সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৫ : আজ (শনিবার) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য — “আমি মেয়ে, আমি পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছি: সংকটের সম্মুখ সারিতে থাকা মেয়েরা” — কন্যাশিশুদের নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের অগ্রভাগে তুলে ধরেছে।
???? বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
জাতিসংঘের ঘোষণায় ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এই দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। কানাডার উদ্যোগে প্রস্তাবিত দিবসটির প্রেরণা আসে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার “Because I Am a Girl” আন্দোলন থেকে, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী কন্যাশিশুদের অধিকার, শিক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়—
বিশ্বে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন কিশোরী বর্তমানে বাল্যবিবাহের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ কন্যা শিশু ১৮ বছরের আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার সর্বোচ্চ, যার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের একটি।
শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, ও প্রযুক্তিগত সুযোগের ক্ষেত্রে কন্যারা এখনো পিছিয়ে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই মেয়ে।
???????? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ সরকার ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করে আসছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলিও কন্যাশিশুদের অধিকার, শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে।
শিক্ষা ও বাল্যবিবাহের চিত্র
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী —
দেশের ১৫–১৯ বছর বয়সী মেয়েদের ৫১ শতাংশ এখনো বাল্যবিবাহের শিকার।
তবে ২০০০ সালে এই হার ছিল ২৪ শতাংশ — যা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি নির্দেশ করে।
প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের ভর্তি হার এখন ৯৯ শতাংশেরও বেশি, তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার এখনো ৩৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
জাতীয় পুষ্টি জরিপ (২০২৪) অনুসারে, দেশের ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের মধ্যে ৩০ শতাংশ অপুষ্টিতে ভোগে, এবং ১৭ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। গ্রামীণ অঞ্চলে এই হার আরও বেশি।
প্রযুক্তি ও নেতৃত্বে অংশগ্রহণ
বাংলাদেশের মেয়েরা ধীরে ধীরে নেতৃত্বের জায়গায় এগিয়ে আসছে—
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ গত ৫ বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তা মেয়েদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে সম্পৃক্ত, যা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করছে।
⚖️ সামাজিক বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জ
কন্যাশিশুদের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো—
বাল্যবিবাহ ও যৌন সহিংসতা,
বিদ্যালয় ঝরে পড়া,
ডিজিটাল নিরাপত্তার অভাব,
প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার ঘাটতি,
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) বলছে, লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি প্রতি বছর প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
???? অগ্রগতি ও ইতিবাচক পরিবর্তন
বাংলাদেশে গার্লস ক্লাব, কিশোরী উন্নয়ন প্রকল্প, সেফ সিটি প্রকল্প, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম—এসব উদ্যোগের মাধ্যমে কন্যাশিশুর সুরক্ষা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, এবং নারীর ক্ষমতায়ন নীতি ২০১১ মেয়েদের অধিকারে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
???? ভবিষ্যৎ করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
“কন্যাশিশুরা শুধু ভবিষ্যতের নাগরিক নয়, তারা বর্তমানের পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।”
তাদের মতে, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে সমান সুযোগ, পরিবারে ও সমাজে মেয়েদের মতামত গ্রহণের সংস্কৃতি, এবং আইনি কাঠামোর বাস্তবায়নই পারে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে।
????️ উপসংহার
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস কেবল উদযাপন নয়—এটি আত্মসমালোচনারও দিন। বিশ্বের প্রতিটি মেয়ের হাসির, স্বপ্নের ও সম্ভাবনার সামনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না দাঁড়ায়—এটাই হোক আজকের অঙ্গীকার।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি