিষ্ট রূপরেখা এখনো দৃশ্যমান নয়।

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখলেও, রোহিঙ্গা সংকট এখন এক দীর্ঘস্থায়ী মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

সমন্বিত পরিকল্পনার আহ্বান

আলোচকদের অভিন্ন মত, “রোহিঙ্গা সংকট আর কেবল মানবিক ইস্যু নয়—এটি এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।
প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হলেই টেকসই সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code