ধর্ম যখন সন্ত্রাসীর হাতিয়ার-৩: ধর্ম-সমাজ ও শ্রেনীদর্শন (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২১

ধর্ম যখন সন্ত্রাসীর হাতিয়ার-৩: ধর্ম-সমাজ ও শ্রেনীদর্শন (দ্বিতীয় পর্ব)

Manual4 Ad Code

|| হাফিজ সরকার ||

০৯ এপ্রিল ২০২১ : দ্বিতীয় পর্ব
মার্কসবাদের আলোকঃ
তাহলে ধর্মবিষয়ে বস্তুবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গী কি হওয়া উচিত ? আমরা কি সমস্ত ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেবার পক্ষে? ১৮৭০ দশকে বিসমার্কের পুলিশী দমন মারফৎ জার্মান ক্যাথলিক পার্টি, মধ্যপন্থী পার্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডিরখ্ এঙ্গেলস্ বলেছিলেন, “এর ফলে বিসমার্ক সত্যিকারের সাংস্কৃতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, শুধু জঙ্গী যাজকতন্ত্রকেই জোরদার করেন – রাজনৈতিক ভেদের বদলে প্রধান করে তোলেন ধর্ম ভেদটা, শ্রেণীগত ও বৈপ্লবিক সংগ্রামের জরুরী কর্তব্য থেকে শ্রমিকশ্রেণী ও গণতন্ত্রীদের মনোযোগ বিচ্যুত করেন। অতি ভালবাসা ও বুর্জুয়াসুলভ মিথ্যা যাজক বিরোধীতায়”। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, একজন মার্কসবাদীর নিজের ক্ষেত্রে, মার্কসবাদের ক্ষেত্রে অথবা শ্রমিক পার্টির ক্ষেত্রে ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। মোদ্দা কথা, প্রলেতারীয় শ্রেণী সংগ্রামের মূল দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের অন্যান্য গৌণ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

Manual7 Ad Code

প্রাথমিক কথাঃ
এর অর্থ প্রাথমিকভাবে একজন ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসবেন, হয়ত তার ধর্মবিশ্বাস সহই যে ধর্মবিশ্বাস পুরান সমাজের আরও অনেক যক্তিুহীন সংস্কারের মতই তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু পার্টির সংস্পর্শে এসে, শ্রেণীসংগ্রামের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে এবং শোষণ মক্তিুর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে যত তিনি পরিণত সমাজতান্ত্রিক হয়ে উঠবেন ততই বুঝতে পারবেন, ধর্মবিশ্বাসের এই শৃঙ্খল ছিড়ে না ফেললে মানুষের প্রকৃত মুক্তি নেই।
ফলত ঈশ্বর বিশ্বাস অবলুপ্ত হওয়া তার ক্ষেত্রে শৌখিন পেতি বুর্জোয়া নাস্তিকতার চর্চা না হয়ে, হয়ে উঠবে জীবনের সাথে যুক্ত সুদৃঢ় প্রত্যয় বা শ্রেণী চেতনার আলোকে আলোকিত।

কি করা উচিতঃ

Manual4 Ad Code

যেমন, অনেক সময় প্রশ্ন আসে, একজন পুরোহিত, যাজক বা মৌলবী মার্কসবাদী সংগঠনের সভ্য হতে পারেন কি না‍? এক্ষেত্রে খুব সরল ভাবে হ্যাঁ অথবা না বলা যায় না। বিষয়টা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বলে ছেড়ে দেওয়াও যায় না। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যদি একান্তভাবে রাজনৈতিক কাজের জন্য সংগঠনে আসেন, আন্তরিকতার সাথে সংগঠনের কর্তব্য ও কর্মসূচী মেনে চলেন তাহলে তাকে মার্কসবাদী সংগঠনের সভ্যপদে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, মার্কসবাদী সংগঠনের কর্মসূচির সুর ও মুল কথার সঙ্গে উক্ত পুরোহিত, যাজক অথবা মৌলবীর ধর্মবিশ্বাসের
বৈপরীত্যটা এই পরিস্থিতিতে শুধু তার ব্যাপারও তার ব্যক্তিগত স্ববিরোধীতার ব্যাপার হয়ে থাকবে। আর সংগঠনের কর্মসূচির সঙ্গে তার সভ্যদের স্ববিরোধীতা লুপ্ত হয়েছে কিনা, তার পরীক্ষা নেওয়া রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু যদি উক্ত ব্যক্তি সংগঠনে এসে তার প্রধান ও একমাত্র কর্তব্য হিসাবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সক্রিয় প্রচার করতে থাকেন তাহলে, তাকে অবশ্যই সংগঠন থেকে বহিস্কার করা উচিত। এর অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর বিশ্বাস আছে এমন মানুষকে মার্কসবাদী সংগঠনে শুধু অনুমোদনই নয়, টেনে আনতে হবে অবশ্যই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন রকম লাঞ্ছনা না করেই। কিন্তু তাদের সংগঠনে আনতে হবে মার্কসবাদী কর্মসূচির প্রেরণায় তাদের গড়ে তোলার জন্য, সে কর্মসূচির বিরুদ্ধে তাদের সক্রিয় সংগ্রামের জন্য নয়।

Manual4 Ad Code

(চলবে)

সংগ্রহ ও সম্পাদনাঃ
হাফিজ সরকার

Manual5 Ad Code

তথ্যসূত্রঃ
অমর ভট্টাচার্য

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code