সিলেট ২৫শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২২
ডব্লিউ এ সুনীল | কলম্বো (শ্রীলঙ্কা), ১৯ এপ্রিল ২০২২ : শ্রীলঙ্কার শ্রমিক, যুবক এবং নিপীড়িত জনসাধারণ রাষ্ট্রপতি গোটাভায়া রাজাপাক্ষের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে এবং তার বড় ব্যবসায়ী, সিংহল-জাতীয়তাবাদী সরকার এবং সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে দ্বীপ জুড়ে রাস্তায় নেমেছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে, তারা মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানী ও রান্নার গ্যাসের ঘাটতি এবং প্রতিদিন বিদ্যুতের যে ঘাটতি তার থেকে অবিলম্বে মুক্তি পাবার দাবি করছে।
সামাজিক বিরোধিতার এই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ রাজাপাক্ষের শাসন এবং সমগ্র শাসক শ্রেণীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো, বিধ্বংসী বিশ্বব্যাপী COVID-19 মহামারী এবং ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন-ন্যাটো যুদ্ধ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে এবং ফুলে ফেপে যাওয়া পুঁজিবাদী অভিজাতদের এবং শ্রমিক শ্রেণী এবং গ্রামীণ মেহনতিদের মধ্যে ইতিমধ্যেই তীব্র ব্যাবধান আরও গভীর করেছে।
তিন ডজনেরও বেশি সংসদ সদস্য বিরোধী দিকে সরে যাওয়ার পর সরকার এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য হানাহানি করছে।
শ্রীলঙ্কা এই সপ্তাহে বিদেশী ঋণ পরিশোধ না করতে পারার কারণে ‘অস্থায়ী’ ভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসাবে ঋণ পাওয়া সুরক্ষিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-নির্দেশিত কঠোরতা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কঠোরতা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: আয় বাড়ানো এবং মূল্য যুক্ত কর সংযোজন; জ্বালানির দাম এবং বিদ্যুতের হার বৃদ্ধি; একটি বাজার-নির্ধারিত নমনীয় বিনিময় হার প্রতিষ্ঠা করা; রাজস্ব ঘাটতি কমানো, অর্থাৎ সামাজিক ব্যয় কমানো; এবং বেসরকারীকরণ, কর্পোরেটাইজেশন এবং চুক্তি ভিত্তিক-কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সেক্টরের ‘পুনর্গঠন’। এই পদক্ষেপগুলি চাকরি নিশ্চিহ্ন করবে, মজুরি কমিয়ে দেবে এবং অন্যথায় শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক অধিকারকে পদদলিত করবে।
শ্রমিকরা এখন সরকারের এবং সমগ্র শাসক শ্রেণীর এই শ্রেণীযুদ্ধ আক্রমণের বিরোধিতা কিভাবে করবে এই প্রশ্নের মুখোমুখি।
যে ট্রেড ইউনিয়নগুলি স্পষ্টতই তাদের প্রতিনিধিত্ব করে তারা শ্রমিক শ্রেণী যাতে শিল্প ও রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রিত না করতে পারে এবং তাঁদের যাতে পুঁজিবাদ ও সংসদীয় রাজনীতির সাথে আবদ্ধ করে রাখা যায় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ।
ঠিক এই কারণে যে ইউনিয়নগুলি শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করছে, যার মধ্যে একটি শক্তিশালী ধর্মঘট তরঙ্গ রয়েছে যা রাজাপাক্ষের নভেম্বর ২০১৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে ছিল, গণসরকার বিরোধী বিক্ষোভ সম্পূর্ণরূপে তাদেরকে বাইরে রেখে ছড়িয়ে পড়ে — ঠিক যেমন তারা বিরোধী দলগুলিকেও করেছিল।
কয়েকদিন ধরে সুস্পষ্টভাবে নীরব থাকার পরে ‘গোট্টা কে যেতে হবে’ বিক্ষোভগুলি ফুলে উঠেছে, ইউনিয়নগুলি এখন চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করার দাবি করেছে। কিন্তু তারা তা করে শুধুমাত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে, এবং যাতে করে তাদেরকে পুঁজিবাদী শাসনের জন্য চ্যালেঞ্জে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়।
গতকাল ট্রেড ইউনিয়ন ও গণসংগঠন (TUMO) ঘোষণা করেছে যে তারা ১৬ই এপ্রিল শনিবার একটি মিছিল করবে, সেই প্রতিবাদের সমর্থনে যা গত সাত দিন ধরে কেন্দ্রীয় কলম্বোতে কয়েক হাজার মানুষ রাষ্ট্রপতি রাজাপাক্ষের এবং তার সরকা্রের পদত্যাগের দাবি করছে।
সিলন টিচার্স ইউনিয়ন (সিটিইউ), সিলন মার্কেন্টাইল অ্যান্ড জেনারেল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (সিএমইউ) এবং সিলন ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন যা টিইউএমও-এর সাথে অধিভুক্ত, তারা সহ চৌত্রিশটি ট্রেড ইউনিয়ন যেমন ছদ্ম-বাম ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টির শ্রমিক সংগ্রাম কেন্দ্র এবং জেলে গোষ্ঠী এবং কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) আছে।
TUMO তার পদযাত্রার মূল স্লোগান হিসেবে বেছে নিয়েছে “জনমতের কাছে নত হও! অদক্ষ সরকার, বাড়ি যাও!
