কোভিড যুদ্ধে বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন হার্ভার্ডের ছাত্রী পেরুর অর্থমন্ত্রী মারিয়া অ্যানটোনিয়েটা আলভা

প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২০

কোভিড যুদ্ধে বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন হার্ভার্ডের ছাত্রী পেরুর অর্থমন্ত্রী মারিয়া অ্যানটোনিয়েটা আলভা

Manual8 Ad Code

লিমা (পেরু), ১২ মে ২০২০ : করোনা আতঙ্কের জন্য গোটা পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে যে অনিশ্চিত লকডাউন, তার জেরে টালমাটাল হয়ে যাবে বহু দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। এ কথা বারবারই সতর্কতার সঙ্গে জানাচ্ছেন বিশ্বের তাবৎ অর্থনীতিবিদরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, মহামারী সামলে ওঠার পরবর্তী এই অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলাতে সাধারণ মানুষের ঠিক কতদিন লাগবে, কী করলে সামাল দেওয়া যাবে এই ভয়ঙ্কর ঝড়!

Manual7 Ad Code

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যাঁরা এই মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, তাঁদেরই মধ্যে একজন উচ্চ প্রশংসিত। তিনি পেরুর অর্থমন্ত্রী মারিয়া অ্যানটোনিয়েটা আলভা। সম্প্রতি মহামারী সঙ্কটের সময়েও ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলিকে সহায়তা করার জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে রীতিমতো সফল হয়েছেন তিনি। নিজের দক্ষতা আর কঠোর পদক্ষেপের কারণে গোটা পৃথিবীর কাছে যেন এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করছেন পেরুর অর্থমন্ত্রী।
অথচ স্বভাবগত ভাবে প্রাণোচ্ছল এই তরুণীর বয়স মাত্র ৩৫ বছর। আগে থেকে না জানলে, কে বলবে এই মহিলা দাপিয়ে শাসন করছেন একটা গোটা দেশের অর্থনীতি! গোটা মন্ত্রিসভায়, গোটা দেশে তিনি পরিচিত টোনি নামে। এই নামেই তাঁকে চেনে সবাই। কিন্তু এই বয়সেই তিনি শুধু পেরুর অর্থমন্ত্রী নন, মারিয়া অ্যানটোনিয়েটা আলভা নামটা এখন বিশ্বের দরবারে পরিচিত।
অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পরে ২০১০ সালে পেরুর অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছিলেন আলভা। পরে তিনি ২০১৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে যান। লেখাপড়া সূত্রে ভারতেও কাটিয়েছেন বেশ কিছুদিন। এরপর দেশে ফিরে আবার মন্ত্রিসভায় যোগদান।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, দেশে ফেরার পরে তিনি মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন মাত্র ৮ মাস আগে। গত বছর অক্টোবর মাসে মন্ত্রিসভার রদবদল হয় সেদেশে। তখনই অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয় টোনি-কে। তার মাস তিনেকের মধ্যেই এসে পড়ে করোনা-ঝড়। গোটা দেশের একটা বড় অংশ আচমকা লকডাউন। ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ। অর্থনীতি থমকে। এমনই পরিস্থিতির মুখে পড়েন টোনি।
এই সময়ে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন দেশের অর্থনীতি নিয়ে। একে তো এই অবস্থা, তার উপরে মাত্র ৩৫ বছরের মেয়েটির হাতে দায়িত্ব! কী করে সে সামাল দেবে এত বড় ঝড়! সমস্ত সংশয় ও সন্দেহের মুখে জবাব হয়ে উঠেছেন তিনি নিজেই। সামান্য সময়ের মধ্যেও দক্ষতা ও প্রতিভার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অভিজ্ঞতা নাই বা থাকল, বিষয়টির প্রতি গভীর বোধ ও জ্ঞান তো আছে। সেই দিয়েই গোটা দেশের প্রতিটি অর্থনৈতিক স্তর ছানবিন করেন আলভা।
এরপরেই দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায় এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলিকে সহায়তার জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ চালু করেন। কারণ দেশের এই স্তরটিকে দাঁড় করিয়ে রাখতে না পারলে তার উপরের বুনিয়াদও ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে আলভার এই সিদ্ধান্ত যে সকলে সমর্থন করেছিলেন তা নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, এই করেই অনেকটা সামাল দেওয়া গেছে অর্থনৈতিক ভাঙন।
এরপরেই তাঁর প্রশংসা করে সে দেশের প্রাক্তন এক আমলা পাবলো সেকাদা বলেছেন, আলভা একজন বিচক্ষণ, পরিশ্রমী এবং যোগ্য অর্থমন্ত্রী। তাঁর জনসংযোগ তৈরির ক্ষমতা অসাধারণ বলে জানিয়েছেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কার্লোস ওলিভা। এত অল্প বয়সে এত দক্ষতা ও বিবেচনার পরিচয় দেওয়া সহজ নয়।
টোনির বাবা ছিলেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। জানা গেছে, ছোট থেকেই আলভা চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই দরিদ্রদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তাঁর শুরু থেকেই ছিল। এই চিন্তা নিয়েই অর্থনীতি পড়তে যান মেধাবী ছাত্রী। এর পরেই অর্থ মন্ত্রকের অংশ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ছোট আঞ্চলিক ব্যবসাগুলির ওপর নজর দিতে শুরু করেন আলভা।
দেখা যায়, এর ফলে রেকর্ড পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগ ঘটে। এরপরেই চলে আসে করোনা বিপর্যয়। কিন্তু আলভার অর্থনীতি-চিন্তা দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে পেরেছে এই অসময়েও। সকলকে চমকে দিয়ে বেড়েছে দেশের জিডিপি-ও।
তাই গোটা দেশ জুড়ে এখন তাঁদের অর্থমন্ত্রী টোনির প্রশংসা। সেকথাই জানান দিচ্ছে সে দেশের নানা আলোচনা, পোস্টার, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট। গোটা পেরুর যুব সমাজের কাছে তিনি এখন আইকন। তবে, অনেকেই বলছেন তিনি শুধু পেরুর নন, এই সময়ে গোটা মানবজাতির কাছে তিনি দৃষ্টান্ত।

Manual4 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code