মৈত্রীর ৪১ বছর: স্বপ্নযাত্রা কতদূর

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২১

মৈত্রীর ৪১ বছর: স্বপ্নযাত্রা কতদূর

| এমএইচ নাহিদ |

’৯২-এর কোনো এক বিকেলে জীবনের প্রথম বসলাম সকলের রাজনীতির প্রিয় পাঠশালা ‘মৈত্রী’র কর্মী সভায়। কমরেড মিজানের তেজী কণ্ঠে উচ্চারণ-‘শিক্ষা কারো করুনা নয়, শিক্ষা আমার অধিকার’, শিক্ষা শেষে কাজ চাই-নইলে বেকার ভাতা চাই’। ভাবলাম মৈত্রী’ই গরিবের সন্তানের মুক্তির ঠিকানা। সেই থেকে মুক্তির মিছিলে পথ হাঁটা শুরু। স্বপ্ন ছিল, গরিব-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক মৌলবাদকে পরাস্ত করে অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ব। শিক্ষা হবে সবার জন্য। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করে সমতা ও সাম্যের সমাজ গড়ে আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব একটি মানবিক সমাজ। সেই স্বপ্ন নিয়ে এখনো মিছিলে হাঁটি, হৃদয়ে ধারণও করি। মৈত্রী’তে নাই। হাঁটছি ভিন্ন কোনো কাঠামোতে, তবে লক্ষ্য এক ও অভিন্ন-‘শোষণমুক্ত সমাজ’। আমার মতো হাজারো সাবেকদের হৃদয়ে ‘মৈত্রী’। হতে পারে জীবনযুদ্ধে তারা অনেক দূরে। কিন্তু প্রাণে প্রাণে এখনো ‘মৈত্রী’। কারণ এটাই আমাদের ‘আদর্শের পাঠশালা’। তাই এত বছর পরে আপন মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের স্বপ্নযাত্রা কতদূর?

আজ ৬ ডিসেম্বর। প্রাণের পাঠশালার ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমাদের উত্তসূরীরা তাদের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মৈত্রীর জন্মদিন পালন করছে। প্রাকৃতিক বৈরিতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচী স্থগিত হলেও তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মসূচীর যাত্রা করেছে। রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে র‌্যালি-সমাবেশ করেছে। ধন্যবাদ উত্তসূরীদের। নয়াউদারনীতির খপ্পরে পড়া কুলষিত রাজনীতির ভয়াল থাবায় ছাত্র সমাজ যখন ক্ষমতার লাঠিয়ালবাজ ও মিছিলের সাপ্লাইয়ারে পরিণত হয়েছে, ঠিক তখনো মৈত্রী’র বর্তমান যোদ্ধারা লাল হলুদের পতাকা ধরে লড়াই করছে বুক চিতিয়ে। সংখ্যায় যাই হোক ভোগবাদী ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো এই সমাজে ওরা তো মৈত্রী’র পতাকাটা উড্ডীন রেখেছে। তাই বা কম কি। তাই আবারো তাদের রেড স্যালুট।
কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে, যে লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী’র যাত্রা-এই ৪১ বছরে মানবমুক্তির সংগ্রাম, সার্বজনীন একমূখী শিক্ষা, অসাম্প্রদায়িক সমাজ কিংবা শোষণমুক্ত সাম্য ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার সেই স্বপ্নযাত্রা কি এগোচ্ছে! আমি বলব ‘না’ এগোচ্ছে না। বরং আরো পিচ্ছাছে। শিক্ষা বাজারী পণ্য হয়েছে। বাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে কিন্ডার গার্ডেন, প্রি-ক্যাডেট, ক্যাডেট মাদ্রাসা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার সর্বস্তরে চলছে প্রাইভেটাইজেশন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ সান্ধ্যকালীন ‘শিক্ষা পণ্য বাজারে’। পাড়ায় পাড়ায় কওমী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। শিক্ষার এই বহুমুখীকরণে একটা মারাত্মক প্রতিযোগিতা চলছে। ‘টাকা যার, শিক্ষা নয়-সার্টিফিকেট তার’-এই নীতির পিছনে দৌড়াচ্ছে মানুষ। ছুটছে মানবিক মানুষ নয়, কর্পোরেট দুনিয়ার রোবট হওয়ার দৌড়ে। তাতে গরিব-মধ্যবিত্তের