দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে বাজার ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক তদারকি, মাফিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী

প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২২

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে বাজার ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক তদারকি, মাফিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৫ মার্চ ২০২২ : যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, সব ধরনের জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাতিল ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্বদেশ গড়ে তোলার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।আজ শনিবার (৫ মার্চ ২০২২) বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ব্যানারসহ উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপ ও ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন (ইনসাব)।

সমাবেশে ঘোষণা পত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অলক দাসগুপ্ত।
সুচনা বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।
সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জয়ন্তী রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য (ভার্চুয়াল), সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য-সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, ঐক্যন্যাপের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট এসএমএ সবুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা রঞ্জিত কুমার সাহা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ, অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের (ইনসাব) কার্যকরী সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও মহানগর নেতা জাহাঙ্গীর আলম ফজলু প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গর্বিত অধ্যায় মার্চ মাস। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এই মার্চে নিরীহ বাঙালির উপর অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে আমাদের নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ আপামর জনতাকে হত্যা করে। আমরা এই অশুভ পাকিস্তানী শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছি জীবনবাজি রেখে। ৩০ লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্ত আর অগনিত নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছি স্বাধীনতা। আমাদের পবিত্র সংবিধানে বৈষম্য, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা সন্নিবেশিত রয়েছে। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেও আমরা পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের নিমূর্ল করতে পারিনি। রাষ্ট্রের রন্ধে রন্ধে পাকিস্তানের আয়ুব-ইয়াহিয়ার দানবেরা বসে আছে এখনো। এরা বাংলা আর বাংলাদেশ বুঝেনা, এরা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত, এরা মানুষকে শোষণ করে বিদেশে অর্থ পাচার করে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে ইন্ধন দিয়ে ইতিহাসকে বিকৃতি করে। মানুষের উপর ধাপে ধাপে এরা খাদ্যদ্রব্যসহ সকল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষকে নিঃস্ব করে চলেছে। রাষ্ট্র এখন মাফিয়াদের খপ্পরে। বিগত দুই বছরের অধিক সময় থেকে করোনার মহামারী এমনিতেই মানুষ কর্মহীন, বেকারত্ব নিয়ে অস্থিরতার রয়েছে। সরকার মানুষের জীবন নিয়ে কোন চিন্তা আছে বলে মনে হয়না। সরকারের মন্ত্রীরা বেপরোয়া, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করে গণমাধ্যমে আবোল-তাবোল কথা বলছেন এতে মাফিয়া স্বার্থ হাসিল হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ‘জাতির জনকের’ কন্যা, আপনার দায়িত্ব অনেক বেশী। নানান অজুহাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে এটা আপনাকে বুঝতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রতিরোধ আর জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাতিল করে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় অপচয় ও লুণ্ঠন বন্ধ করার উদ্যোগী হোন। মানুষ আপনার পাশে থাকবে।
ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আমরা বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই, সাম্প্রদায়িকতা ও জাঙ্গিবাদমুক্ত স্বদেশ চাই। সরকার প্রশাসন থেকে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত দেখতে চাই, তবেই জনবন্ধব রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। শুধু দাম বাড়ানোর যে ট্রেন্ট তা থেকে সরকারকে বের হতে হবে। জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে। পানি, গ্যাস, জ্বালানীর বন্টন, আমদানীর ক্ষেত্রে যে অনিময় রয়েছে তা প্রতিকার করার উপর জোর দিলে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন হবেনা।
সভাপতির বক্তব্যে জয়ন্তী রায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে সামনে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুপ্রতীম দেশসহ যাদের যে অবদান সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িকতার কবল থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
সমাবেশের এক ঘোষণায় বলা হয়, ১৯৭১ সালে একটি সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। লক্ষ্য ছিল একটি ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৭৫ সালের বিয়োগান্ত ঘটনার পর স্বৈরাশাসনের কবলে পড়ে দীর্ঘ সময় দেশের অগ্রযাত্রা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও ব্যহত হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানিকতা লাভ না করার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মানুষকে লড়তে হচ্ছে গণতন্ত্র ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশের ১ শতাংশ বিত্তবানের হাতে রয়েছে মোট আয়ের ১৬.৩ শতাংশ। প্রতি বছর দেশে নতুন করে কোটিপতি হচ্ছে ৫ হাজার। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে দেশে গরীব হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ। গত বছরে মার্চেও এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ ৬ মাসে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ৭৯ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০২০ সালে নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মতো কৌশলগত পন্যের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পন্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।
গত এক দশকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। বাসায় রান্নায় ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের মাসিক বিল ৪০০ টাকা থেকে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। যা এখন বাড়িয়ে ২ হাজার ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও পানি এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনাও রয়েছে। এসব খাতের দূর্নীতি, সিষ্টেম লস, অদক্ষতা দূর না করে গ্রাহক পর্যায়ে বার বার দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
খাদ্যপন্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভোজ্য তেলের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। শীতের সবজী, মাছ, মাংসসহ প্রায় সব খাদ্যপন্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রমজানকে কেন্দ্র করে আরেক দফা দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় একটি দুষ্টচক্র বিশেষ করে অসাধু সিন্ডিকেট, মজুদদার ও অতি মুনাফালোভী চক্রের দাপট পরিলক্ষিত হলেও এটি ভাঙ্গা বা দমনের কোন উদ্যোগ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে ঝাঁকির মধ্যে ফেলেছে, এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সর্বত্র, খাদ্যপন্যসহ সবকিছুর দাম বেড়ে চলেছে দেশে দেশে। আমাদের দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় টি,সি,বি-র মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। খাদ্য সামগ্রীর দাম কমানোর পাশাপাশি টি,সি,বি-র বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো খুবই জরুরী। যদিও টি, সি, বির ট্রাক স্থায়ী সমাধান নয়, আমরা মনেকরি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
দাবি সমূহ :
* যুদ্ধ নয়- পারমানবিক অস্ত্রমুক্ত মানবিক বিশ্ব চাই
* খাদ্যপন্যের দাম কমাও; জ্বালানী তেল, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না
* গরীব, মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু কর
* মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলো

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