করোনা ভাইরাসের ওষুধ ও প্রতিষেধকের গবেষণা তথ্য

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

ড. সুশান্ত দাস, ২৭ এপ্রিল ২০২০ : ১। পূর্বসূত্রঃ করোনা সংক্রান্ত আগের প্রবন্ধে সংক্ষেপে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ওষুধ ও প্রতিরোধক ( vaccine) আবিষ্কার সম্পর্কে বলা হয়েছিল।

ড. সুশান্ত দাস

বর্তমান প্রবন্ধে বিগত এক মাসে পৃথিবীর সবচাইতে অগ্রসর এবং আর্থিকভাবে সম্পন্ন গবেষণাগারগুলির সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুটা বিসতৃত বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা প্রায় সর্বজনবিদিত যে, পৃথিবীর এ সকল গবেষণা তথ্য ঝড়ের গতিতে ইন্টারনেটে আছড়ে পড়ছে। তার কিছু অংশ জানা যাচ্ছে, অধিকাংশই খুব সহজলভ্য নয়। এই দুঃসময়ে কিছু কিছু জার্নাল তাদের সকল পাবলিকেশন বিনা খরচে উন্মুক্ত করে দিয়েছে, তারা যথারীতি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য, কিন্তু সবাই তা করেনি, কারণ সবারই জানা, কারণ জ্ঞানও অর্থমূল্যের বাইরে নয়, এমনকি দুঃসময়েও নয়। এই প্রবন্ধে গৃহীত তথ্যাবলী মূলতঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)র নিজস্ব পোর্টাল, Bio Techniques.com সহ পৃথিবীর প্রথম সারির জার্নাল যারা তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উন্মুক্ত করে দিয়েছে, তার থেকে পাওয়া। তাদের প্রতি একাডেমিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের দেশের যে তরুণরা গবেষণা করছে বা গবেষণা করতে ইচ্ছুক তাদেরকে অবশ্যই মূল প্রবন্ধগুলি পড়তেই হবে। ২। কোভিট ১৯ এর প্রতিষেধক এবং ওষুধ আবিষ্কার গবেষণার মূল লক্ষ্য ও বৈশ্বিক উদ্যোগঃ যে কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দু’টি ফ্রন্ট বা লক্ষ্য থাকে। প্রথমটি হলো ভাইরাস যাতে শরীরকে আক্রমন করতে না পারে তারজন্য পূর্ব থেকেই শরীরের মধ্যে প্রতিরোধ তৈরী করার কৌশল। যাকে সহজ ভাষায় বলা হয় টিকাদান বা vaccination. শিশুর জন্মের পর অনেক ধরণের ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়, যাতে ঐ সব ভাইরাসের anti body শরীরে জন্মে এবং শরীর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করে মানুষ গুটি বসন্তকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, যদি ঐ শরীর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে কোন ওষুধ প্রয়োগ করে শরীরকে রক্ষা করা যাবে-সেটা নির্ধারণ করা। এ ছাড়া শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বা immunity বৃদ্ধি বা ভাইরাস যাতে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে, তার সাবধানতা অবলম্বন করা, এ সব নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞান কাজ করে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজাতির এ যুদ্ধে এ সব বিষয়গুলোই বিবেচ্য। এই মুহূর্তে তাই গবেষণাগারে চলছে প্রতিষেধক তৈরী ও আক্রান্ত হলে নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা। গত এক মাসে এর অগ্রগতির বিষয়টি প্রবন্ধে আলোচনার চেষ্টা করা হবে। আলোচনায় এর সময়রেখাকেও অনুসরণ করার চেষ্টা করা হবে। তাই গত মার্চ মাসের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত গোটা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস ২ বা COVID-19 এর প্রতিষেধক বা ভ্যাক্সিন এবং ওষুধ আবিষ্কারের প্রয়াসের যে অগ্রগতি হয়েছে, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলিকেই প্রবন্ধে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৪ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জাপানের টোকিয়োর টাকেডা (Takeda) কোম্পানী TAK 888 নামে প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে (Anti – SARS-CoV2) পলিক্লোনাল হাইপারইমিউন গ্লোবুলিন ( Polyclonal