বই পড়ার অভ্যাস কেন জরুরি

প্রকাশিত: ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০

বই পড়ার অভ্যাস কেন জরুরি

Manual4 Ad Code

অনুসন্ধিৎসু | ঢাকা, ৩১ মার্চ ২০২০ : এগারো শতকে দ্য টেল অব গেঞ্জি নামে একটি বই লিখেছিলেন মুরাসাকি শিকিবু। ৫৪ অধ্যায়ে লেখা জাপানি লেখিকার এই বইকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম উপন্যাস।

Manual5 Ad Code

এক হাজার বছর পর আজও সেই উপন্যাস মুগ্ধ হয়ে পড়ছেন পাঠক। মুঠোফোন বা ডিজিটাল স্ক্রিনে সব যখন দেখা যায়, হাতের নাগালে যখন লোভনীয় সব সিরিজ আর সিনেমা, তখনো কেন সেকেলে ভাষা ও ভঙ্গিতে লেখা হাজার বছরের পুরোনো এই উপন্যাস পড়ছেন মানুষ?

বই পড়ে মানুষ আসলে কী পান? জ্ঞান, আনন্দ আর তৃপ্তি তো পায়ই; পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক, উভয় স্বাস্থ্যেরই উপকার হয় বিস্তর। শৈশব থেকে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দেয় সারা জীবনের গভীর ভিত্তি। বই পড়ার আরও কিছু উপকারিতার কথা জানাচ্ছে হেলথলাইন ম্যাগাজিন।

শক্তিশালী হয় মস্তিষ্ক:

বই পড়ার অভ্যাসে আক্ষরিক অর্থে মন পরিবর্তন হয়। এমআরআই স্ক্যানার ব্যবহার করে গবেষকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পড়লে অনুরণিত হয় মস্তিষ্কের নিউরন। পড়ার ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউরন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী ও পরিশীলিত হয়। ২০১৩ সালের এক গবেষণা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গবেষকেরা মস্তিষ্কের প্রভাব জানতে উপন্যাস পড়ার সময় মানব মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ৯ দিন ধরে পম্পেই নামের একটি উপন্যাস পড়েন। গল্পের উত্তেজনাকর নানান বিষয় পড়ার সময় মস্তিষ্কের নানান অংশে সক্রিয় ক্রিয়াকলাপ দেখা যায়। মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে জানা যায়, বই পড়লে মস্তিষ্কের সংযোগ বৃদ্ধি পায়। সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সের অংশে পরিবর্তন দেখা যায়। মস্তিষ্কের এই অংশ চলাফেরা ও ব্যথার মতো শারীরিক সংবেদনে প্রতিক্রিয়া জানায়।

শিশুরা বদলে যায়:

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শ, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বই পড়ুন। শৈশব ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় এমনটা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। একই সঙ্গে বই পড়ার মাধ্যমে শিশু ও মা–বাবার মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। বাড়িতে পড়ার অভ্যাস থাকলে স্কুলে শিশুর পড়া ও অন্যান্য কর্মক্ষমতা বাড়ে। তৈরি হয় যোগাযোগ দক্ষতা, বাড়ে আত্মসম্মান। বই শিশুর মস্তিষ্ককে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে।

Manual5 Ad Code

বই পড়লে সহানুভূতি বাড়ে

গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা কথাসাহিত্য পড়েন, গল্পে থাকা বিভিন্ন চরিত্রের অভ্যন্তরীণ জীবনের খোঁজ রাখেন—অন্যদের অনুভূতি ও আবেগ তাঁরা বেশি বোঝেন। গবেষকেরা এই ক্ষমতাকে ‘থিওরি অব মাইন্ড’ (মনতত্ত্ব) বলেন। সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে, নিজেকে পরিচালনা করতে, সমাজে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার সূত্র বইয়ের মধ্যে আছে। দীর্ঘমেয়াদি কথাসাহিত্য পড়ার অভ্যাস পাঠকের মনের জোর বাড়ায়।

শব্দভান্ডার তৈরি করে:

১৯৬০ দশকে বই পড়ার ওপর গবেষকেরা ‘ম্যাথিউ ইফেক্ট’ নামের একটি ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত বই পড়েন, তাঁরা নিজের অজান্তে ছোটবেলা থেকে ধীরে ধীরে বড় শব্দভান্ডার তৈরি করেন। শব্দভান্ডারের পরিধি যাঁর যত ভালো, যত উন্নত হয়, তাঁর জীবনও তত উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। নতুন শব্দ জানার ও চর্চা করার দারুন একটা উপায় হচ্ছে বই পড়া।

বয়স বাড়ার সংকট কমায়:

Manual2 Ad Code

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনকে ব্যস্ত রাখার উপায় হিসেবে বই ও ম্যাগাজিন পড়ার পরামর্শ দিয়েছে। গবেষণার চূড়ান্ত প্রমাণ এখনো হাতে না এলেও আভাস মিলেছে, বই পড়ার অভ্যাস থাকলে আলঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে যায়। বয়স্ক যাঁরা প্রতিদিন সুডোকু বা গণিতের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান, তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে, উন্নত হয়। তাই আপনি যত আগে পড়া শুরু করবেন, আপনার জন্য তত ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের রাশ ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার ২০১৩ সালে একটি গবেষণা চালায়, যেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা সারা জীবন বই পড়ার মতো কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন, তাঁদের মস্তিষ্ক ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের চেয়ে ভালো থাকে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের চাপের স্তর জানতে যোগব্যায়াম, কৌতুক ও বই পড়ার প্রভাব পরিমাপ করা হয়। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, দিনে ৩০ মিনিট বই পড়লে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন স্থির থাকে। মনস্তাত্ত্বিক সংকট কমে যায়।

জীবনমান উন্নত করে বই:

Manual8 Ad Code

রাতে ঘুমানোর আগে চিকিৎসকেরা মুঠোফোনের পরিবর্তে ছাপা বই পড়তে পরামর্শ দেন। নিয়মিত বই পড়লে কমে আসে বিষণ্নতার উপসর্গ। বই পড়লে আয়ু বাড়ে, প্রায় ১২ বছর ধরে চলা এক গবেষণা থেকে এমন তথ্য জানা যায়। ৩ হাজার ৬৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা যায়, যাঁরা বই পড়েন, তাঁরা বই না–পড়ুয়াদের তুলনায় প্রায় দুই বছর বেশি বেঁচে থাকেন। যাঁরা প্রতি সপ্তাহে ৩০ মিনিট বই পড়েন, তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ বেশি।

সূত্র: হেলথলাইন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code