সিলেট ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০২১
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস আজ। আমাদের প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য কৃষি মৎস ও যোগাযোগ তথা জনগণের জীবন জীবিকার উপর দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাব্য সর্বনাশা অভিঘাত সৃষ্টির আশঙ্কায় আজ থেকে ৪৫ বছর আগে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ও ন্যাপসহ তার বলিষ্ঠ সহযোদ্ধা বাম প্রগতিশীল কমিউনিস্টদের সক্রিয়তায় লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে দুনিয়া কাঁপানো ঐতিহাসিক এই লংমার্চটি হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন দল ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের রুটিনমাফিক কোন প্রতিক্রিয়া বা বিবৃতি লক্ষ করা না গেলেও ২০২৬ সালে ফারাক্কা চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই চুক্তির পর্যালোচনা করে দ্বিপাক্ষিক সম্মত ব্যবস্থায় উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি সময়োপযোগী এক দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে ফারাক্কার লংমার্চ জনগণকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে উল্লেখ করে ন্যাপও এক দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের ওর্য়াকার্স পার্টি ১৬ মে’র ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবসে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে, “মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা মার্চের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের আমলে ফারাক্কা নিয়ে চুক্তি সম্পাদনে প্রচেষ্টা ছিল, তার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতের যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ঐ চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে গঙ্গানদী এবং এর পানিতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বিষয়টি প্রথম স্বীকৃত হয়। ওই চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অবদান এদেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ করবে। চুক্তি হিসেবে আদর্শ স্থানীয় না হলেও, বিশেষ করে ফারাক্কায় পানি প্রাপ্তির ভিত্তিতে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু ঐ চুক্তির পরের বছর থেকেই ভারত বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী পানি দেয় নাই। এছাড়া গঙ্গায় বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তির বিষয়কে গঙ্গায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করে নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করে চুক্তিকে অকার্যকর করার প্রয়াসে লিপ্ত হয়। ইতিমধ্যে ফারাক্কায় পানি প্রাপ্তি প্রতিবছর চুক্তির পরিমাণের চেয়ে নিচে থাকার কারণ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় সরকারই প্রকৃতির ওপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছে। ইতিমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কার ভাটিতে থাকা এলাকায় ভাঙন ও বিহারে পানি প্রাপ্তি কমে যাওয়ায় পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন মহল ও বিহারের মুখমন্ত্রী নিতীশ কুমার ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়ারও দাবি তুলেছেন। কিন্তু ভারতের উত্তর প্রদেশে উজানে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় গঙ্গার পানির সামগ্রিক প্রাপ্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আগামী ২০২৬ সালে ফারাক্কা চুক্তির ত্রিশ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায়, সেখানে নতুন করে গঙ্গার পানির প্রাপ্যতা নিয়ে আবার চুক্তিহীন অবস্থায় উপনীত হলে সেটি জাতির জন্য বিপর্যয়কর হবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সময় থাকতে এখনই ফারাক্কা চুক্তি পর্যালোচনা করে একটি সম্মত অবস্থায় উপনীত হওয়া জরুরি মনে করছে। গঙ্গাকে যেন আবার তিস্তার ভাগ্য বহন না করতে হয় তা নিশ্চিত করাও জরুরি।”
১৯৭৬ সালেরর ১৬ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দান থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লাখো জনতার যে ঐতিহাসিক লং মার্চ অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য মজলুম জননেতা মওলনা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নদীমাতৃক এই দেশে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নদীর কুলকুল ধ্বনী, মাঝি-মল্লা,ভাটিয়ালী গান আর যতদিন বাম প্রগতিশীল কমিউনিস্ট শক্তি সহ বাংলাদেশ থাকবে,, ততদিন উচ্চারিত হবে কিংবদন্তি এই মহান নেতার নাম। নদী রক্ষায়, প্রাণ-প্রকৃতি, কৃষি ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এই দিবসটি নিশ্চয়ই পালিত হবে কোটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার সংগ্রামমুখর বিপ্লবের উচ্চাঙ্গ সংগীতে। বিপ্লবী অভিবাদন মাওলানা ভাসানী।
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে। ১৬ মে সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে শুরু হয় জনতার পদযাত্রা। ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে। দুপুর ২টায় মানুষের স্রোত গোদাগাড়ীর প্রেমতলা গ্রামে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাত্রি যাপনের জন্য সেদিনের জন্য শেষ হয়। মাঠে রাত যাপন করার পরদিন সকাল আটটায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে।
অভূতপূর্ব এক ইতিহাস! হাজার হাজার মানুষ নিজেরাই নৌকা দিয়ে সেতু তৈরি করে মহানন্দা নদী পার হয়ে ভারতীয় সীমান্তের অদূরে কানসাটে পৌঁছে। কানসাট হাইস্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর অগনিত জনতার সমাবেশ থেকে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারতের উদ্দেশ্যে তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণে বলেন, ‘ তাদের জানা উচিত বাংলার মানুষ এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। কারো হুমকিকে পরোয়া করে না। আজ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কানসাটে যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।’
ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলছে। পদ্মা নদী পানির অভাবে শুকিয়ে ধু ধু বালু চর।একই কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দক্ষিণ অঞ্চলের অন্তত ৩০টি নদী বিলুপ্তির পথে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। নিচে নেমে গেছে রাজশাহী নগরীতে পানির স্তর ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত ।
শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য নৌপরিবহন,শিল্প, বনজসম্পদ ও পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফারাক্কা বাঁধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় বাংলাদেশের কৃষি। পানির স্তর বহু নিচে নেমে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের জি-কে সেচ প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটির আর্দ্রতা হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, মিঠা পানির অপ্রাপ্যতা কৃষিকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়. ১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত শুধু কৃষিক্ষেত্রেই বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ ক্ষতি হয় বছরে ৫০০ কোটি টাকার ওপর। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে সেখানকার প্রধান অর্থকরী গাছ সুন্দরী ধ্বসের মুখে।
গঙ্গার পানির ওপর পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় দুই শতেরও বেশি মাছের প্রজাতি এবং ১৮ প্রজাতির চিংড়ি নির্ভর করে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে মাছের সরবরাহ কমে যায় এবং হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়ে। আজ থেকে এক চল্লিশ বছর আগে গঙ্গার ওপর ফারাক্কা বাঁধ চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পানি প্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে নিয়ে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা। সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না হলেও ফারাক্কার কারণে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে তার প্রভাবে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তর প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয় কবলিত মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। একই সঙ্গে তারা ক্ষতিপূরণ, ভূমি ও পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা বাঁধ বড় ধরনের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পশ্চিবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে প্রায় প্রতিবছর বন্যায় লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমতে থাকার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবে গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্ত থেকে জানা যায়, প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। তৃতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার চেয়ে বেশি পানি থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারত উভয় দেশ তিন দফা ১০ দিনের হিসাবে ক্রমানুসারে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে। ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান করছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীর পদ্মার সেই অপরূপা যৌবন ও সৌন্দর্য আর ন্ইে। এ ছাড়া জেলার বাঘা, চারঘাট ও গোদাগাড়ীতে পদ্মার শাখা নদীতে একই চিত্র বিদ্যমান।
ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে প্রতিবছর বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে স্থায়ী সমাধান চেয়ে আসছেন। একই দাবী বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদেরও। কেননা এই বাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমের বেশ কিছু জেলা বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পতিত হয়। এ ছাড়া গ্রীষ্ম মৌসুমে ভারত পানি আটকে রাখায় বাংলাদেশ প্রয়োজনের সময় পানি পাচ্ছে না, যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষি, বন, মৎস্য চাষ , নৌপরিবহনে; সর্বোপরি আবহাওয়ার ওপর , যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের বিপর্যয় ডেকে আনছে।
