মহামারীর ফলে চাঙ্গা হয়েছে অর্থনীতি, সাক্ষ্য রয়েছে ইতিহাসের পাতায়: পুরাতত্ত্ববিদ আনিয়া কোতার্বা

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২০

মহামারীর ফলে চাঙ্গা হয়েছে অর্থনীতি, সাক্ষ্য রয়েছে ইতিহাসের পাতায়: পুরাতত্ত্ববিদ আনিয়া কোতার্বা

Manual6 Ad Code

সিডনি (অস্ট্রেলিয়া), ১১ মে ২০২০ : অস্ট্রেলিয়ার পুরাতত্ত্ববিদ ও প্রাচীন ইতিহাস গবেষক আনিয়া কোতার্বা মনে করেন আগেও মানুষের উপরে আঘাত হেনেছে মহামারী। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে মানুষ। এগিয়ে গেছে অর্থনীতি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলা করতে গিয়ে আশঙ্কায় ভুগছে বিশ্ব। ভারতে দেড় মাস লকডাউন হতে না হতেই উপদেষ্টা সংস্থা মুডিজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এদেশে বিকাশের হার হতে পারে শূন্য। এর চেয়ে কম হওয়া মানে দেশে মন্দা শুরু হবে। অর্থনীতিবিদরা যখন আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন তখন আশার আলো দেখালেন এক পুরাতত্ত্ববিদ। তিনি জানিয়েছেন বিশ্বে এর আগে বহুবার এমন মহামারী হয়েছে। তাতে শহর উজাড় হয়ে গেছে। বদলে গেছে বাণিজ্যের পথ। শেষ পর্যন্ত আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ ও প্রাচীন ইতিহাস গবেষক আনিয়া কোতার্বা মনে করেন আগেও মানুষের উপরে (হোমো স্যাপিয়েন্স) আঘাত হেনেছে মহামারী। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে মানুষ, এগিয়ে গেছে অর্থনীতি। সারা বিশ্বে কোন বিশেষ ঘটনার ফলে মানুষের অভিযোজন ঘটেছে মূলত তা নিয়েই গবেষণা করেন কোতার্বা। তিনি জানিয়েছেন যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং প্রাচীন কালে সেই সময়ের মতো করে যখন বিশ্বায়ন হয়েছে তখনও দেখা গেছে নগরজীবনে নেমে এসেছে মহামারী। আশ্চর্যের বিষয় হল তার ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে।

Manual6 Ad Code

কোতার্বা বলেন, “ত্রয়োদশ শতকে ব্ল্যাক ডেথের ফলে ইউরোপ ও ইউরোপ লাগোয়া প্রাচ্যের দেশগুলির জনসংখ্যা চার ভাগের এক ভাগ হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে দেখা গেছে এর ফলে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ আগের চেয়ে ভাল হয়েছে, বাজার উদার হয়েছে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে।” তিনি বলেন, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা গেছে মহামারী শুরু হয় শহর থেকেই এবং প্রাচীন বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশের সময়ে তা তীব্র হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন নব্যপ্রস্তর যুগে প্রথম প্রাণীবাহিত (জুনোটিক) রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। ২৮ লক্ষ বছর আগের একটি নরকঙ্কালে (অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস) প্লেগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্লেগই হল প্রাচীনতম প্রাণীবাহিত রোগ। তাঁর মতে পুরাতত্ত্ব থেকে জানা গেছে প্রাচীন থেকে আধুনিক কাল – মানুষ মহামারীর শিকার হয়েছে এবং আরও আধুনিকতার দিকে এগিয়ে গেছে।

Manual3 Ad Code

খ্রিস্টীয় ৩০০০ থেকে ১২০০ পূর্বাব্দে নগরায়নের সময়েও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় অনেক শহরের লোকসংখ্যা কমে এক লক্ষ হয়ে গিয়েছিল। খ্রিস্টীয় ২০০ অব্দের আশপাশে রোমের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ হয়ে গিয়েছিল।

প্রাচীন বিশ্বে বিলাসদ্রব্যের (যেমন মশলা) সঙ্গে যে সব বাণিজ্যিক পথের যোগ ছিল সেই সব জায়গায় মহামারীর প্রকোপ দেখা গেছে। মধ্যযুগেও একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, “বিশ্বায়নের ঊষা কাল থেকে ক্যারাভান ও জাহাজে যাঁরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেছেন তাঁরা শুধুমাত্র সংস্কৃতি ও বাস্তুতন্ত্রের বাহক হননি, রোগও বয়ে নিয়ে গেছেন।”

Manual1 Ad Code

কোয়ারেন্টাইন শব্দেরও যোগ রয়েছে জাহাজের সঙ্গে। ১৩৭৭ সালে এই শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এর অর্থ ৪০ দিন। তখন ৪০ দিন জাহাজকে থাকতে হত বন্দরের বাইরে। ব্ল্যাক ডেথ রুখতেই এই পদক্ষেপ।

কোতার্বা জানিয়েছেন মানুষ সবচেয়ে বেশি মাত্রায় অভিযোজনে সক্ষম। পঁচাত্তর হাজার বছর আগে তোবা নামে ভয়ানক এক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশ্বে মাত্র তিন থেকে দশ হাজার মানুষ বেঁচেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন ৫৪১-৫৪২ খ্রিস্টাব্দে লেট রোমান জাস্টিনিয়ান প্লেগে আড়াই থেকে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু বেঁচে যান তার চেয়েও বেশি মানুষ।

Manual6 Ad Code

এবার মহামারীর আকার নিয়েছে কোভিড ১৯। কোবার্তা জানিয়েছেন আমরা তার সুফলও পেতে শুরু করেছি – যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন। লকডাউনের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। তিনি মনে করেন প্রাচীন রোম থেকে মধ্যযুগের ব্রিটেন – চিরকালই মানুষ পরাস্ত করেছে মহামারীকে। এবারও তা করতে পারবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code