hyperImmune globulin (H-IG)) ব্যবহার করেছে কোভিটা ১৯ ( COVITA 19 ) আক্রান্ত দ্রুত অবনতিশীল রোগীর চিকিৎসার জন্যে। TAK 888, যার Generic নাম H-IG, হলো সুস্থ হয়ে ওঠা আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্লাজমা থেকে তৈরী ওষুধ যা প্লাজমাকে বিশেষ প্যাথোজেন ভিত্তিক এ্যান্টিবডি হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। নতুন আক্রান্ত রোগীদের এই এ্যান্টিবডি H-IG দেওয়া হলে ঐ রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সংক্রমন প্রতিরোধ বা দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করবে বলে TAKEDA বিশেষজ্ঞ গবেষকদের দাবী। সম্প্রতি চীনের কর্তৃপক্ষ COVID-9 চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। উ হানের স্বাস্থ্য কর্মীরা সুস্থ হয়ে ওঠা নাগরিকদের অন্য আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় তাদের প্লাজমা দানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তা ব্যবহার করেছে। ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন দেওয়া মানুষের প্লাজমা এই অসুধ তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত RNA প্রস্তুতকারী কোম্পানী ঘোষণা করেছে তারা সিংগাপুরের Duke –NUS Medical School এর সংগে যৌথ উদ্যোগে প্রচলিত mRNA ভ্যাক্সিনের চেয়ে কম মাত্রায় কার্যকর ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতার ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ কোম্পানী Alnylam Pharmaceuticals (MA, USA), যারা ২০০৬ সালে RNAi (RNA interference) আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারের সংগে সংশ্লিষ্ট তারা এবং Vir Biotechnology (CA, USA)-COVID-19 প্রতিষেধক ও ওষুধ তৈরী এবং সরবরাহের জন্য তাদের যৌথ উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে। এই মুহূর্তে এটাই তাদের প্রধান কাজ হিসেবে তারা গ্রহণ করেছে। ৬ মার্চ, ২০২০ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক RBC র কর্মকর্তারা COVID-19 প্রতিষেধক আবিষ্কারে তাদের উদ্যোগের কথা বলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের Gilead Sciences আবিষ্কৃত Remdesivir যা ইবোলা, সার্স ও মার্স ভাইরাসের জন্য কার্যকর হয়েছে, তা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ৫০% কার্যকর বলে দাবী করেছে। সম্প্রতি ২০২০ সালে, ওয়াশিংটনের Snohomish County তে একজন COVID-19 আক্রান্ত রোগীকে এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং আরও দু’জন রোগীকে এ ওষুধ প্রয়োগের জন্য তা চীনে পাঠানো হয়। Coalition for Epidemic Preparedness Innovations (CEPI) COVID-19 এর ভ্যাকসিন তৈরীর জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা করেছে। ১০ মার্চ, বিল ও মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন ( WA, USA) তাদের অংশীদার Wellcome (London, UK) এবং mastercard (NY, USA) এর সংগে সহযোগিতায় COVID-19 এর চিকিৎসায় উন্নয়নের জন্য ১২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা করেছে। ১৬ মার্চ ফ্রান্সের Sanofi (Paris, France) এবং Regeneron Pharmaceuticals (NY, USA) ঘোষণা করেছে তারা বর্তমানে সংকটাপন্ন রোগীদের যে সকল supportive care দেওয়া হচ্ছে তার চাইতে Kevzara (Sarilumab) সহ IL-6 inhibition আরও কার্যকর কিনা তার মূল্যায়ন শুরু করেছে। Regeneron এর নেতৃত্বে Phase II /III এর কাজ শুরু হয়েছে এবং রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। জার্মানির BioNTech এবং চীনের Fosun Pharmaceuticals তাদের কৌশলগত সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছে। BioNTech এর চীনে উৎপাদিত mRNA ভিত্তিক ভ্যাকসিন BNT 162 কে COVID19 এর