মুক্তির প্রেরণা ফিদেল

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৫

মুক্তির প্রেরণা ফিদেল

Manual2 Ad Code

সৈয়দ আমিরুজ্জামান |

দুনিয়ার মানচিত্রে ছোট্ট একটি দ্বীপ,
চারদিক ঘেরা অবরোধ আর কালো ষড়যন্ত্র,
তার বুক থেকেই উঠে এলো এক নাম—
ফিদেল,
যার উচ্চারণেই মানুষের মুঠো শক্ত হয়ে আসে,
আশা জেগে ওঠে,
আর নীচে পড়ে যায় ভয়।

বাতাসে তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে
দারিদ্র্য, বৈষম্য, নিপীড়নের তীক্ষ্ণ জ্বালা।
সোনালি আখের মাঠের ভিতরে
বসবাস করত ঘাম, ক্ষুধা আর অমানিশার রাত।
সেই অবিশ্রান্ত চোখগুলোর দিকে তাকিয়েই
এক তরুণ বলেছিল,
“আমার জন্ম কিউবাকে মুক্ত করার জন্য।”

Manual7 Ad Code

কে জানত, এ বাক্যটাই হয়ে উঠবে
এক জাতির আত্মপরিচয়ের আলো?

১.

মানুষের মুঠিতে জেগে ওঠা আগুন
একদিন মিলিত হয়েছিল সিয়েরা মায়েস্ত্রোর জঙ্গলে।
মুঠোভর্তি স্বপ্ন, বুকভরা বিশ্বাস—
মাত্র ৮২ জন তরুণের সে অভিযাত্রা
শুরু হয়েছিল পাহাড়ি বাতাসের মতোই ক্ষুদ্র,
কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছিল সমুদ্রের মতো বিস্তৃত।

যে রাতে অন্ধকার গুলি ছুঁড়ে ছিল,
যে প্রভাতে কিছু সঙ্গী পড়ে গিয়েছিলো
লাল মাটির বুকে—
সেই দিনগুলোর প্রতিটি শ্বাস
ইতিহাসকে তৈরি করছিল চুপিসারে।

Manual6 Ad Code

আর একদিন
বাতিস্তার বিস্তৃত প্রাসাদ ভেঙে
মানুষ জাগিয়ে রাখলো তাদের নাম—
ফিদেল, রাউল, চে—
মুক্তির আগুনে লেখা এক নতুন ক্যালেন্ডার।

২.

বিপ্লব কেবল ক্ষমতা নয়,
বিপ্লব হলো মানুষের চোখে চোখ রেখে
কথা বলা—
সত্য আর সম্মানের ভাষায়।

ফিদেল জানতেন,
একজন নেতার পদচিহ্ন
জনতার রক্তের উপর দিয়ে কখনও তৈরি হয় না,
বরং তৈরি হয় তাদের হাত ধরার ভঙ্গিতে,
তাদের বয়ান শোনার নিঃশব্দ অনুশীলনে।

তাই তিনি বলেছিলেন—
“বিপ্লব কোনো গোলাপের শয্যা নয়;
বিপ্লব মৃত্যু পর্যন্ত অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সংগ্রাম।”

এই বাক্যটিই যেন আজও
প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে ওঠে
প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের গলায়।

৩.

কিউবা তখন শিক্ষা আলোয় ঝলমল করছে,
পাহাড়ে পাহাড়ে বই যাচ্ছে
চিকিৎসা আর সমতার নিখাদ বার্তা।
মানুষ তখন প্রথম জানলো—
স্বাস্থ্য মানে দয়া নয়, অধিকার;
শিক্ষা মানে দান নয়, মানবমর্যাদা।

শিশুরা যখন প্রথম বইয়ের পাতা উল্টালো,
বয়স্করা যখন প্রথম নিজের নাম লিখলো কাগজে,
যখন দূর দুরন্তরের হাসপাতালের আলোয়
জ্বলে উঠলো প্রাণ—
তখন বিশ্ব থমকে গিয়ে
দেখেছে ফিদেল নামের এক মানুষ
কীভাবে ইতিহাসের সাথে লড়াই করে
বানাতে পারে ন্যায়ের এক দ্বীপ।

৪.

শত্রুরা ষড়যন্ত্রের প্রতিটি দরজা খোলার চেষ্টা করেছে—
৬৩৮ বার মৃত্যুর ছায়া
তাকে ছুঁতে চেয়েছিল,
তবুও
জেগে থাকা কণ্ঠস্বরকে
কেউ নেভাতে পারেনি।

তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বাঁচার জন্য নয়,
দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের পাশে থাকার জন্য;
একটি অটল সত্তা হয়ে
বলতে পেরেছিলেন—
“সমাজতন্ত্র অথবা মৃত্যু”—
কিন্তু মৃত্যু ছিল না পরাজয়ের প্রতীক,
ছিল দায়িত্বের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত
অটল থাকার প্রতিজ্ঞা।

৫.

ফিদেল আজ শারীরিকভাবে নেই।
কিন্তু শোনো—
যে মানুষটি নিজের দাড়িতে প্রতিজ্ঞা রাখতেন,
যে বলতেন “হত্যা এড়ানোর অলিম্পিকে আমি স্বর্ণপদক জিততাম”,
যে তার শেষ বক্তৃতায়ও সতর্ক করতেন মানবতার ভবিষ্যৎ নিয়ে—
তাঁর অনুপস্থিতি আসলে অনুপস্থিতি নয়,
বরং মানুষের হৃদয়ে অগ্নিস্রোতের মতো
এক স্থায়ী প্রতিধ্বনি।

আজ
শোষিত মেহনতি মানুষের ভিড়ে
যখন কেউ বলে ওঠে—
এই দুনিয়া অন্যরকম হতে পারে,
তখন তার কণ্ঠে
ফিদেলের গর্জনই লুকিয়ে থাকে।

৬.

Manual1 Ad Code

ফিদেল—
একটি নাম নয়,
একটি ইতিহাসের দীর্ঘ বুকশ্বাস।
একটি দ্বীপের সীমা ছাড়িয়ে
মানুষে মানুষের সংহতির এই লাল তারাটি
জ্বলে থাকবে
যতদিন পৃথিবীর যে কোনো কোণে
একজন মানুষ প্রশ্ন করবে
ন্যায়–অন্যায়,
সমতা–বৈষম্য,
স্বাধীনতা–শোষণের পার্থক্য।

আমরা যখন শ্রমিকের পাশে দাঁড়াই,
কৃষকের ঘামে ভেজা পথ চিনে নিই,
মানুষের মর্যাদাকে সবচেয়ে বড় সত্য হিসেবে ধরে নিই—
তখনই বুঝি,
ফিদেল আসলে তাঁর জীবন দিয়ে
আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন
এক অদম্য মানুষ হওয়ার পাঠ।

শেষ স্তবক: শ্রদ্ধা

তাই আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে
আমরা মাথা নত করে নয়,
মাথা উঁচু করে বলি—

লাল সালাম, কমরেড ফিদেল।
তোমার আগুন আমাদের শিখিয়েছে
ভয় নয়—
বিশ্বাসই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি।

Manual7 Ad Code

তোমার সংগ্রাম থাকুক
মানুষের হৃদয়ে অমলিন,
তোমার পথ দেখাক
সমতার ভবিষ্যৎ নির্মাণে।
#
(কিউবা বিপ্লবের কিংবদন্তী মহানায়ক কমরেড ফিদেল ক্যাস্ট্রো স্মরণে উৎসর্গ)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