রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তার উদ্বেগজনক: জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০২১

রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তার উদ্বেগজনক: জাতিসংঘ

বিশেষ প্রতিনিধি | নিউইয়র্ক সিটি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ১৯ মে ২০২১ : প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি বলেছে, বিষয়টির দিকে তারা নজর রাখছে। এটি স্পষ্টতই উদ্বেগের বিষয়।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিককে হয়রানি ও গ্রেপ্তারসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করলে মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবর আমাদের নজরে এসেছে। আমরা নজর রাখছি। এটি স্পষ্টতই উদ্বেগজনক বিষয়।’
কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে ডুজারিক বলেন, ‘বিষয়টিতে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। সাংবাদিকদের কোনোভাবেই হয়রানি বা শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেটা বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর যেকোনো জায়গাই হোক না কেন।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির এ সময়ে বিশ্বে সাংবাদিকেরা যে ভূমিকা রাখছেন, তা আমরা সবাই পর্যবেক্ষণ করেছি। তাঁরা যেখানে, যে অবস্থায় কাজ করুক না কেন, তাঁদের কাজের ক্ষেত্র হতে হবে বাধাহীন।’

রোজিনা ইসলামকে হেনস্থায় জড়িতদের শাস্তি চাই: ওয়ার্কার্স পার্টি

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দপ্তরে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা, পরে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ মামলা দায়েরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। আজ এক ক্ষুব্ধ বার্তায় তাঁরা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক সচিবালয়ে হামলার শিকার হলেন, যা অত্যন্ত গর্হিত এবং ন্যক্কারজনক। তারাঁ বলেন, রোজিনা ইসলাম তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে ছিলেন। তার প্রতিবেদনে করোনাকালীন সময়ে জনগনের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় মন্ত্রনালয়ের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনার চেহারা জনগনের সামনে আসে। তিনি প্রতিবেদনে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছিলেন; যাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টাতার বিষয় সামনে আসে। তাকে হেনস্থা করার ঘটনা প্রমান করে তিনি চরম আক্রোশের শিকার।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ, রোজিনা ইসলামকে হয়রানী করায় জড়িত দায়ী ব্যাক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানান।
তাঁরা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কল্পিত ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্টাফদের অসদাচরণ, আটকে রেখে হয়রানি ও তথ্য চুরির মতো হাস্যকর অভিযোগ এনে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “এটা গণস্বার্থ রক্ষার জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার পরিপন্থী। যা গণমুখী সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের জন্যও হুমকিস্বরূপ।”
সাংবাদিক দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন ফেসবুক স্টেটাসে লিখেছেন, “সত্য প্রকাশে কন্ঠবোধ (গলা চেপে ধরা) এটা না গনমাধ্যম, না রাষ্ট্র কারো জন্যই সুখকর নয়। আমরা একদিকে বলি স্বাধীন গনমাধ্যম, আবার অন্য দিকে সত্য প্রকাশ করায় সাংবাদিকের কন্ঠ চেপে ধরতে। এটা শুধু গনমাধ্যকর্মীদের নয়, একটি গনতান্ত্রিক দেশের জন্যও লজ্জা। কতিপয় দুর্নীতিবাজ আমলাদের এমন নির্লজ্জ কর্মকান্ডে বহির্বিশ্বে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। তাই জেবুন্নেছাদের এখুনি থামান। মুক্তি দিন রোজিনা আাপাকে।”