একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই হোক — এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন দৃঢ় অবস্থান

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৫

একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই হোক — এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন দৃঢ় অবস্থান

Manual6 Ad Code

পাভেল রহমান |

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতির আত্মপরিচয়ের দিন। ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের স্মরণে গড়ে ওঠা এই দিনটি কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং বাঙালি জাতিসত্তার মর্মস্থল। সেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল “অমর একুশে গ্রন্থমেলা” বা “একুশে বইমেলা” — যা কালের পরিক্রমায় আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মেলা ফেব্রুয়ারির বাইরের মাসে আয়োজনের প্রস্তাব বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে — একুশে বইমেলা কি ফেব্রুয়ারি ছাড়া সম্ভব?

Manual6 Ad Code

একুশে বইমেলার ঐতিহ্য ও তাৎপর্য

একুশে বইমেলা শুধু বই বিক্রির স্থান নয়; এটি আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা উদযাপনের অংশ। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তার সাংস্কৃতিক রূপায়নই এই বইমেলা।
এখানে বইয়ের পাশাপাশি ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির মিলন ঘটে। নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা শহীদদের ত্যাগের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এক জীবন্ত উৎসব এটি। তাই একুশে বইমেলাকে ব্যবসায়িক ইভেন্ট হিসেবে দেখা ভুল; এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

ফেব্রুয়ারি ছাড়া একুশে বইমেলা—অর্থহীন প্রস্তাব

অনেকে যুক্তি দেন—‘পৃথিবীর কোথাও মাসব্যাপি বইমেলা হয় না’। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ক্যালেন্ডারে রক্তে রঞ্জিত ২১শে ফেব্রুয়ারি নেই। আমাদের একুশের পেছনে রয়েছে আত্মাহুতি, রয়েছে মাতৃভাষার জন্য অমর সংগ্রাম। তাই এই বইমেলাকে ফেব্রুয়ারির বাইরে সরিয়ে নেওয়া মানে একুশের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।

বাংলা একাডেমি যদি বিশেষ কোনো কারণে বছরের অন্য সময় বইমেলা আয়োজন করতে চায়, তবে সেটি “ঢাকা বইমেলা” বা “বাংলা একাডেমি বইমেলা” নামে হতে পারে। কিন্তু “একুশে বইমেলা” শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি ও ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করেই হওয়া উচিত।

ভাষা ও সংস্কৃতির সংযোগ রক্ষায় করণীয়

Manual5 Ad Code

একুশে বইমেলাকে কেবল বাণিজ্যিক পরিসরে সীমাবদ্ধ না রেখে একে ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মেলায় ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী বই, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা, চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের পরিধি বাড়ানো উচিত।
বাংলা একাডেমি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই মেলার মাধ্যমে ভাষা গবেষণা, অনুবাদ ও বহুভাষিক সংলাপকে উৎসাহিত করতে পারে। দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী প্রকাশনাকে যুক্ত করে একে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মেলায় রূপ দেওয়া সম্ভব।

Manual1 Ad Code

উপসংহার

আমরা রক্ত দিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি অর্জন করেছি। সেই রক্তে লেখা ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের একুশে বইমেলাকে ফেব্রুয়ারিতেই রাখতে হবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে মেলার পরিসর কমানো যেতে পারে, সময়সীমা সীমিত করা যেতে পারে — কিন্তু একুশে বইমেলার সময়কাল পরিবর্তন করা যাবে না।
একুশের চেতনা ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে বাংলা একাডেমি ও রাষ্ট্রের সংস্কৃতি অঙ্গনকে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে হবে —
“একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই হবে, একুশের চেতনার সাথেই হবে।”
#

পাভেল রহমান
লেখক।
০৭ অক্টোবর ২০২৫

Manual4 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code