সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২০
সৈয়দ অামিরুজ্জামান, ২০ মে ২০২০ : অনন্য এক কিংবদন্তি বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফফর অাহমদ এদেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে অালো ছড়িয়েছেন। গতবছর অনেকটা নিরবেই অামাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবাদপ্রতিম এ নেতৃত্ব নিজেকে সাদামাটাভাবে উপস্থাপন করতে ভালোবেসেছেন আজীবন। রেড স্যালুট! অধ্যাপক মোজাফফর অাহমদ।
অামার বাবা ‘৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক ‘মুফতিয়ে অাজম সাইয়্যেদুনা অাবুতাহের রহমানপুরী রহঃ’-এর ঘনিষ্ট ও সমবয়সী ৯৭ বছর বয়সে এদেশের বামপন্থী অাদর্শের বাতিঘর অধ্যাপক মোজাফফর ২০১৯ সালের ২৩ অাগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর অাগ পর্যন্ত ছিলেন ন্যাশনাল অাওয়ামী পার্টির সভাপতি। উপমহাদেশের বাম প্রগতিশীল অান্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তি ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ১৪ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের মানুষ তথা গোটা জাতি গভীর শোক প্রকাশসহ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এক শোকসভায় বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। আর আমাদের কিংবদন্তি নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি কখনও সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপস করেননি। তিনি জীবনে কোনো দিন সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি ছিলেন একজন আপসহীন নেতা।” ওই শোকসভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে স্যার সম্বোধন করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ কিংবদন্তিতুল্য সৎ রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আমরা যখন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, (মেনন ও মতিয়া গ্রুপ), এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন ১১ দফা প্রণয়ন করি, তখন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্যার আমাদের বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, আমরা সমর্থন দিলাম।
তোমাদের পাশে আছি এবং থাকব। সেই আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে আমাদের সহযোগিতা করেন। এমন কী গ্রেফতারও হয়েছেন।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মোজাফফর আহমদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমি যখন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলাম তখন দেখেছি, প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তারা একে অপরের দুই বছরের ছোট-বড় হলেও সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। তারা একে-অপরকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে কথা বলতেন।”
যে দেশে রাষ্ট্রীয় পদ ও পদক পাওয়ার জন্য অনেকেই সদা উন্মুখ থাকেন, সেই দেশের একজন রাজনীতিকের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক গ্রহণ না করা অসামান্য ঘটনা বটে। অনন্য নজির স্থাপনকারী সেই রাজনীতিক অার কেউ নন, তিনি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি; যিনি নিজেকে কুঁড়েঘরের মোজাফফর বলে পরিচয় দিতেন। সরকার ২০১৫ সালে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও স্বাধীনতা পদক দেওয়ার
ঘোষণা দিলে তিনি সবিনয়ে তা নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর মত হলো, ‘রাজনীতির অর্থ দেশসেবা, মানুষের সেবা। পদ বা পদবির জন্য কখনো রাজনীতি করিনি। পদক দিলে বা নিলেই সম্মানিত হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি বিশ্বাসী নই।’
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার ছয় সদস্যের যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিল, তাঁদের মধ্যে একমাত্র মোজাফফর আহমদই বেঁচেছিলেন। উপদেষ্টা কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, মনোরঞ্জন ধর, খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। শেষোক্ত দুজন ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের বাইরের মানুষ এবং তিনজনই বামপন্থী। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদ ছিলেন ন্যাপের নিজ নিজ অংশের সভাপতি; মণি সিংহ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এবং মনোরঞ্জন ধর ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি। তাজউদ্দীন আহমদ সবাইকে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন।
অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদ থাকতেন বারিধারায় মেয়ে-জামাতার বাড়িতে। তাঁরাই তাঁর দেখাশোনা করতো। বারিধারার এই পরিবেশ তিনি মানিয়ে নিতে পারছেন না, সে কথা অনেকবার বলেছেন। সেখানে নিজেকে মনে হয়েছে ‘সোনার খাঁচায় বন্দী’। তাঁর স্ত্রী আমেনা আহমদ ন্যাপের সহসভাপতি ও সংরক্ষিত আসনে নবম ও দশম সংসদের সাংসদ ছিলেন।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পর অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদই প্রথম জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছিলেন।
