দুই শিশুর অধিকার ফেরাতে মধ্যরাতে বসল হাইকোর্ট!

প্রকাশিত: ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২০

দুই শিশুর অধিকার ফেরাতে মধ্যরাতে বসল হাইকোর্ট!

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক || ঢাকা, ০৪ অক্টোবর ২০২০ : একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনা হচ্ছিল দুটি শিশু নিয়ে। শিশু দুটি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত ব্যারিস্টার কে এস নবীর নাতি। যাদেরকে তাদের চাচা বাসায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। কিছুদিন আগে এই দুই শিশু বাবা হারিয়েছেন। টকশোটি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু তাহের মোহম্মদ সাইফুর রহমানের নজরে আসায় তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিক আদেশ দেন।

আদেশে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় নিরাপদে রেখে আসতে ধানমন্ডি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া রবিবার সকাল ১০টায় আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়েছে ধানমন্ডি থানার ওসিকে।

জানা গেছে, রাজধানী ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবী। উত্তারাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও গত কয়েকদিন ধরে ঢুকতে পারছে না কেএস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই পুত্র।

গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলেকে গত কয়েকদিন আগে বাসা থেকে বের করে দেন ওই শিশুদের আপন চাচা কাজী রেহান নবী।আগেই শিশু দুটির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থেকে যায়। এরপর মায়ের কাছ থেকে নিজ পিত্রালয়ে ফেরার চেষ্টা করে দুই শিশু। কিন্তু তাদেরকে আর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কয়েকবারের চেষ্টা করেও শিশু দুটি ওই বাসায় প্রবেশ করতে পারেনি। বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলেও পুলিশের কথা আমলে নেননি শিশুদের চাচা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।

শনিবার রাত ১২টায় বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির ‘একাত্তর জার্নাল’ এ ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনে শিশু দুটির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি চলাকালে বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের।

Manual2 Ad Code

প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে মাঝরাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে এই আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের আদালত।

Manual3 Ad Code

আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমি বাচ্চা দুটির অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে একাত্তর জার্নালের লাইভে যুক্ত ছিলাম। ওই লাইভ অনুষ্ঠান চলাকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) হয়ে আদেশ দেন।’

শিশু দুটির ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ বলেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ওদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি খুব বেশি বিষন্ন হয়ে পড়ে এবং ওদের মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে আবার গতকাল বাড়িতে ফেরে। কিন্তু তারা বাসার গেট খোলেনি। আমরা পরিবার থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। কিন্তু তিনি অসুস্থতার অজুহাতে শিশুদের পরে বাড়িতে আসতে বলেন।আমরা ধানমন্ডি থানায় বিষয়টি জানাই। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে ফোন করে অনুরোধ করে। ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম হোসেন মিয়া আমাদের পরেরদিন যেতে বলেন। কিন্তু পরের দিন বাসায় গিয়ে শিশুরা দেখলো আগের দিন তারা বাড়ির কম্পাউন্ডে ঢুকতে পারলেও পরের দিন বাইরের দরজাটি বন্ধ ভেতরে কুকুর ছেড়ে দেয়া থাকে। এরপর আমরা আবার পুলিশকে জানাই। কিন্তু পুলিশ বললো- আমরা কিছু করতে পারবো না আপনারা কোর্টের আশ্রয় নেন।’

তিনি আরও জানান, বাড়িটি এখনো কেএস নবীর নামে। সেদিক থেকে দেখলে এই শিশু দুটিও ওই বাড়ির উত্তরাধিকার। আর শিশুদের বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যাংক-ব্যালেন্স দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই বড় ভাই রেহান নবী।

Manual7 Ad Code

মধ্যরাতে আদালতের এমন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘এমন ঘটনা যত বেশি হবে তত মানুষের আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা বাড়বে৷ কারণ সবার মতো আমাদেরও প্রত্যাশা যেখানে অন্যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটবে সেখানেই আদালত এগিয়ে আসবে। আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code