TUMO সরকারের গঠন বা শ্রেণী চরিত্র সম্পর্কে কিছুই বলে না যা ঘৃণ্য রাজাপাক্ষের শাসনকে প্রতিস্থাপন করবে। কিন্তু এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে এটি আরেকটি পুঁজিবাদী সরকারের জন্য পথ প্রশস্ত করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান সরকারকে ‘অদক্ষ’ হিসাবে TUMO-এর নিন্দা প্রধান বিরোধী দল, সামগী জনা বালাওয়েগয়া (SJB) এর কথার প্রতিধ্বনি করে, যেটি অর্থনীতির ‘অব্যবস্থাপনা’ করার জন্য রাজাপাক্ষকে নিন্দা করেছে, যার মধ্যে এর আগে IMF এর অন্য আর এক দফা কঠোরতা বাস্তবায়নে সম্মত না হওয়াও আছে।
৪ই এপ্রিল, TUMO একটি বিবৃতি জারি করে বুদ্ধিজীবী এবং পেশাদারদের ‘জনগণের জ্বলন্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা’ সমাধানের জন্য ‘একটি স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারিক এবং বৈজ্ঞানিক কর্মসূচি’ প্রস্তুত করার জন্য এটির সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই কর্মসূচীটি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে শ্রমিক শ্রেণী এবং নিপীড়িত জনসাধারণকে তাদের শ্রেণীস্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একত্রিত করা হবে না। বরং এটি শুরু হবে এবং শেষ হবে যা ‘সম্ভব’ সঙ্কট-কবলিত পুঁজিবাদের সীমানায় এবং শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার অব্যাহতথাকা আধিপত্যের অধীনে।
এই প্রোগ্রামের উপর ভিত্তি করে, বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, TUMO ‘জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে স্বল্পমেয়াদী সমাধান আনতে শাসকদের চাপ দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবে’ এবং একটি ‘জনবান্ধব সংবিধান’ প্রস্তুত করবে। এটি সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন, এবং পেশাদার গোষ্ঠী এবং নাগরিক সংগঠনকে ‘বর্ণ ও দলীয় ভেদাভেদ ছাড়াই একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে … এই কর্মসূচিকে বাস্তবে রূপ দিতে।’
অন্য কথায়, যা প্রস্তাব করা হচ্ছে তা হল একটি জনপ্রিয় জোটের মত, বহু-শ্রেণীর আন্দোলন, যা পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠার দলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সম্ভবত সরাসরি। পুঁজিবাদ – যা বিশ্বব্যাপী ধারাবাহিকভাবে সঙ্কটে নিমজ্জিত, প্রতিক্রিয়ায় বমি করে এবং বিশ্বব্যাপী সামরিক দাঙ্গায় মানবতাকে নিমজ্জিত করার হুমকি দেয়- তাকে কী সংস্কার করা যেতে পারে। এই ধরনের আন্দোলন শ্রমিক শ্রেণীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে বেঁধে রাখতে, শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করতে এবং পুঁজিবাদী শাসনকে সমুন্নত রাখতে ব্যবহার করা হবে, যেখানে ট্রেড ইউনিয়নগুলি আজ সম্পূর্ণরূপে একীভূত।
একটি দ্বিতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফ্রন্ট আছে, ট্রেড ইউনিয়ন কোওর্ডিনেটিং সেন্টার (TUCC)। তবে এর রাজনীতি মূলত ভিন্ন নয়। TUCC চার ডজনেরও বেশি ইউনিয়নকে একত্রিত করে। তাদের মধ্যে কিছু রাজনৈতিকভাবে বিরোধী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (JVP) দ্বারা আধিপত্যশীল, অন্যরা স্বতন্ত্র ইউনিয়ন যা JVP-এর চারপাশে আবর্তিত।
৮ই এপ্রিল, TUCC চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ এবং পাবলিক সেক্টরের কর্মীদের একদিনের টোকেন ধর্মঘট করে। এটি বলেছে যে বর্তমান সংকট সমাধানে রাজাপাক্ষে সরকারকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেবে।
গত শনিবার এক সংবাদিক সম্মেলনে, টিইউসিসি-সংযুক্ত ফেডারেশন অফ হেলথ প্রফেশনালস (এফএইচপি) এর সভাপতি বলেন, সরকার যদি ১৮ই এপ্রিলের মধ্যে বিক্ষোভের ‘ন্যায়সঙ্গত সমাধানে’ পৌঁছাতে না পারে তবে ‘সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনগণের সংগ্রামের সাথে যোগ দিয়ে [এবং] অনির্দিষ্টকালের জন্য যা ধর্মঘট দিয়ে শুরু হবে।”
TUCC ইউনিয়নগুলির একটি সাধারণ ধর্মঘটের হুমকি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীকে একত্রিত করা এবং দেশীয় এবং বিশ্বব্যাপী বড় ব্যবসা এবং শ্রীলঙ্কার বুর্জোয়াদের ব্যয়ে অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য লড়াইয়ের পদক্ষেপ এর লক্ষ্য নয়। বরং উগ্র বিরোধিতার ভঙ্গি করে, ইউনিয়নগুলি ক্রমবর্ধমান জঙ্গী র্যার্ঙ্ক-এন্ড-ফাইলের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চাইছে যা তাদের তীব্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত জীবনযাত্রার মান রক্ষা করতে এবং সরকারের বেসরকারীকরণ অভিযানের বিরোধিতা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করছে। দ্বিতীয়, সংশ্লিষ্ট লক্ষ্য হল শ্রমিক শ্রেণীকে JVP-এর কৌশলের সাথে সরকার এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সাথে আবদ্ধ করা।
JVP-এর মতো, JVP-এর নেতৃত্বাধীন ইউনিয়নগুলি রাষ্ট্রপতি রাজাপাক্ষে এবং তার সরকারের পদত্যাগের পর বিরোধী দলগুলির উপর ভিত্তি করে একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। ‘লুটপাট, দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত’ পেশাদারদের নিয়ে একটি নতুন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে তারা নতুন নির্বাচনেরও আহ্বান জানাচ্ছে। এটা অন্য আর একটি পুঁজিবাদী সরকার ছাড়া আর কিছুই নয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, JVP ‘সমর্থনের’ জন্য IMF-এ বৈশ্বিক পুঁজির ভ্যাম্পায়ারদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে অস্বীকার করেছে।
সম্প্রতি কলম্বো মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের নিয়োগকর্তারা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তবে ইউনিয়নগুলো সম্পূর্ণ নীরব। একই সময়ে, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং সাধারণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, আন্তন মার্কাস, রাজাপাক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের নিন্দা করেছেন এবং তাদের ‘অসংগঠিত, শৃঙ্খলাহীন এবং হিংস’ বলে অভিহিত করেছেন। শাসক শ্রেণীর মতো, ইউনিয়নগুলি সরকার বিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান দাবিতে আতঙ্কিত যে তারা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
গত দুই বছরে সরকারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজ্য প্রশাসন, রেলওয়ে, বন্দর, পেট্রোলিয়াম এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দ্বারা জঙ্গি ধর্মঘট ও বিক্ষোভের ঢেউ দেখা গেছে। চা বাগান শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সংগ্রাম অব্যাহত এবং মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলেও ধর্মঘট ও প্রতিবাদও হয়েছে।
অবিচ্ছিন্নভাবে, ইউনিয়নগুলি এই সংগ্রামগুলিকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বিক্রি করে দিয়েছে, রাজাপাক্ষে সরকারকে শ্রমজীবী মানুষের উপর সঙ্কটের বোঝা চাপানোর জন্য তার যে অভিযান তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম করেছে। একই সময়ে, ইউনিয়নগুলি মহামারীতে জীবনের আগে লাভ এই নীতি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।
গত বছর প্রায় ২,৫০,০০০ শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ধর্মঘটে নিযুক্ত ছিলেন, শুধুমাত্র ইউনিয়নগুলি শিক্ষাকর্মীদের দাবির মাত্র এক-তৃতীয়াংশের সমান বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব মেনে নিতে। ধর্মঘটের শুরুতে, CTU এবং JVP-অনুমোদিত শিক্ষক পরিষেবা ইউনিয়নগুলি সহ জড়িত প্রধান ইউনিয়নগুলির নেতারা, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের সাথে একটি আলোচনায় বলেছিলেন যে তারা ‘বোঝে’ দেশ ‘অর্থনৈতিক সংকট’ এর মধ্যে রয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার পরে ফেডারেশন অফ হেলথ প্রফেশনালের নেতা রবি কুমুদেশ গত মাসে যে মিডিয়া বিবৃতি দিয়েছিলেন তাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি স্বীকার করেছেন যে ইউনিয়নগুলি সীমিত ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সদস্যদের ‘ঠিক রাখবার’ জন্য যারা ইউনিয়নকে তাদের দাবির জন্য লড়াই করতে চাপ দিয়েছিল।