সন্তানরা হাঁপিয়ে উঠে ঝড়ে পড়ছে। আবার যারা রোবটিক সার্টিফিকেট নিচ্ছে তাদের অনেকেই কর্পোরেট দুনিয়ার এই উদারনৈতিক অর্থনীতির বাজারে অচল পয়সা। ভুগছে বেকারত্বের অভিশাপে। বাড়ছে বেকারত্ব, বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। আর কেউ পয়সার অভাবে আর হতাশায় অন্তত পরোকালে ভালো থাকার প্রত্যাশায় ছুটছে কওমী শিক্ষার দিকে। বর্তমানে কওমী মাদ্রাসায় বেশিরভাগ ছাত্র গরিব-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীণ এই শিক্ষা ব্যবস্থায় চলে নিজেদের মতো গড়ে তোলা একটি বোর্ডের নিয়মে। ফলে ধর্মবাদীদের মিছিলে মাথা প্রদর্শন ও ভোট ব্যাংক বাড়লেও শিক্ষার্থীদের খুব বেশি উপকার হচ্ছে না। সেখানেও বাড়ছে বেকারত্ব। তারা না পারছে নিজের শিক্ষানুযায়ী কাজ, না পরছে পুঁজিবাদী কৌশলের প্রতিযোগিতায় দৌড়াতে। হতাশা বাড়ছে সেখানেও। অর্থাৎ সামগ্রীক শিক্ষা’ই লেজেগোবরে অবস্থা। কেবল তাই নয়, ক্ষমতার রাজনীতিতে আপোষকামীতার ফলে চলছে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ। শেখানো হয় ‘ও’ তে ওড়না পড়। জীবনের শুরুতেই কোমলমতি মেয়ে শিশুর মস্তিস্কে ঢোকানো হচ্ছে, বালিকা তুমি নারী। মানুষ হওয়ার চাইতে নারী হয়েই বড় হও। এমন আরো অনেকভাবে প্রচলিত শিক্ষা মনজগতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকয় দৃষ্টিভঙ্গি। গরিবের সন্তানকে বুঝানো হচ্ছে তোমাদের ভাগ্যে পড়ালেখা নেই। হতাশায় তারা পা রাখছে জঙ্গিবাদ কিংবা মাদক সাম্রাজ্যে। ফলে ৪১ বছর ধরে মৈত্রী ‘শিক্ষা কারো করুনা নয়, শিক্ষা আমার অধিকার’-এই শ্লোগান দিলেও তার কোনো প্রতিফলন নেই। বরং শিক্ষা চলে যাচ্ছে বড়লোকের ঘরে। শিক্ষাহীন গরিব মানুষ খেটে মরছে, আর বড়লোকেরা লুটের রাজত্ব কায়েম করে টাকার পাহাড় গড়ছে।
এবার আসি অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নযাত্রায়। স্বপ্ন দেখতাম, সমাজ ও রাষ্ট্র হবে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ। ব্যক্তি তার বিশ্বাসে ধর্ম পালন করবে। রাষ্ট্র সব ধর্মকে সমান মর্যাদা দিবে। বায়াত্তরের সংবিধানেও তা আছে। কিন্তু এই ৪১ বছরে সংগ্রামের সেই সফলতা কি পেয়েছি? পাই নি। বরং এত বছরে সামাজিক সাম্প্রদায়িকীকরণ ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। অন্যরা তো দূরে থাক আমরা যারা ‘কমরেড’ বললে বেশ পুলকিত হই, জীবনের বেশির ভাগ সময় সংগ্রামে কাটিয়েছি, ত্যাগও আছে, লাল মলাটের বইয়ে ঘর ভরা, তাদের পরিবারেই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি শিকড় গেড়ে বসেছে। বহু নেতার পরিবার তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই।
আগে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বর্ষবরণ, বসন্ত, নবান্ন, পৌষ মেলা সহ নানা উৎসবে গ্রামে গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। সবাই মিলে উৎসবে মিলত। গ্রামে গ্রামে যাত্রাপালা, মাদারের গান, বেহুলার গান, ফকিরি গান, বাউল সঙ্গীত-নানা গানের আসর বসত। মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। এর ফলে ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও কম হতো। কারণ সংস্কৃতি মানুষকে কুচিন্তা থেকে মুক্ত রাখে। এখন আর হয় না। পাড়ায় পাড়ায় ইসলামী জালসা হয়। কিন্তু সামাজিক অনৈতিকতা ও অস্থিরতা কমছে না। ধর্ম পালন অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু ধর্মের নামে উগ্রতা, ধর্মান্ধতা সেটা মোটেও কাম্য নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্য ও সমতার ধর্ম। অথচ মানুষ যতই ধর্মের দিকে ধাপিত হচ্ছে, ততোই কেন জানি অস্থিরতা বাড়ছে।
সামাজিক সাম্প্রদায়িকীকরণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যে মানুষ জীবনেও মসজিদে যায় কিনা সন্দেহ, সেও মসজিদ-কুরআন অবমাননার খবর যাচাই না করেই সবার আগে আঘাত করে বসে। তাই বাড়ছে সাম্প্রদায়িক উস্কানি। দূর্গাপূঁজোয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ফলে সুযোগসন্ধানিরা ফায়দা লুটছে। আর মানবিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললে তাকে দেওয়া হচ্ছে নাস্তিক বা মুরতাদ তকমা। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর শিকড় এখন অনেক গভীরে।
আসেন শোষণমুক্ত সাম্য ও সমতার সমাজ গড়ার স্বপ্নযাত্রায়। মৈত্রী’র যাত্রার ৪১ বছরে পরও সাম্য ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, তা বাস্তবায়নের পথ শুরু হলো না। ৪ কোটির বেশি মানুষ গরিব। ছিন্নমূল মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে বৈষম্য। ধনী আরো ধনী হচ্ছে। অকৃষক জমির মালিক হচ্ছে, খোদ কৃষক জমি হারিয়ে ভূমিহীন হচ্ছে। মাত্র ৫ ভাগ মানুষ লুটে নিচ্ছে ৯৫ ভাগ মানুষের সম্পদ। লুটপাটের টাকায় ওরা কানাডার বেগমপাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে করছে, আর গরিব-মধবিত্তরা হাঅনিশ্চিত পথের যাত্রী হয়ে উপরে দিকে তাকিয়ে বলছে, “গরিবের সৃষ্টিকর্তা আছে”।
এই ৪০ বছরে বেশকিছু সফলতাও আছে। স্বৈরাচার পরাস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত, মন্দের ভালো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির হাতে ক্ষমতা-খানিকটা সফলতাও বটে। আবার এই ৪০ বছরে কিছু মানবিক মানুষও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সামগ্রীক বিশ্লেষণে আমাদের সংগ্রামী যাত্রা অনেকটাই মাইনাসের দিকে। সাংগঠনিক অগ্রযাত্রাও ভাটার দিকে।
প্রশ্ন, কেন এমনটি হলো? উত্তর পূর্বসূরীদের কাছে, প্রশ্ন আমি সহ সাবেক নেতা ও পলিসি মেকারদের কাছে। জানি উত্তর অনেক গভীরে। অনেকেই বলবেন, ছেলেটা পেকে গেছে। আমি পাকলেও আপনা কাঁচা নেই। কারণ ৪০ বছরের আজকের এই অবস্থার মূল কারণ নেতৃত্ব এবং কর্মী-উভয়ের অবহেলা-অনীহা। মোটা দাগে মতাদর্শিক ফাউন্ডেশনে দুর্বলতা এবং নেতৃত্বের উদাসীনতা। পরিকল্পনার অভাব আর আমিত্ব ও কারো কারো ভোগবাদী মনোভাবই এই অবস্থার জন্য দায়ি। দায়ি যারা নেই তাদের লালন-পালন না করে আগাছা বলে দূরে সরিয়ে দেওয়া।
আসুন আমরা যারা বিপ্লবী তারা কি করি-তা একটু জানি। আমাদের গ্রামে নজর কম। চায়ের দোকানদার আমাকে চিনে কমিউনিস্ট হিসেবে, কিন্তু অর্থ জানে না। কারণ আমি তাকে বুঝাই। আমি বাজারে মাইক পেলে বক্তৃতায় ফাটায় ফেলি, কিন্তু চায়ের দোকানে পাশের মানুষটির সাথে সমাজ বিপ্লব নিয়ে কথা বলি না, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথেও। ফলে পরিবারের সদস্যরা মনে করে আমার বাবা কিছুই করল না। এই নষ্ট সমাজ না ভাঙলে যে কিছুই করা সম্ভব না, তা আমরা বুঝাতে অক্ষম। আবার আমি কমিউনিস্ট বলে গ্রামের মসজিদ, মন্দির, গোরস্থান, ঈদগাহ, মাদ্রাসা কমিটিতে আমার এলার্জি। ওরাও আমাকে না নিলেই খুশি। সমাজের কোনো কাজে আমার সম্পৃক্ততা কম। কারণ আমি বাম। ফলে আমরা না পারলাম পরিবার বুঝাতে, না পারলাম সমাজের মানুষকে টানতে। কিন্তু বহু বছর আগেই মোল্লারা সেই জায়গাটা নিয়েছে। দখলে মানুষের মনোজগত। ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ছিটকে পড়ছে সাম্য ও সমতার সমাজ গড়ার স্বপ্নযাত্রা।
আবার আমি কমিউনিস্ট বলে আমার কোনো বৈস্বয়িক চিন্তাও থাকা যাবে না। জীবন সংগ্রামের জন্য ন্যূনতম অর্থের চিন্তাও করা যাবে না। আমাকে কেবল মিছিল করতে হবে। এখানেও পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে জামাত কিংবা অন্যান্য ধর্মবাদী দল গড়ে তুলেছে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজ করছে হাজার হাজার সাবেক ছাত্রনেতারা। এখন ডাক দিলেই মিছিলে আসে হাজারে হাজারে। অন্যদিকে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর অবস্থা ক্ষয়িষ্ণুতার পথে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যে সংগঠনের মিছিলে হাঁটতো হাজারে হাজারে ছাত্র। আজ তার অবস্থা কি! হাজার হাজার প্রাক্তন নেতাকর্মী ছিলেন যারা, তারা আজ নিস্ক্রীয় অথবা অন্যদলে। আমরা সাবেকরা বলি, আমাদের সময় এত এত ছাত্রের মিছিল হয়েছে। অমুক ক্যাম্পাস দখলে ছিল। ভালো কথা, সেই হাজার হাজার কর্মী আজ কোথায়? কেন তারা স্বপ্নযাত্রায় থাকতে পারলো না। দুর্বলতা কোথায়? প্রশ্ন পাহাড়সম। উত্তর পরিকল্পনার অভাব। একসাথে পথ চলে সামগ্রীক লড়াইটা করতে সমস্যা। দলটা ‘যত ছোট হয়-ততোই ভালো’-মানসিকতা। চলে যাওয়া ও নিস্ক্রীয়দের আমরা বলি ওরা নষ্ট। একবারও ওদের সাথে বসে কথা বলার চেষ্টা করি না।
অন্যদিকে আমাদের সন্তানকে উন্নত দেশে পাঠিয়ে বলি আমার ছেলেটা স্কলার। দেশের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে বলি আমার ছেলেটা ভালো আছে। আর অন্যের ছেলেকে বলি আদর্শবাদী হও। মানুষের জন্য সমাজ গড়। আমাদের কয়জনের সন্তান মৈত্রী করে কিংবা ছাত্র রাজনীতি করে-একবারও কি কোনো ফোরামে তার পরিসংখ্যান হয়েছে। আমরা আমাদের কয়জনের স্ত্রীদের সংগঠনে এনেছি বা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভালো লাগে তার হিসাব করেছি। করি নাই। করার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করি না।
বরং কেউ নেতৃত্বের সমালোচনা করলে কিংবা সাংগঠনিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইলে বলি ‘ও’ বেশি বুঝে, মাথা গরম। ওকে দিয়ে হবে না। বাদ দাও। সম্মেলন-কাউন্সিল আসলে হারিয়ে যায় বহু তরুণ। এভাবে হারিয়ে গেছে বহু পূর্বসূরী।
তাই ৪১ বছর পেরিয়ে ৪২-এর পদযাত্রায় একবার ভাবুন তো কত নেতা, কত ত্যাগি কর্মী আমরা হারালাম! এভাবে কি হারাতেই থাকব। তাহলে সমাজ বদলের যাত্রা, তার কি হবে? হয়তো একদিন ওদের মতো আমিও হারিয়ে যাব। কারণ অন্তরজ্বালা খুব কঠিন জ্বালা।
প্রথমেই বলেছি, আমাদের উত্তসূরীদের মোটেও দোষ নেই। কারণ ওদের কষ্টটা বুঝি। নেতৃত্বের যন্ত্রণা আমি হারে হারে টের পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত পালাতেও বাধ্য হয়েছি। বর্তমানদের আন্তরিক ধন্যবাদ যে ওরা পতাকাটা এখনো ধরে আছে। কঠিন সময়ে লড়াই করছে। এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তবে স্বপ্নপূরণের যাত্রা সফল করতে সাবেকদের এবং পলিসি মেকারদের আন্তরিক হতে হবে। সবাই মিলে নবযাত্রায় পা রাখতে হবে সংকীর্ণতা ভুলে। ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদাত্ত আহ্বান-লেখার সমালোচনা না করে আমরা সকলে আগামীর ভাবনা টা ভাবি। আমিত্ব থেকে বেরিয়ে আমরা হয়ে যাই। তাহলেই এগিয়ে যাবে প্রাণের মৈত্রী, এগিয়ে যাবে আমাদের স্বপ্নপূরণের কাফেলা। প্রিয় ‘মৈত্রী’ শুভ জন্মদিন।
#
লেখক : বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক নতুন কথা
সাব এডিটর, যুগবার্তা
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, কেন্দ্রীয় কমিটি।
৬ ডিসেম্বর ২০২১