বছর কয়েক আগেও তাঁকে দেখা যেত কাকরাইলের কোনো পত্রিকা স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ছেন কিংবা বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। যেন সাধারণ মানুষই ভরসা। অার বিশেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করতে তিনি বেশি আগ্রহী ছিলেন। কারও লেখা ভালো লাগলে টেলিফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁকে ফোন করতেন। রিসিভার তুললেই ওপার থেকে শোনা যেত সেই পরিচিত কণ্ঠ, ‘চিনতে পারছ, আমি কুঁড়েঘরের মোজাফফর।’
অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বারের এলাহাবাদ গ্রামে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার আগে ছিলেন একাধিক কলেজে। চুয়ান্নতে মাত্র ২২ বছর বয়সে সাধারণ নির্বাচনে নিজ জেলা কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন রাজনীতির ময়দানের সবাইকে। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থাপক সভায় মোজাফফর আহমদ বলেছিলেন, ‘আজ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, সেটি আমাদের নেতা মাওলানা ভাসানীর একক কিংবা কোনো একটি দলের দাবি নয়। এটি হলো পূর্ব পাকিস্তানের ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের দাবি। এটি আবেগের কিংবা ভোট লাভের স্লোগান নয়। এটি হলো প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত অভ্যন্তরীণ সব ব্যাপারে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত এ অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা।’
পরবর্তীকালে ‘৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ‘৬৯ সালের ছাত্রদের ১১ দফা ও কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচি’ সে স্বায়ত্তশাসন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছে এবং রণাঙ্গেন উপিস্থত না থাকলেও এর নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই যুদ্ধে অন্যান্য দলের কোনো ভূমিকা ছিল না। দল কেন; সেনা, পুলিশ, ইপিআর, আনসার, ছাত্র-তরুণ, নারী, বাঙালি-অবাঙালিসহ সর্বস্তরের মানুষেরই ভূমিকা ছিল। আর যুদ্ধটাও একাত্তরের ২৬ মার্চ শুরু হয়নি। শুরুরও আগের শুরু ছিল। বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এটাই ইতিহাসের সত্য।
স্বাধীনতা-উত্তর রাজনীতিতে বামপন্থীদের বিচ্যুতি বা দুর্বলতা যত প্রকটই হোক না কেন, স্বাধীনতা-পূর্ব রাজনীতি তথা মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকা খাটো করে দেখার উপায় নেই। ষাটের দশকের মাঝামাঝি বামপন্থীরা মস্কো ও বেইজিং—দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মণি সিংহ, মোজাফফর আহমদ, খোকা রায়, মোহাম্মদ ফরহাদ, মতিয়া চৌধুরী, পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রমুখ ছিলেন মস্কো শিবিরে। আর বেইজিং শিবিরে ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা অাব্দুল হামিদ খান ভাসানী, কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, মোস্তফা জামাল হায়দারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ বিভাজন সত্ত্বেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তবে বেইজিংপন্থীদের যে অংশটি ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি।
ভারতে মস্কোপন্থী বামপন্থীরা সিপিআইয়ের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছিল। তখন ইন্দিরা গান্ধী ও কংগ্রেসের ওপর দারুণ প্রভাব ছিল সিপিআইয়ের। অন্যদিকে বেইজিংপন্থী অংশ সিপিআইএমের সমর্থন পেলেও কংগ্রেসের নীতিনির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। একাত্তরে ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে আলাদা গেরিলা বাহিনী গঠিত হয়েছিল। ছয় হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা দেশের ভেতরে পাঠিয়েছে। বেইজিংপন্থীদের নিয়ে গঠিত কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি দেশের ভেতরে ঘাঁটি স্থাপন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অনেকে ভারতে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। কিন্তু বামপন্থীরা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের উগ্রবাদী অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন। এ কারণে অনেক নেতা–কর্মী যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নিলে ভারত রণকৌশল হিসেবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি সই করে। এর আগেই অবশ্য বিচক্ষণ তাজউদ্দীন মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় রূপ দিতে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এবং বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদলেও বামপন্থীদের যুক্ত করেন।