চলমান শ্রম বিধিমালা সংশোধন নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়ো নিয়ে প্রশ্ন আইবিসির

প্রকাশিত: ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২০

চলমান শ্রম বিধিমালা সংশোধন নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়ো নিয়ে প্রশ্ন আইবিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক || ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০২০ : ২০১৮ সালে দেশের শ্রম আইনকে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করা হয়। সরকার আইন সংশোধনের পর পরই শ্রম বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শ্রম বিধিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে শ্রম মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করে। কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের ২ (দুই) জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, একজন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) থেকে এবং অন্যজন

ইন্ডাষ্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি থেকে।আইবিসি প্রথমেই চলমান শ্রম বিধিমালা সংশোধন নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়োয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। শ্রম আইন বা শ্রম বিধিমালা সংশোধন এটি একটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন কাজ, যাহা নিয়ে তাড়াহুড়ো করার
কোন সুযোগ নেই। যেখানে কোটি কোটি শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকার জড়িত রয়েছে। তাড়াহুড়োর কারণে কোন ভাবেই যেন মেহনতী শ্রমিক শ্রেণীর জাতীয়-আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত কোন অধিকার হরণ না হয় তার প্রতিশ্রমিকপক্ষের সজাগ দৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি আমরা প্রত্যাশা করি, যাহা সরকারের চলমান কর্মকান্ডে সম্পুর্ন অনুপস্থিত। শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা দেশের কোটি কোটি শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার কথা থাকলেও দেখা যায় আইন বা বিধি সংশোধনের সময় শুধু মাত্র পোশাক শিল্পের মালিকদের স্বার্থ রক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উহা তড়িগড়ি করে সম্পন্ন করা হয়। যার ফলে পোশাক শিল্পে কর্মরত ৪৫ লক্ষ্য শ্রমিককেও তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে গিয়ে, প্রকারান্তরে সরকার পোশাক শিল্পের বাহিরের কোটি কোটি শ্রমিককেও তাদের ন্যায় সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছেন। আজ প্রশ্নযাগে দেশের প্রায় ৮০% বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন যাদের মাধ্যমে আসে, সেই পোশাক শিল্পে নিয়োজিত ৪৫ লক্ষ শ্রমিক দেশের অন্যন্য শিল্পে নিয়োজিত কোটি কোটি শ্রমিকদের জন্য অভিশাপ কি না। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই একোর্ড এবং এলায়েন্স শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহনের কারনে, ঢাকা শহরে অবস্থিত প্রায় এক হাজার গার্মেন্টস কারখানাকে ঢাকার বাহিরে স্থানান্তর করিতে হইবে এমন পরিস্থিতির সময়, অর্থৎ ২০১৫ সালে শ্রম বিধিমালা প্রনয়ন প্রক্রিয়ায় মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছে ও প্রয়োজন অনুযায়ি৪০ (চল্লিশ) কিলোমিটারের মধ্যে কারখানা স্থানান্তর করিলে শ্রমিকগন যেতে বাধ্য থাকিবেন এবং যদি শ্রমিকগন পরিবর্তিত স্থানে যেতে না চান সেক্ষেত্রে
শ্রমিকগন রিজাইন বেনিফিট পাবেন, অর্থাৎ ৫ বৎসরের নীচে চাকুরীরত শ্রমিকরা কোন সার্ভিস বেনিফিট পাবেন না। তাহলে পোশাক শিল্পের তখনকার টার্গেট অনুযায়ী ৫ লক্ষ শ্রমিককে ঠকাতে গিয়ে, সারা দেশের অন্যন্য শিল্পে নিয়োজিত কোটি কোটি শ্রমিককে এখন সারা জীবন ঠকতে হবে। সরকার এ দায় কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না, সরকার কথায় কথায় শ্রমিক বান্ধব সরাকারহিসাবে প্রচারনা চালালেও উল্লেখিত ঘটনাই প্রমান করে যে, বানিজ্য ইস্যুতে যেমন সরকর-মালিক এক হয়ে কাজ করেন, আর এখন শ্রমিকদের স্বার্থ হরণেও সরকার
মালিক এক হয়ে কাজ করে চলেছেন। ফলে শ্রমিক শ্রেণী সর্বদাই বঞ্চনার নিস্পেসিত হচ্ছে।আইএলও কনভেনশন ৮৭ এবং ৯৮ অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয় হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি, এ পর্যন্ত যতবার আইন বা বিধিসংশোধন হয়েছে ততবারই শ্রম অধিদপ্তর স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার পথে কাটা বিছিয়েছেন। শ্রম আইনের ধারা ১৭২ এ পরিস্কার করে বলা হয়েছে যে কোন ট্রেড ইউনিয়ন বা ফেডারেশন যদি রেজিষ্ট্রি করনের জন্য শ্রম অধিদপ্তরে কোন আবেদন করেন তবে শ্রম পরিচলক বা প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন তবেই কেবল আবেদনকারীর আবেদনকে নিবন্ধন করিবেন এবং ট্রেজারী চালান জমা দেয়ার অনুমতি দিবেন। এটা স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় এবং এটি একটি কালো আইন হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এ ছাড়াও ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রম পরিচালকের মনোনিত কোন কর্মকর্তার উপস্থিতিকে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে, যাহা আইএলও কনভেনশনের সম্পুর্ন লংগন। তথা স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচলানার পরিপন্থি। স্বাধীন গনতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে কোনরুপ দাপ্তরিক জটিলতা সৃষ্টি আমরা প্রত্যাশা করিনা। আমরা দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলতে চাই। শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই এর নামে এবং নির্বাচন কমিটি গঠন হিসাব-নিকাশ সরজমিনে পরিদর্শন বা উপস্থিতি, মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়নের পরিপন্থি। আমাদের দাবী, শুধুমাত্র কারখানার পরিচয়পত্র ও ইউনিয়নের সদস্য পদের আবেদন ফরমে শ্রমিক স্বাক্ষর দিয়ে কোন ট্রেড ইউনিয়নের আবেদন জমা দিলেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন দিতে বাধ্য থাকিবে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করবেন: শ্রম বিধিমালা সংশোধনী কমিটির শ্রমিক পক্ষের
সদস্য ও আইবিসির সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব সালাউদ্দিন স্বপন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন, ইন্ডাষ্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল-
আইবিসির মাননীয় সভাপতি জনাব বদরুদ্দোজা নিজাম, সাধারণ সম্পাদক জনাব কামরুল হাসান, আইবিসির কেন্দ্রীয় নেতা জনাব আমিরুল হক আমিন, জনাব তৌহিদুর রহমান, জনাব কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, জনাব জেড এম কামরুল আনাম, জনাব গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ, হেদায়েতুল ইসলাস,জনাব রুহুল আমিন, জনাবা কল্পনা আক্তার, জনাব নূরুল ইসলাম, চায়না রহমান,জনাব শহিদুল্লাহ বাদল, জনাব শহিদুল্লাহ ভূঁইয়া, জনাব আবুল কালাম আজাদ, রাশেদুল আলম রাজু।