বাজেটের শুভংকরের ফাঁকি কোথায়? (১ম অংশ)

প্রকাশিত: ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ১২, ২০২০

বাজেটের শুভংকরের ফাঁকি কোথায়? (১ম অংশ)

ড. সুশান্ত দাস, ১২ জুন ২০২০ : কেউ যদি বলে এবারের বাজেটের চমক কি? সবাই বুঝুক না বুঝুক বলবেন, ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট এবং ৮.১% প্রবৃদ্ধির হার। তার অর্থ কি? দেশের অর্থনীতির পন্ডিতরা এর অর্থ জানেন আম জনতা জানেন না। জনগণ পত্রিকার পাতা খুঁজতে থাকেন কোন কোন জিনিষের দাম বাড়লো, কার দাম কমলো। নিজের প্রয়োজনের জিনিষের দাম বাড়লে রাগ হবে, কমলে ভালো লাগবে। গরীব মানুষ ভাববে, চাল, তেল, নুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়বে কিনা। তারপর দেখবে কোন খাতে কত বরাদ্দ? স্বাস্থ্য খাত এবারের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় কারণ ‘করোনা’ ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। শিক্ষাখাতে কত খরচ, কৃষিখাতে কি প্রণোদনা? কর্মসংস্থানের জন্য পরিকল্পনা কি? নতুন চাকরি বাড়বে কিনা। এবার তো সংকট চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, চাকরি হারাবে কিনা মানুষ। ইতিমধ্যে ৩ কোটি কর্মক্ষম মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এই বাজেটে তাঁদের ব্যাপারে কোন সুরাহা আছে কিনা? রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জুট, টেক্সটাইল, চিনি শিল্প ধুঁকছে, সেই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, পেনশন, গ্র্যাচুইটির টাকার সংস্থান বাজেটে আছে কিনা বা এ শিল্প কারখানা আধুনিকায়নের বরাদ্দ আছে কিনা। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে কত মানুষকে এই করোনা দূর্যোগে সময়ে সহায়তা করা যাবে? ৫ কোটি মানুষের রেশনের আওতায় না আনলে মানুষ দূর্ভিক্ষের পদধ্বনি দেখবে। তার সুরাহা বাজেটে আছে কিনা । আমজনতা মোটা দাগে এ বিষয়গুলো খুঁজবে।

তারপর হিসেব করতে বসবে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের টাকা আসবে কোথা থেকে? কার পকেট কাটা হচ্ছে? গরীব মধ্যবিত্তের না, যাদের টাকা আছে, মুনাফা আছে তাঁদের কাছ থেকে টাকার সংস্থান হচ্ছে? নাকি প্রনোদনার নামে যারা বছর ধরে মুনাফা করে তাঁদের মুনাফার ক্ষেত্রটাই তৈরি করা হচ্ছে। দেশের মধ্য থেকে রাজস্ব আদায় করে কত টাকার সংস্থান হচ্ছে, আর ব্যাংকের কাছ থেকে বা সঞ্চয় প্ত্রের থেকে কত টাকা ঋণ আসছে? বিদেশী ঋণ নেওয়া হচ্ছে কিনা? নিলে কত নেওয়া হচ্ছে? বিদেশের অনুদান পাওয়া গেল কিনা গেলে কি শর্তে? কারণ ব্যাংক বা বিদেশী যে কোন ঋণেরই সুদ দিতে হবে। আবার অনুদানের শর্তও অনেক সময় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায়। সেটাও দেখতে হবে।
এখন আসা যাক, আম জনতার বোধের বাইরে যে হিসেব সেই জি ডি পির হিসেবে আর তার প্রবৃদ্ধির হিসেবে। জিডিপি হিসেব করতে হলে চারটি উপাদান লাগবে (১) দেশে বছরে মানুষের ব্যক্তিগত খরচ কত হবে? (যা হিসেবের একটা পদ্ধতি পরিসংখ্যানবিদ আর অর্থনীতিবিদরা বের করেন যার মধ্যে খুচরা বিক্রয় বা retail sales থাকবে)। (২) ব্যবসায়ে বিনিয়োগ ( যার মধ্যে construction, inventory level ইত্যাদি থাকবে) কত হবে? (৩) সরকারের ব্যয় ( যার মধ্যে social security benefit, defense cost, medical care cost ইত্যাদি থাকবে ) (৪) নিট বাণিজ্য ( রফতানি-আমদানি)।
অংকের সমীকরণে লিখলে দাঁড়ায়
GDP = C+I+G+ (X-M) = Private consumption + gross consumption + government (investment +spending) + (Export-Import).
অংকটা খুব কঠিন নয় কিন্তু আমজনতার কাছে তা কঠিন করে রাখা হয়।
এখন জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের হিসেবটা কি?
হিসেবটা সহজ করে বললে পূর্ববর্তি কোয়ার্টারের জিডিপি থেকে বর্তমান কোয়ার্টারের জিডিপি কতটা বৃদ্ধি হবে সেই হিসেবটাই হলো এই প্রবৃদ্ধির হিসেব।
সোজা বাংলায় সাধারণভাবে বললে বলা যায়, আমাদের অংকের হিসেবে গতবারের তুলনায় জিডিপি ৮.১% বাড়াতে হবে। প্রশ্নটা এখানেই এই লক্ষ্যমাত্রা ধরলে এবারকার এই জরুরি পরিস্থিতিতে যে খাতগুলো অবশ্যই বাড়াতে হবে তা বাড়ছে কি না। আমার মনে হয়, দেশের তরুণ অর্থনীতির ছাত্ররা অংকটি করতে পারবে।
(ক্রমশঃ)
পরবর্তি অংশের লেখায় খাত ওয়ারি পরিক্ষা করে দেখার চেষ্টা করা যাবে জনগণের প্রত্যাশা কি আর লোভনীয় অংকের হিসেব দিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী জাতিকে কি দিলেন?
১২ জুন, ২০২০ সাল।
#
ড. সুশান্ত দাস
অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) শা বি প্র বি

পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