সংক্রমনের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। জার্মানির CureVac (Tubingen, Germany) তাদের mRNA ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেকটাই অগ্রগতির কথা ঘোষণা করেছে। এমনকি তাদের ভ্যাকসিন তৈরি ও উৎপাদনের উপর একচ্ছত্র অধিকার নেবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কথাও ঘোষণা করেছে। তাদের সংগে চীনা কোম্পানীর যৌথ উদ্যোগ রয়েছে। ১৭ মার্চ, ২০২০, যুক্তরাষ্ট্রের Moderna (MA, USA) কোম্পানি SARS-CoV2 এর mRNA ভিত্তিক প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষাভিত্তিক ওষুধ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে প্রয়োগ করেছে। Pfizer (Zurich, Switzerland) এবং BioNTech (Germany) এর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক প্রকল্পের R & D সহযোগিতাকে ভিত্তি করে COVID-19 সংক্রমনের বিরুদ্ধে mRNA ভিত্তিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য যৌথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি Regeneron আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে multi-antibody সংমিশ্রণের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বা prophylaxis করতে পারে। ১৮ মার্চ, Wuhan ও Shenzhen এর প্রায় ২০০ রোগীর উপর Fujifilm (Tokyo) এর Avigan (favipiravir) এর প্রয়োগের ফলে তাদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ কমে গেছে। অন্যদিকে, যারা এ ওষুধ গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে SARS-CoV2 সনাক্তকরণ পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। ২০ মার্চে, Roche (Basel, Switzerland) ঘোষণা করেছে তারা কোভিড ১৯ দ্বারা নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীদের উপর এবং প্রচলিত রোগী পরিচর্যার সংগে Actemra/RoActemra (tocilizumab) ব্যবহারের কার্যকারিতার উপর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার মূল্যায়ন করছে। COVID-19 তে নিশ্চিত আক্রান্ত রোগীদের উপর AbbVie (IL, USA) এর Kaletra (lopinavir/ritonavir) ব্যবহার কার্যতঃ বেশী উন্নতি করতে পারেনি। ২৩ মার্চ Bayer (Germany), Novertis (Switzerland) এবং Teva Pharmaceutical Industries Ltd (Israel) কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক Chloroquine এবং hydroxychloroquine কার্যকর দাবী করেছে। চীনেও ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৩৫ টি কোম্পানি ও গবেষণাগারের সকল ধরণের যুদ্ধকালীন প্রয়াস ও তৎপরতার সার সংক্ষেপে বলা যায় মানুষের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শীঘ্রই হতে যাচ্ছে। কিন্তু তারপর কতকগুলো অপরিহার্য বৈজ্ঞানিক স্তর পার হতে হবে, যার একটা ন্যূনতম সময় দিতে হবে। Boston ভিত্তিক BioTech ফার্ম Moderna অবিলম্বে মানুষের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করবে। অন্য আর একটি Maryland ভিত্তিক কোম্পানি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘Recombinant’ vaccine তৈরী তে সচেষ্ট, যা SARS-CoV2 ভাইরাসের spike protein এর নির্যাস থেকে জেনেটিক কোড আহরণ করে মানুষের শরীরে প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া তৈরী করবে। তবে, বিশ্বব্যাপী গবেষণার এই অবিশ্বাস্য দ্রুত অগ্রগতির জন্য চীনা বিজ্ঞানীরা ধন্যবাদ পেতে পারে, কারণ তারা অত্যন্ত দ্রুততার সংগে SARS-CoV2 এর জিনোমিক সিকোয়েন্স সম্পন্ন করে WHO সহ পৃথিবীর সকল গবেষণার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। COVID-19 চিকিৎসায় এবার চীনা ডাক্তাররা চীনের ঐতিহ্যগত ওষুধ Lianhua Qingwen ক্যাপসুল যার মধ্যে ১১ ধরণের ভেসজ রয়েছে, যার প্রায় ৬১ প্রকারের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এটা মূলতঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কোভিডা ১৯ এর ক্ষেত্রেও এ ওষুধ কার্যকর হয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে LH শরীরের Vera E6 কোষের এর মধ্যে SARS- CoV-2 এর বিস্তৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে, তাছাড়া প্রদাহজনক cytokines ( TNF-alpha, IL-6, CCL-2/MCP-1, CXCL-10/IP-10) এর নির্যাস mRNA পর্যায়ে কমিয়ে ফেলেছে। ফলে, Li Runfeng এর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, LH কে SARS-CoV-2 ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। COVID-19 চিকিৎসায় Chloroquine ও Hydroxychloroquine যা ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক হিসেবে জার্মানীর Bayer Co. ১৯৩৪ সালে প্রস্তুত করেছিল তা কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে বলে C A Devaux ও তার সহ গবেষকরা মত দিয়েছেন। তবে, F Tauret ও তার সহগবেষকরা এ ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিলেও চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের পূর্বে আরও পরীক্ষা নিরিক্ষার কথা বলেছেন। ৩। COVID-19 প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রচেষ্টার সার-সংক্ষেপ ও উপসংহারঃ এ যাবতকালের বিশ্বব্যাপী সকল প্রচেষ্টার সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়- (১) মানুষের শরীরে দ্রুতই সার্স-২ ভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হতে যাচ্ছে। এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সুস্থ হয়ে ওঠা আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমা আহরণ করে সেটাকে mRNA স্তরে ভ্যাকসিন তৈরি অথবা SARS-CoV2 এর স্পাইক প্রোটিন এর জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তির ভ্যাকসিন তৈরি উভয় প্রচেষ্টা রয়েছে। ভ্যাকসিন দ্রুত হলেও ন্যূনপক্ষে ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে। (২) এই মুহূর্তে SARS-CoV2 আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য সর্বজনগ্রাহ্য পরিপূর্ণ কার্যকর পরীক্ষিত ওষুধ নেই। ক্লোরোকুইন-হাইড্রক্সোক্লোরোকুইন দিয়ে ম্যলেরিয়া ও অন্যান্য ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ লক্ষণ ভেদে ব্যবহারের সুপারিশ আছে। চীনের ঐতিহ্যগত ওষুধ LH চীনে পরীক্ষিত এবং এর ব্যবহার চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গবেষণা যে স্তরে রয়েছে, নতুন কোন অসুধ আবিষ্কারের সুস্পষ্ট তথ্য নাই। (৩) যেহেতু গবেষণায় এটা প্রায় নিশ্চিত যে, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমনই একমাত্র এবং প্রধান। ফলে, এই ভাইরাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, সংক্রমিত মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করাসহ যে করণীয় নির্দেশ করা হয়েছে, তা কঠোরভাবে মেনে চলা। এটা এই ভাইরাস প্রতিরোধে এই মুহূর্তে প্রধান হাতিয়ার। (৪) ইতিমধ্যে ‘অতিমারি’ হিসেবে কোভিড ১৯ এর যেখানে প্রাদুর্ভাব হয়েছে, রোগী পরিচর্যার চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুততার সংগে প্রস্তুত করা। যত বেশী এবং দ্রুত সংক্রমন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। (৫) এটা প্রায় পরীক্ষিত ভাবে নিশ্চিত যে কোভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি পূনঃসংক্রমনের আশংকা নেই, আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে। COVID -19 র চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের এটাই হলো সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি। গোটা বিশ্বকে এই বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

 

ড. সুশান্ত দাস : সাবেক অধ্যাপক, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