৮০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’

প্রকাশিত: ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০

৮০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’

Manual4 Ad Code

ঢাকা, ৩১ মে ২০২০: করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার জন্য ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিআরটিএ। করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমিয়ে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি এসেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন, দল ও নাগরিকদের পক্ষ থেকে।

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাড়া বাড়ানোর বদলে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে বাস ভাড়া আগের চেয়ে কমানোর প্রস্তাব করেছে। একই ধরনের বক্তব্য এসেছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারাও বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে টানা দুই মাসের লকডাউন শেষে রোববার থেকে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনও চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ সময় গণপরিবহনে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে পরিবহন কোম্পানিগুলোর ক্ষতি পোষাতে ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।
এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর সোমবার থেকে বাস-মিনিবাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা।
বাস ভাড়া বৃদ্ধির এই প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে ক্যাবের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এমনিতেই যখন দুই মাসের বেশি সময়ের জন্য লকডাউনের কারণে দেশের অধিকাংশ জনগণের আয়ের সংস্থান নেই, তখন বাস ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করে গণপরিবহনের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বাড়তি ভাড়া যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
“প্রতিটি বাসে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় বাস মালিকদের যেন আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য সরকার অন্যান্য শিল্প-বাণিজ্যের মতো গণপরিবহনের জন্যও আর্থিক প্রণোদনা বা ভর্তুকি এবং স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিতে পারে।”

Manual2 Ad Code

রবি নয়, বাস চলবে সোমবার থেকে

বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে জ্বালানি তেলের দাম কমানো সম্ভব মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এতে করে সামাজিক দূরত্বের কৌশল চলাকালেও বাসের বিদ্যমান ভাড়া আরও কমানো যাবে।”
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ক্যাব বলছে, “বিগত কয়েক দশকের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্বে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। তাই বিশ্ব বাজারের সাথে দেশের জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করার আদৌ প্রয়োজন হবে না। বরং পরিবহন ভাড়া কমানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই দুর্যোগকালে বাস ভাড়া বৃদ্ধির বাড়তি চাপ জনগণের ওপর যেন কোনোভাবেই না পড়ে সেজন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
রেল ও নৌ পরিবহন খাতে ভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও লঞ্চ মালিকদের ধন্যবাদ জানায় ক্যাব।
এই দুর্যোগে গণপরিবহন বিশেষ করে বাস-লঞ্চের ভাড়া না বাড়িয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পাশাপাশি পরিবহনে ‘চাঁদাবাজি’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ ছুটিতে থাকা সাধারণ মানুষজন এখন এক ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পতিত, তাই অর্ধেক যাত্রী নিয়েও যাতে গণপরিবহনগুলো বিদ্যমান হারে ভাড়া আদায় করে পরিবহন সেবা চালু রাখতে পারে তার জন্য গণপরিবহন চালুর আগেই জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিতে হবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্ববাজারে বহু আগেই তেলের দাম কমেছে। দেশে দীর্ঘদিন যাবত কম মূল্যে জ্বালানি তেল কিনে চড়া দামে বিক্রি করে বেশ মুনাফা অর্জন করেছে বিপিসি। বর্তমানে দেশের রিজার্ভারগুলোতে উপচে পড়া জ্বালানি তেল মজুদের খবর ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে।”
তেলের দাম কমানোর পাশাপাশি গণপরিবহনে প্রচলিত চাঁদাবাজি রোধ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল।
তিনি বলেন, “রাজধানীতে চলাচলকারী প্রতিটি বাস-মিনিবাসকে দৈনিক গড়ে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কোথাও ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। প্রতিটি লেগুনা দৈনিক গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা দিয়ে চালাতে হয়। ইতোমধ্যেই এসব খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
“এইভাবে প্রতিটি গণপরিবহন দৈনিক গড়ে যে পরিমাণ চাঁদা দেয় তা রোধ করার পাশাপশি সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়েও যাতায়াত সম্ভব।”
৮০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণের উপর ‘বাড়তি চাপ তৈরি করবে’।
শনিবার এক বিবৃতিতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। সরকার বিশেষজ্ঞ মতামত না নিয়েই সব কিছু খুলে দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চাইছে এবং জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। উপরন্তু মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“যা সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সাথে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না।”
ঢাকা মহানগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে গণপরিবহন চালাবে তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন খালেকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে সব কিছু খুলে দেওয়া ও গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জনগণের বিপদ হবে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।”
বাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিরোধিতা করে সিপিবির সাবেক সভাপতি ও পরিবহন শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান বলেন, “এ অবস্থার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই বাসের ভাড়া বাড়ানো ঠিক না। এই সঙ্কটের মধ্যে বাসের ভাড়া আরও কমানো দরকার। পৃথিবীতে সব দেশেই হয়, গণপরিবহনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও ভাড়া কমানো দরকার।”
গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত কতটুকু মানা হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মনজুরুল আহসান খান বলেন, “যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে সরকার ভর্তুকি দেবে প্রয়োজনে, কিন্তু বাস ভাড়া কিছুতেই বাড়ানো যাবে না, আউট অব কোশ্চেন।”
তিনি বলেন, “গণপরিবহনে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বরং যে বাড়তি ভাড়াটা নেওয়া হচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের বিষয়গুলোতে সরকারকে খুব কঠোর হতে হবে। কারণ এসব নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাস ভাড়া বাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না, আগে যে বাড়তি ভাড়াটা নেওয়া হচ্ছিল সেটা হিসাব এবং সমন্বয় করে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বন্ধ করতে হবে।”
ঢাকা শহরে অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চালানো কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় জানান রামপুরার বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান রানাও।
তিনি বলেন, “সাধারণত ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে বাসের জন্য। যাত্রী বেশি হওয়ায় অফিস টাইমে বাসে উঠা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বাস চালু হলে ঢাকার কোনো বাস স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারবে বলে মনে হয় না। তা কারা ম্যানেজ করবে, কীভাবে করবে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।”

Manual7 Ad Code

৮০ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণের উপর ‘বাড়তি চাপ তৈরি করবে’।
এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। উপরন্তু মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। “যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”

Manual4 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code