কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৫

কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ : কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলোজি প্ল্যাটফর্ম (বিএপি)-এর উদ্যোগে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে “কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার” শীর্ষক একটি দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক দাউদ জীবন দাশ।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মানানীয় উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের।

প্রথম অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলোজি প্ল্যাটফর্মের নির্বাহী সদস্য বদরুল আলম ও স্বাগত বক্তব্য দেন উবিনিগের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনি।

কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএআরসি-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুস ছালাম, বিএডিসি-র কর্মকর্তা ড. নাজমুল হক এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষক, আদিবাসী, দলিত, হরিজন, চা শ্রমিক, জেলে ও রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন সুলেখা মং, শামছুন্নাহার ডলি খান, পাভেল পার্থ, জাকিয়া শিশির, নমিতা হালদার, সীমা দাস সীমু, আব্দুল খালেক, রুনা লায়লা, নাহিদুল হাসান নয়ন, অশিত, আন্সার আলী চান, মেহনাজ পারভিন মালা, শ্যামালী, আমিনুর রসুল, জাহানারা বেগম, খাদিজা বেগম, নুর কামরুন নাহার, রুবিনা অমলি কিসকু, সুনু রাণী দাস, আরজিনা খাতুন ও স্বপন এক্কা।

Manual3 Ad Code

ফরিদা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না; আউশ, আমন ও রবি শস্যের গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে হারবিসাইডের ব্যবহার গোখাদ্যের সংকট সৃষ্টি করছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সার ও কীটনাশকের কারণে মাছের বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে; অ্যাকোয়াকালচারে ব্যবহৃত রাসায়নিক পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দক্ষিণাঞ্চলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে ইলিশ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং হাওড়ে অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণের ফলে মৎস্য উৎপাদন কমে গেছে। খাদ্য ডাম্পিং কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করছে এবং ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি কৃষি-বহির্ভূত কৃষি ও ফার্মবিহীন উৎপাদনের প্রবণতাকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন।

দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন উবিনিগের কনসালটেন্ট ড. এম এ সোবাহান।

Manual4 Ad Code

প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস. এম. সোহরাব উদ্দিন।
প্রধান অতিথি ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান তার বক্তব্যে বলেন, কৃষিক্ষেত্রে অনেক আত্মহননমূলক কার্যকলাপ এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং কৃষিকে রক্ষা করতে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন যে জমির উপরিভাগের মাটি তৈরি হতে ১০০ থেকে ১৫০ বছর সময় লাগে, অথচ এ মাটি খুব সহজেই নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। ভূমি-সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি এবং সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে জনগণের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন যে মানুষসহ পশু-পাখির খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি প্রশ্ন রাখেন—কেন বীজ কৃষকের হাতে নেই এবং কেন কৃষককে বীজভাণ্ডারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এগ্রোইকোলজি ভিত্তিক প্রকল্প প্রয়োজন এবং এর জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা থেকে ধাপে ধাপে পরিবেশবান্ধব কৃষির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

Manual4 Ad Code

কর্মশালার সভাপতি, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করেন বিএসডির নির্বাহী পরিচালক বনিফেস এস. গোমেজ এবং বেলার প্রোগ্রাম অফিসার ফিরোজুল ইসলাম মিলন।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলোজি প্ল্যাটফর্ম মনে করে, কৃষিজমি সুরক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনার যথাযথ বাস্তবায়ন, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বীজের ওপর কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। কর্মশালার আলোচনার সুপারিশসমূহ নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রেরণ করা হবে।

Manual3 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