ই-কমার্স উদ্যোক্তার প্লাটফর্ম ‘উই’ এখন এক মিলিয়নের বিশাল এক পরিবার

প্রকাশিত: ২:৪১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০

ই-কমার্স উদ্যোক্তার প্লাটফর্ম ‘উই’ এখন এক মিলিয়নের বিশাল এক পরিবার

Manual4 Ad Code

|| সৈয়দা তাহমিনা বেগম || শ্রীমঙ্গল, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ : দেশে উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্লাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম- ‘উই’ এখন এক মিলিয়নের বিশাল এক পরিবার।

শুক্রবার রাতে প্রথম প্রহরে এক মিলিয়ন বা দশ লাখ সদস্যের মাইলফলক স্পর্শ করে ’উইবাসি’।

Manual4 Ad Code

এই মুহুর্তটিকে সেলিব্রেট করতে লাইভে আসেন উই-এর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা। এ সময় উইবাসিকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহুর্ত চাঁদরাতের চেয়েও আনন্দের। উই এর সকল সদস্যকে সততার সাথে ধৈর্য্য ও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে নাসিমা আক্তার নিশা অারও বলেন, এটাই সেলকোড। আর কোনো সেলকোড নাই।
ভিডিও লিংক : https://www.youtube.com/watch?v=uvF4YOTNOpo

তবে শারীরিক অসুস্থতাবোধের কারণে এই সময়ে লাইভে যুক্ত হতে পারেননি উই-এর উপদেষ্টা রাজীব আহমেদ। আজ (শুক্রবার) রাতে উদ্যোক্তাদের আনন্দের এই মুহুর্তটিকে উদযাপন করতে রাজীব আহমেদসহ উই-এর গ্রুপে লাইভে হাজির হবেন বলে জানান- নাসিমা আক্তার নিশা।

উই- ২০১৭ সালে যাত্রা

২০১৭ সালের অক্টোবরে যাত্রা করে উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম’ বা উই, যা এখন দেশের ৬৪ জেলার নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। অনলাইন প্লাটফর্মটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া প্লাটফর্মটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

উইবাসি

Manual7 Ad Code

অনলাইন ব্যবসার জগতে এ এক বিরাট পরিবার। এই ফোরামের প্রেসিডেন্ট হলেন জনাব নাসিমা আক্তার নিশা। রাজিব আহমেদ (সাবেক প্রতিষ্ঠাতা, ই-ক্যাব) এ গ্রুপের একজন পরিচালক। উই এর ওয়ার্কিং কমিটি ডিরেক্টর হিসেবে আছেন ফারজানা তন্বী। তাছাড়া বেশ কজন মডারেটর উই গ্রুপ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন।

Manual1 Ad Code

নারীরা নিজ এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে সামনে তুলে ধরছেন তাদের সংগৃহীত এবং নিজের হাতে গড়া পণ্যসামগ্রী। জামদানী, রেশমী কাপড়, তাঁতশিল্প, শীতল পাটি, মাটির জিনিসপত্র, বাঁশ ও বেতের কাজ, বাদাম, ঘি, মধু, দুধ, পনির, মিষ্টান্ন, খাঁটি সরিষার তেল, স্বাস্থ্যসম্মত হোম মেড খাবার, কেক, নকশি কাঁথা, নকশি পিঠা, নারকেলের চিড়া, দেশি চকলেট, মাশরুম, নিত্য ব্যবহার্য পোশাক, হ্যান্ড পেইন্ট, ব্লক, বাটিক, বুটিক, সুই-সুতার কাজ, মেটাল গহনাদি, ঘর সাজানোর উপকরণ, শখের কারুকাজ, কী নেই এখানে!

গ্রুপের সদস্যরা একইসাথে ক্রেতা ও বিক্রেতা। আছে দেশি পণ্য নিয়ে জানা ও শেখার অনেক সুযোগ। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে আবদ্ধ থেকে নারীরা হয়ে উঠছে স্বনির্ভর। ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে উদ্যোক্তা। উই এর মাধ্যমে নারীর সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতি হচ্ছে। লুকায়িত স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সক্রিয় হয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। দেশের প্রায় সব জেলার মানুষ নিজেদের সংস্কৃতিকে এভাবে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এ গ্রপের পাঁচজন সদস্য সেলার মিলিয়নিয়ার হয়েছেন। এরা হচ্ছেন কাকলী রাসেল তালুকদার, নিগার সুলতানা, সালমা নেহা, মনিকা দেবী ও সুলতানা পারভীন। প্রায় ২০০ এর অধিক উদ্যোক্তা হয়েছেন লাখপতি (সূত্র: উই গ্রুপ)। প্রতিদিন বাড়ছে নতুন সদস্য সংখ্যা। গত ১৫ দিনে বেড়েছে প্রায় ২ লাখ সদস্য। বিভিন্ন বয়স, শ্রেণী ও পেশার নারী-পুরুষ সংযুক্ত আছেন এখানে।