মওলানা ভাসানী একবার পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। দেশে ফেরার সময় করাচির মেয়র মহান নেতাকে এক গণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। তাকে এক নজর দেখার জন্য লাখো মানুষের ভিড় হয় ওই সংবর্ধনা সভায়। মওলানা ভাসানী যখন লুঙ্গি, পাঞ্জাবী ও বেতের টুপি পড়ে মঞ্চে উঠলেন তখন জনতা বললো ইয়ে মিসকিন হ্যায়। পবিত্র কোরআনের সুরা পাঠের মাধ্যমে তিনি যখন ভাষণ শুরু করলেন , তখন সেই জনতাই বললো- ইয়ে মওলানা হ্যায়। তিনি যখন ইসলামের আদর্শের আলোকে প্রাঞ্জল ভাষায় সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বক্তব্য রাখলেন তখন জনতা বললো , ইয়ে কমুনিষ্ট হ্যায়। তিনি যখন সারা বিশ্বের পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন শোষণের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন তখন জনতা উচ্চ স্বরে বলতে লাগলো- ইয়ে স্টেটম্যান হ্যায়। মওলানা ভাসানী সত্য সত্যই একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন।তিনি জানতেন ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।বিপন্ন হবে কৃষি , মৎস্য , জীববৈচিত্র ও পরিবেশ।
মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারত নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন তার দূরদৃষ্টি দিয়ে আজ থেকে বহু বছর আগে। আর সে কারণেই ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহতা সর্ম্পকে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে ১৯৭৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ ।
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা। বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তে এসে পদ্মা নাম ধারণ করে দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারত গঙ্গার পানি উত্তর প্রদেশ এবং বিহার প্রদেশে সেচ কাজের জন্য ক্রমবর্ধমান হারে প্রত্যাহার করায় পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীর পানি প্রবাহ কমে আসে। সে জন্য ভারত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা বন্দরের নাব্য বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সীমানার ১০ কিলোমিটার উজানে মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা নামক স্থানে পদ্মার ওপর দেশটি বাঁধ নির্মাণ করে। এই বাঁধের প্রথম পরিকল্পনা করা হয় ১৯৫১ সালে। সে বছর অক্টোবর মাসে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হলে পাকিস্তান সরকার পত্রপত্রিকার রিপোর্টকেই ভিত্তি করে এই বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের নিকট কঠোর ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পরবর্তী ১০ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে দেনদরবারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হয়। যদিও ১৯৬১ সালের পর জানা যায় যে, ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে। ১৯৭৪ সালে ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করে। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে বাঁধটি ৪১ দিনের জন্য চালু হলেও পরবর্তীতে আর কখনোই বাঁধটি বন্ধ হয়নি। ফলে শুরু হয় বাংলাদেশের দুর্দশা। পানির অভাবে ধীরে ধীরে প্রমত্তা পদ্মা হয়ে ওঠে ধু-ধু বালুচর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি মানুষ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ক্রমান্বয়ে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বাঁধ চালুর আগে বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির প্রবাহ থাকত প্রায় ৭৪ হাজার কিউসেক। বাঁধের পর পদ্মার গড়ে বছরে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ হতো। জাতিসংঘের সাবেক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এসআই খানের মতে, ফারাক্কা বাঁধের আগে গঙ্গা হয়ে পদ্মায় গড়ে বছরে যে ৫২৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হতো, ফারাক্কা বাঁধ ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে এখন বাংলাদেশে আসে মাত্র ২০৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি। বলা যেতে পারে প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি পানি ফারাক্কার মাধ্যমে ভারত সরিয়ে নিচ্ছে। এর কারণে বছর জুড়ে পদ্মা নদী দিয়ে পলি আসে না। আবার বর্ষাকালে যখন পানি একেবারে ছেড়ে দেয় তখন অনেক বেশি পলি পড়ে, সেই পলি সমুদ্র পর্যন্ত যেতে পারে না। এভাবেই পদ্মা ধীরে ধীরে ধু ধু বালুচর এবং বিরানভূমি হয়ে যাচ্ছে, যা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে।
পরিশেষে যে কথা বলে শেষ করছি, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায়, সেখানে নতুন করে গঙ্গার পানির প্রাপ্যতা নিয়ে আবার চুক্তিহীন অবস্থায় উপনীত হলে সেটি জাতির জন্য বিপর্যয়কর হবে। আর তাই আগামী ২০২৬ সালে ফারাক্কা চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই চুক্তির পর্যালোচনা করে দ্বিপাক্ষিক সম্মত ব্যবস্থায় উপনীত হওয়া জরুরি।গঙ্গাকে যেন আবার তিস্তার ভাগ্য বহন না করতে হয় তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
#
সৈয়দ আমিরুজ্জামান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, আরপি নিউজ;
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক
ও
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
E-mail : rpnewsbd@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D