তিস্তার দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার ব্যাপী মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২০

তিস্তার দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার ব্যাপী মানববন্ধন

Manual8 Ad Code

রংপুর প্রতিনিধি, ০১ নভেম্বর ২০২০ : তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে, মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, এবং তিস্তা তীরবর্তী কর্মহীনদের জন্য প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প কলকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের দাবীতে ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার হাজার হাজার বাসিন্দা।

মহাপরিকল্পনার অধীনে বহুমাত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্যাটেলাইট শহর স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণে নতুন আশায় বুক বেঁধেছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

সরকার ও সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ২৩০ কিলোমিটারের এই মানববন্ধন শুধু দেশেই নয় উপমহাদেশের ইতিহাসেও বিরল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তিস্তা ভাঙনে বিলীন হওয়া জমি, বসতবাড়ি পুনঃউদ্ধারের দাবি জানায়। তিস্তার ভাঙন, বন্যায় ঢলের আঘাত আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকারের কথা স্মরণ করে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাদের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা ঘুচবে। উদ্ধার করা সম্ভব হবে স্থানীয়দের বসতবাড়িসহ নদীর জমি। আর শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলের পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট হওয়া সংকটও দুর হবে বলে মনে করেন তারা। পাশাপাশি এই প্রকল্প ওই অঞ্চলে নদী ভাঙনরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন তারা। বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট মোকাবিলা তিস্তা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে পুনঃখননের দাবি করে তারা বলেন, নদীর গভীরতা বাড়লে শুষ্ক মৌসুমেও পানির অভাব হবে না। এ ছাড়া বন্যায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতিও কম হবে।
তিস্তানদীকে উপজীব্য করে বেঁচে থাকা মানুষ, নদী নিয়ে আন্দোলন করা বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করাই এই কর্মসূচি অয়োজনের উদ্দেশ্য বলে জানান আয়োজক তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগঠনের রংপুর অঞ্চলের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি খরা থেকে বাঁচতে ও শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট মোকাবিলায় আমরা তিস্তা চুক্তি ও তার বাস্তবায়নও চাই।
তিস্তা অববাহিকার ৫ জেলার জীবনধারা বদলে দিতে কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ করে সেচ প্রদান ছাড়াও বহুমাত্রিক উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্যাটেলাইট শহর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক জোন, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নৌপথ-বন্দর নির্মাণসহ তিস্তা সুরক্ষায় গ্রহণ করা হয়েছে এই মহাপ্রকল্প।

তিস্তা নদীর সুরক্ষা, বন্যা-ভাঙনরোধ, মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুই তীরে দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

রোববার বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

Manual3 Ad Code

তিস্তার দুই তীরে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এক যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংগঠনটি জানায়, তিস্তা নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে প্রবাহিত হয়েছে প্রায় ১১৫ কিলোটিার। দুপুরে দুই পাড়ে ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একযোগে দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিস্তা নদীর প্রবেশমুখ বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই জিরো পয়েন্ট থেকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ঘাট (এখানে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রে মিলেছে) পর্যন্ত এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী। এখানে বক্তৃতা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য তুহিন ওয়াদুদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুজ্জামান খান প্রমুখ।

Manual8 Ad Code

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। রোববার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে তিস্তা নদীর তীরে
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। রোববার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে তিস্তা নদীর তীরে
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর ডাউয়াবাড়ি পয়েন্টে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান সভাপতিত্ব করেন। এখানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছাদেকুল ইসলামসহ অন্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম কানু, আমিন উদ্দিন, মোজাফফর হোসেন, মোহাম্মদ আলী, মাহমুদ আলম, মাহাবুব আলম, আমিনুর রহমান, আবদুন নুর দুলাল, বখতিয়ার হোসেনসহ অন্যরা বক্তৃতা করেন।

কাউনিয়া পয়েন্টে সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তাকে রক্ষা করা গেলে শুধু জলবায়ুবিষয়ক নয়, এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তা নদী ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার এবং দেশীয় পরিচর্যার অভাবে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে। নদীটির বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা করা সম্ভব হলে নদীটিও বাঁচবে, বাঁচবে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ফলে এ নদী রক্ষায় অর্থ ব্যয় করা দেশের সবচেয়ে লাভজনক।

নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘তিস্তা নদী রক্ষার কোনো বিকল্প আমাদের নেই। ভারত থেকে আমাদের পানি পেতে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি হতেই হবে।’

বক্তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তাঁরা। সমাবেশে ছয় দফা ঘোষণা উপস্থাপন করা হয়।

দফাগুলো হলো—

১. তিস্তা নদীতে সারা বছর পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীটি সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন করতে হবে। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি করতে হবে।

২. তিস্তার ভাঙন আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনায় নদী ও নদীতীরবর্তী মানুষের স্বার্থ ঠিক রেখে তা দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

Manual2 Ad Code

৪. তিস্তা নদীর শাখা, প্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগের সম্পর্ক ফেরাতে হবে। বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত জলাধার নির্মাণ করতে হবে।

৫. চরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code