Manual4 Ad Code

কেউ থেমে নেই, স্বপ্ন পূরণের আশায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। সাফল্যও পাচ্ছেন অনেকেই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এ থেকে ভালো কিছু শিখবে, সময়কে কাজে লাগাবে এবং তারাও হয়ে উঠবে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা। সেদিন খুব বেশি দূরে নেই, যেদিন বিদেশে আমাদের দেশীয় পণ্যের জয়জয়কার থাকবে। বিশ্বে সবার মুখে মুখে থাকবে বাংলাদেশের নাম। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জন করবে আরও সুনাম।

লাইভে যা বলেছিলেন নিশা ও রাজীব আহমেদ

সম্প্রতি লাইভে আসেন উইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা এবং উপদেষ্টা ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ। তখন নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, উইকে আমরা অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই। লাখ লাখ মানুষের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা খুব সহজ নয়। মানুষ চাইলে রাতারাতি অনেক ফেসবুক গ্রুপ বা পেজ চালু করতে পারেন। কিন্তু এসব গ্রুপ বা পেজ মানুষের কাজে আসতে পারে, সে পর্যন্ত পৌঁছানো সহজ নয়, যা উই পেরেছে।

তিনি বলেন, এখানে নারী উদ্যোক্তারা গোটা দেশ থেকে সব ধরনের পণ্য নিয়ে পোস্ট দেয়। কিছু পণ্য তারা সংগ্রহ করে যেমন—শাড়ি। আবার কিছু পণ্য নিজেরা বানায় যেমন—খাবার ও হাতে তৈরি গহনা। তাদের চেষ্টার ফলে এখন আমরা অনেক পণ্যের নাম জানি। বাংলাদেশে যে কত ধরনের পণ্য তৈরি হয়, উৎপাদিত হয়, তা সম্পর্কে অনেকের ধারণা ছিল না।

উই বিষয়ে রাজিব আহমেদ বলেন, উই ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের বিশ্বস্ত একটি প্লাটফর্ম হলেও এর পরিধি আরো অনেক বেশি বিস্তৃত। অনেক পুরুষ উদ্যোক্তা এখানে সক্রিয়। কারণ তারা দেশী পণ্য বিক্রি করেন অনলাইনে। দেশী পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভিত উইয়ের হাত ধরে খুব অল্প সময়ে দৃঢ় হয়ে উঠেছে। উই ই-কমার্সে জড়িত নারী উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্লাটফর্ম কোনো সন্দেহ নেই।

উই প্লাটফর্মে যে কেউ যুক্ত হতে এবং পোস্ট দিতে পারেন। পণ্য বিক্রির আগে কিংবা পরে কাউকে এক টাকাও চার্জ/ফি/কমিশন দিতে হয় না। এটিই মূলত উইয়ের দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ। উইতে বিক্রির থেকেও ই-কমার্স নিয়ে শেখার ও জানার দিকে গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সমর্থনে দেশব্যাপী এ পর্যন্ত ই-কমার্স উদ্যোক্তার জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পেরেছে উই। এজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

উই সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্লাটফর্মটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের মাসে মোট বিক্রির নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে টাকার অংকটা কয়েক কোটি হবে সন্দেহ নেই। বিক্রির পর প্রচুর রিভিউ পোস্ট আসে। করোনার মধ্যে যেখানে বেশির ভাগ ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ আর গ্রুপে হতাশা দেখা যাচ্ছে। উই এদিকে পুরোই ব্যতিক্রম। বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত যেসব পণ্য হারিয়ে যেতে বসেছে, সেসব পণ্যের পাশাপাশি আরো অনেক পণ্য নিয়েই ব্যবসা করছেন উইয়ের উদ্যোক্তারা। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও গত কয়েক মাসে উইয়ের সদস্যদের মধ্যে শতাধিক লাখপতি খেতাব পেয়েছেন। যাদের অনেকেরই লকডাউনের মধ্যে পণ্য বিক্রি টাকার অংকে ১৬-১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এ লাখপতি উদ্যোক্তারা কখনো মনোবল হারাননি। তারা দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যেও থেমে থাকেননি। বাসায় থেকে উইয়ের গাইডলাইন মেনে নিয়মিত ছিলেন উই প্লাটফর্মে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উইয়ের সঙ্গে যুক্ত বিদেশে থাকা অনেক উদ্যোক্তাও ব্যবসা করছেন। এছাড়া বিদেশে থাকা সদস্যরা অন্য উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কেনাকাটাও করছেন। নভেল করোনাভাইরাসের সময় নিজেরা দেশে আসতে না পারলেও আত্মীয়দের মাধ্যমে কেনাকাটা করেছেন।

রাজিব আহমেদ বলেন, অর্ধযুগ ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি ফেসবুককে মানুষের কাজে লাগাতে। তাই আমি চাই দেশী পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য উই সব সময় কাজ করুক। ঢাকার বাইরে ছোট শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে দেশী পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া যেন উইয়ের প্রথম ও প্রধান কাজ হয়। উই সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ছয় বছরে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি যে মানসম্মত লেখাপড়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। উইয়ের মাধ্যমে দেশী পণ্য দেশের পাশাপাশি প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। অনেক প্রবাসী এখন বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে উইয়ের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code