ভাষা সংগ্রামী কমরেড মফিজ আলীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৫

ভাষা সংগ্রামী কমরেড মফিজ আলীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | মৌলভীবাজার, ১০ অক্টোবর ২০২৫ : বাংলা ভাষা আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা, প্রখ্যাত বাম রাজনীতিবিদ, চা শ্রমিক নেতা, লেখক-সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ কমরেড মফিজ আলীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

দেশের বামপন্থী রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর নাম শ্রদ্ধা, প্রেরণা ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছে।

মৌলভীবাজারে নানা কর্মসূচি

ভাষা সংগ্রামী কমরেড মফিজ আলীর স্মৃতিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই মৌলভীবাজারে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয়েছে সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলার ধূপাটিলা গ্রামে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে।
পরে আলোচনা সভা ও পরিবারের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সহযোদ্ধা, শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে শ্রমিক অধিকার সংগ্রাম

১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধূপাটিলা গ্রামে এক শিক্ষিত ও সমাজসচেতন পরিবারে জন্ম নেন মফিজ আলী।
তরুণ বয়স থেকেই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হয়ে ওঠেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন সামনের সারির কর্মী।
এরপর কৃষক, শ্রমিক, বিশেষ করে চা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে যুক্ত হন।
বালিশিরা পাহাড় আন্দোলন, চা বাগানসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের শ্রমিক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন অবিচল নিষ্ঠায়।

রাজনৈতিক বিশ্বাসে ছিলেন দৃঢ় বামপন্থী। নিপীড়িত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তির সংগ্রামকে তিনি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করতেন।
শ্রমিক রাজনীতিকে সংগঠিত করতে তাঁর ভূমিকা আজও মৌলভীবাজার ও সিলেট অঞ্চলে আলোচিত।

রাজবন্দী জীবন ও রাজনৈতিক ত্যাগ

কমরেড মফিজ আলী জীবনের নানা সময় রাজনৈতিক কারণে বারবার কারাবরণ করেছেন।
১৯৫৪, ১৯৬০, ১৯৬৪, ১৯৬৫, ১৯৬৭, ১৯৬৯ ও ১৯৭২ সালে তিনি বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং মোট প্রায় ছয় বছর রাজবন্দী জীবন কাটান।
তবুও কোনো কারাবাস বা নির্যাতন তাঁর আদর্শকে ভাঙতে পারেনি।
সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন সততা, সাহস ও নিষ্ঠার এক জীবন্ত উদাহরণ।

লেখক, শিক্ষক ও সাংবাদিক কমরেড মফিজ আলী

রাজনীতি ও সংগঠনের পাশাপাশি তিনি ছিলেন এক নিবেদিত শিক্ষক, লেখক ও সাংবাদিক।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, সামগ্রিক মুক্তির জন্য সামাজিক সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক জাগরণের ওপর লিখতেন।
তাঁর লেখনী ও বক্তৃতা সে সময়ের তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করত সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে।
তাঁর পুত্র নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাক-এর কমলগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করছেন।

Manual3 Ad Code

দীর্ঘ রাজনৈতিক দায়িত্ব ও নেতৃত্ব

কমরেড মফিজ আলী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর সংগঠক দক্ষতা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের বাম আন্দোলনকে শক্ত ভিত্তি দেয়।

Manual5 Ad Code

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

Manual2 Ad Code

২০০৮ সালের ৩০ আগস্ট কুলাউড়ায় এক কৃষক সভা শেষে ফেরার পথে নিজ বাড়ির সামনে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১০ অক্টোবর ভোররাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর প্রয়াণে দেশের বাম রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলন হারায় এক নিরলস সংগ্রামী নেতাকে।

অম্লান স্মৃতি ও প্রেরণা

আজও কমরেড মফিজ আলী শ্রমিক, কৃষক ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে বেঁচে আছেন সহযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মনে।
তাঁর আদর্শ, ত্যাগ ও সংগ্রামের পথ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে ন্যায় ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code