সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২১
নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৮ নভেম্বর ২০২১ : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের আমানত এক লাখ কোটি টাকার মাইলফলকে পৌঁছে গেছে। সাধারণ মানুষের জমানো টাকা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রাখা আমানতে ব্যাংকটি লাখ কোটি টাকার এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছে। এ জন্য আমানত সংগ্রহে কোনো আগ্রাসী কর্মসূচি বা উচ্চহারে সুদ দিতে হয়নি ব্যাংকটিকে।
বিগত এক দশকে জনতা ব্যাংক বেশ কয়েকটি বড় আর্থিক দুর্ঘটনার শিকার হলেও সেইসব ঘাটতি পেছনে ফেলেই সামনে এগিয়েছে জনতা ব্যাংক।
দেশে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক আমানত সংগ্রহে এ অনন্য উচ্চতায় পৌছালো। এর আগে সোনালী ব্যাংকের পর ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংকের আমানত লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়। এবার জনতা ব্যাংকও এই এলিট ক্লাবে ঢুকল। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি অন্য তিন ব্যাংকের মতো জনতাও এখন আমানতের দিক থেকে লাখ কোটি টাকার এলিট ক্লাবে প্রবেশ করল। বিদায়ী অর্থবছরে জনতা ব্যাংকের মোট সম্পদ ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি মহামারীর মধ্যেও আমাদের ব্যাংকের প্রায় সবক’টি সূচকেই উন্নতি হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের আমানত ২০১৬ সালে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালের জুনে এক লাখ কোটি টাকার আমানতের ক্লাবে প্রবেশ করে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের জুনে এই ক্লাবে ঢুকে রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংক। আর গত ২৩ সেপ্টেম্বর জনতা ব্যাংকের আমানত বেড়ে ১ লাখ ৩৪৮ কোটি টাকায় ওঠে। তা গত মঙ্গলবার বেড়ে হয় ১ লাখ ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। এর ৩০ শতাংশই সরকারি খাতের আমানত। বর্তমানে এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৬৮ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায় উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুব শিগগির অন্য কোনো ব্যাংকের আমানত এক লাখ কোটি টাকায় ওঠার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বর্তমানে অল্প কয়েকটি ব্যাংকের আমানত ৫০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে রয়েছে, বাকিগুলোর আরও কম।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডকে জাতীয়করণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল জনতা ব্যাংক। ওই বছরে জনতা ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫৭ কোটি টাকা, আর ঋণ ছিল ১১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকটির আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৯৮ কোটি ও ৭০ কোটি টাকা। সেই বছরে ব্যাংকটি ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার পরিচালন মুনাফা ও ৬৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করে। প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের শেষে জনতা ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৪০১ কোটি টাকায়। পাশাপাশি ঋণ ৬০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির শাখা ছিল ৯১৬ ও জনবল ১১ হাজার ৪৮৩ জন।
ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় জনতা ব্যাংক শিল্প খাত ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ব্যাংকটির হাত ধরে দেশে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। দেশের প্রায় সব করপোরেট গ্রুপেই জনতা ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল। আর বৈদেশিক বাণিজ্য বলতেই যেন ছিল জনতা ব্যাংক। কিন্তু ২০১৫ সালের প্রাক্কালে ব্যাংকটির করুণ আর্থিক পরিস্থিতি প্রকাশ হতে শুরু করে। ওই সময়ে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পরবর্তী সময়ে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্সের অনিয়মের চিত্র প্রকাশিত হয়। এতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তবে এতে ব্যাংকটির আমানতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং তা বেড়েছে।
আমানতের পরিমান ১ লাখ কোটি টাকা সম্পদের ব্যাংকে উন্নীত হওয়াকে গৌরব ও মর্যাদার বলে মনে করছেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আমানতের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটিনি। বেশি সুদেও আমানত সংগ্রহ করিনি। যা এসেছে, তার পুরোটাই সাধারণ গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের।
জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় আছে বলে দাবি করেন আব্দুছ ছালাম আজাদ।বলেন, শুধু ২০২০ সালই নয়। বরং গত তিন বছরে ব্যাপক মাত্রায় নেতিবাচক সংবাদের মধ্যেও জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় আছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জনতা ব্যাংকের আমানত ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে এ আমানত ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদায়ী বছরে আমাদের ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এটি জনতা ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D