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ছিল, সেটি অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল। এর জন্য আওয়ামী লীগের একদেশদর্শী নীতি বেশি দায়ী। সেই সময়ে প্রধান বিরোধী দল ন্যাপ কিংবা সিপিবির কাছ থেকেও মানুষ ভিন্ন ভূমিকা আশা করেছিল। আগ বাড়িয়ে সব বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতার নীতি না নিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে পারলে হয়তো তারাই সত্যিকার বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু সেটি তারা করতে পারেনি বলেই শূন্যস্থানটি পূরণ করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা জাসদ। রুশ-ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে দলটি রাজনীতি শুরু করেছিল। বাহাত্তরে তারা ‘চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক’ বলে অভিহিত করলেও, জনগণের প্রয়োজনেই অাওয়ামী লীগের সঙ্গেই ১৪ দলীয় জোট গঠন করলো।
পঁচাত্তরের আগের ও পরের রাজনীতিতে একটি বড় ফারাক আছে। পঁচাত্তর–পূর্ববর্তী রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলোর নালিশ ছিল: আওয়ামী লীগ চার মূল নীতি, বিশেষ করে সমাজতন্ত্র কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে আন্তরিক নয়। অতএব প্রকৃত সমাজতন্ত্র ও খাঁটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করতে হলে ক্ষমতার পরিবর্তন জরুরি। আর পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা পাল্লা দিয়ে ডানেই হেঁটেছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ফারাকটাও কমে যাচ্ছে। সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী বহাল রেখে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া যায় না তা রাজনীতির অ আ ক খ পড়া বালকটিও বোঝে। তবে এর দায় বামপন্থীরাও এড়াতে পারেন না। বামেরা শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগ যেকোনো নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কথা ভাবত। এখন ভাবে, ডান দিক থেকে চাপ আসবে কি না। এটি আওয়ামী লীগের জন্য যেমন, তেমনি দেশের জন্যও বিপজ্জনক।
তবে বামপন্থীদের বর্তমানের ভগ্নদশা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা বিচার করা ভুল হবে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার আগে যে সমাজতন্ত্রমুখী কর্মসূচি নিয়েছিল কিংবা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, তাতে বামপন্থীদের প্রভাবও অনস্বীকার্য। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ষাটের দশকে বামপন্থীরা মস্কো-বেইজিং বিরোধে দ্বিখণ্ডিত না হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ভিন্নও হতে পারত।
যদি এবং কিন্তু দিয়ে ইতিহাস হয় না। তাই ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, সেটুকু স্বীকার করতে হবে। তাতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির কৃতিত্ব খর্ব হবে না, বরং ঔদার্য প্রকাশ পাবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনাই ছিল সবাইকে নিয়ে পথচলা। স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করা, কাজ করা। কিন্তু বাম-মধ্য সবাই সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ডানের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। উপেক্ষিত হয়েছে আমজনতার সামগ্রিক মুক্তির প্রশ্ন ও স্বার্থ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সাধারণ মানুষের সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি–প্রকৃতি নিয়েই তিনি বেশি ভাবতেন ও কথা বলতেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মতে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলেও সমাজতন্ত্রের আবেদন শেষ হয়নি। নতুন আঙ্গিকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পৃথিবী বদলাচ্ছে, বাংলাদেশও বদলাবে।’ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ অারও বলেছিলেন, ‘রাজনীতি পেশাও নয়, ব্যবসাও নয়। রাজনীতি হলো একটি অঙ্গীকার, যার মূল লক্ষ্য জনসেবা। রাজনীতির ভিত্তি হবে নিজের দেশকে ভালোবাসা, গরিব মানুষের স্বার্থরক্ষা করা।’
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের এই উপলব্ধি রাজনীতিকরা ধারণ করলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটবেই।
সৈয়দ অামিরুজ্জামান, গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, অারপি নিউজ (Rpnews24.com); সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ও
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন।
সাবেক সভাপতি, অাইন ছাত্র ফেডারেশন।
সম্পাদক, লিটল ম্যাগ ‘স্বাধীনতা’।
সাধারণ সম্পাদক, ‘ মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ অাদায় জাতীয় কমিটি’।
E-mail : rpnewsbd@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D