সিলেট ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২০
|| বিশ্বেন্দু নন্দ || কলকাতা (ভারত), ১১ জুলাই ২০২০ : আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এককেন্দ্রিক মুঘল রাজত্বকে ধরে রাখার সমস্যা দেখা দেয়।মুনিস ফারুখি প্রিন্সেস অব মুঘল ইন্ডিয়ায় বলছেন, আওরঙ্গজেবের প্রায় ৫০ বছর ধরে রাজত্ব করাটাই হয়ত মুঘল সাম্রাজ্যের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। ১৬০০ থেকে ১৭০৭ অবদি রাজত্ব করেছেন তিনজন সম্রাট, জাহাঙ্গির, শাহজাহান এবং আওরঙ্গজেব, এই তিনজনের মধ্যে আওরঙ্গজেব রাজত্ব করেছেন ৫০বছর, অর্ধেক সময়। এটা সমস্যার হয়ে ওঠে। কেননা দীর্ঘদিন বাঁচার ফলে তিনি প্রচুর উত্তরাধিকার রেখে যান। প্রত্যেক উত্তরাধিকারীকে তৈরি হয়ে ওঠার মত রসদ দেওয়ার ক্ষমতা সে সময়ের মুঘল রাষ্ট্রের ছিল না। ওমর বলছেন এটাই মুঘল সাম্রাজ্যের সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু আকবরও প্রায় দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন। কিন্তু তার সময়ে হলনা কেন। এত সব কথা আলোচনার জন্যে আরেকটু পিছনে আমাদের যেতে হবে এবং বেশ কিছু অনালোচ্য, প্রায় অজানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
মুঘল শাহজাদারা লায়েক হয়ে ওঠার আগে তাদের নানান কিছুতে শিক্ষিত করে তোলা হত মাত্র কিছু ন্যুনতম হাতখরচ দিয়ে। তখন তারা সম্রাটের বা রাষ্ট্র থেকে ন্যুনতম ভাতা পেত, আজকে বালকেরা যাকে পকেট মানি বলে থাকে। তারা বয়স্ক না হয়ে ওঠা অবদি তাদের সমস্ত খরচ ছিল রাষ্ট্রের। সে খরচ রাষ্ট্রের খাজাঞ্চিখানা থেকে মেটানো হত। কিন্তু তারা বালকাবস্থা পেরিয়ে যাওয়ার পর, অর্থাৎ তাদের বিধিবদ্ধভাবে নানান শিক্ষা গ্রহণ শেষ হলে, যখন বোঝা যেত তারা নিজেদের আশেপাশের ব্যবস্থাপনা নিজেরাই করে নিতে পারবে, তখন তাদের একজন রাজপু্রুষেরমত গণ্য করা হত। রাজ্য পরিচালনার ব্যবস্থাপনা করার জন্যে রাষ্ট্র থেকে বিশাল অঙ্কের সম্পদ দেওয়া হত। এবার থেকে তাদের নিজেদের বাড়িঘর দপ্তর ব্যবস্থাপনা, নিজেদের আশেপাশের মানুষজন, সেনা ইত্যাদি ব্যবস্থা আলাদা করে দেওয়া হত। সেই খরচ তাকে দেয় অর্থ থেকে মেটাতে হত।
এটা কিছু দিন চলার পরে, অর্থাৎ তাদের রাজকীয় ব্যবস্থাপনা করে দিয়ে তাদের বিভিন্ন সুবা ব্যবস্থাপনা করার জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া হত – সুজা যেমন এসেছিলেন বাংলা সুবায়, আওরঙ্গজেব গিয়েছিলেন দক্ষিণে। মুনিস ফারুখি বলছেন, এই কাজটা মুঘল রাষ্ট্র করত অনেকগুলি উদ্দেশ্যপূরণের জন্যে। প্রথমত, তৈমুর বংশে জৈষ্ঠাধিকার ছিল না, অর্থাৎ বড় ছেলে সিংহাসনে আরোহন করবে এমন কোনও নিয়ম ছিল না কোনও দিন। ভাইদের সিংহাসন লড়ে নিতে হত। বাবরের পরে হুমায়ুনের সময় ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই, তুতোভাই, দাইমার পুত্র অর্থাৎ বৃহৎ পারিবারিক উত্তরাধিকারীরা সিংহাসনের জন্যে লড়াই করার উপযোগী ছিল। হুমায়ুনের সময় আরও একটা সমস্যা ছিল, বিভিন্ন সুবায় থাকা ভায়েরা প্রায় স্বাধীন ছিল। যে জন্যে হুমায়ুন তার সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেন নি, অর্থাৎ চেয়েও ভাইদের সাহায্য পান নি। শের শাহের চ্যালেঞ্জের উত্তরে হুমায়ুনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভায়েরা ভাবছিলেন হুমায়ুন বিপদে পড়লে সিংহাসনের দ্বার তাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ফারুখি বলছেন বুদ্ধিমান আকবর বাবার বিপদে পড়ার সমস্যার কারণ বুঝতে পেরে তার উত্তরাধিকারীদের সুবিধের জন্যে দুটি নিয়ম তৈরি করে যান – এক তুতো ভায়েরা এবার থেকে আর সিংহাসনের লড়াইতে অংশ নিতে পারবেনা। শুধু তুতো ভাইই নয়, বাবরের আগে মুঘল সাম্রাজ্যের শুরুটা যেহেতু ছিল আদিবাসিত্ব, ফলে সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক হলেও গণতন্ত্রের বড় ভূমিকা বহুকাল ছিল, বাবর, হুমায়ুন এবং গুলবদন বেগমের স্মৃতিকথা সেই সাক্ষ্য দেয়। একদা রক্ষিতা, অপ্রধান রাজ্ঞী ইত্যাদিদের উত্তরাধিকারী এবং অন্যান্য ঘনিষ্ঠ অভিজাতদের যে লড়ার অধিকার তৈমুরী বংশে ছিল, সেই অধিকার আকবর কেড়ে নেন। তিনি ঠিক করে দেন কারা আগামী দিনে সাম্রাজ্যের সিংহাসনের জন্যে লড়তে পারবেন – সম্রাটের সহি আইনি পুত্ররাই লড়ার অধিকারী হলেন। ঠিক হল নীল রক্তের অন্যান্য পুত্র সহিপুত্রদের হয়ে লড়তে পারবে, কিন্তু নিজেরা সিংহাসন লড়ায়ের উদ্দেশ্যে জোট তৈরি করে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। সেলিম বা জাহাঙ্গিরের সময় থেকে সিংহাসনের লড়াইতে প্রতিযোগীর সংখ্যা অনেক ছোট হয়ে গেল। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম করলেন, সুবাতে যারা কাজে যাবেন তারা সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হয়েই যাবেন। তাদের স্বশাসনের অধিকার থাকবে না। অর্থাৎ তারা আলাদা হতে পারবেন না। ফলে রাষ্ট্র বেঁটে যাওয়ার সুযোগ তো থাকলই না, বরং কেন্দ্র আরও জোরদার হল, প্রান্ত আরও জোরদার হল।
-চলবে-
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D