গত বছরের জুন থেকে, রাষ্ট্রপতি রাজাপাক্ষে বারংবার অপরিহার্য পাবলিক সার্ভিসেস অ্যাক্টের ক্ষমতাগুলিকে বেশির ভাগ সরকারী ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানে শিল্প আন্দোলনকে দমন করবার জন্য একে অপরাধ হিসাবে আইন করেছেন। এই কঠোর আইন সম্পর্কে ইউনিয়নগুলি সম্পূর্ণ নীরব। বা তারা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে, যিনি রাষ্ট্রপতি গোটাভায়া রাজাপাক্ষের বড় ভাই, তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় হিংসতা ব্যবহার করার যে হুমকি দিয়েছেন তার নিন্দাও করেনি, যা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি তাদের উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয়। এবং যখন তারা কর্তৃত্ববাদী কার্যনির্বাহী সভাপতিত্বের সমালোচনা করতে পারে, তখন ইউনিয়নগুলি কয়েক দশক ধরে এটির সমর্থনকারী সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ এবং বাণিজ্য করে, এবং এর বিলুপ্তির জন্য লড়াইকে রাজনৈতিকভাবে পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সংগঠিত করতে এবং সমাজতান্ত্রিক ধারায় অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার কোন ইচ্ছাই নেই।
বর্তমান বৈশ্বিক পুঁজিবাদী সংকটে শ্রমজীবী জনগণ সরকার ও পুঁজিপতি শ্রেণীকে চাপ দিয়ে বা অনুনয়-বিনয় করে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো সুরক্ষিত করতে পারে না। বরং তাদের অবশ্যই কঠোরতা এবং আইএমএফের বিরোধিতা করার জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচীর লড়াইয়ে তাদের স্বাধীন শ্রেণী শক্তিকে একত্রিত করতে হবে এবং সকলের জন্য উপযুক্ত চাকরি, খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে!
তার শ্রেণী শক্তিকে একত্রিত করতে, শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদী ট্রেড ইউনিয়নের শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে মুক্ত হতে হবে এবং শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের প্রকৃত সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
সেই জন্য সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টি (SEP) প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে, কারখানায় এবং শ্রমিক শ্রেণীর এলাকাতে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এবং ট্রেড ইউনিয়ন এবং সমস্ত পুঁজিবাদী দল থেকে স্বতন্ত্র অ্যাকশন কমিটি গঠনের আহ্বান জানাচ্ছে।
এই অ্যাকশন কমিটিগুলি জনগণের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে পাবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলি নিতে লড়াই সংগঠিত করবে। এর মধ্যে রয়েছে জনগণের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং অন্যান্য সম্পদের উৎপাদন ও বন্টনের উপর শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা; দরিদ্র কৃষকদের ঋণ বাতিল করা; এবং ব্যাংক, বড় এস্টেট, বড় কোম্পানি এবং সেগুলি যা অতি-ধনীদের ভাগ্যকে পরির্বতন করেছে তা জাতীয়করণ করা যাতে করে তাদের সম্পদগুলি সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের শালীন জীবনযাপন এবং সামাজিক পরিস্থিতি প্রদানের জন্য পুনরায় কাজে লাগানো যায়।
অ্যাকশন কমিটির উদীয়মান নেটওয়ার্ক গ্রামীণ দরিদ্র এবং যুবকদের জন্য একটি সমাবেশ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে এবং সিংহল, তামিল এবং মুসলিম শ্রমিকদের একত্রিত করবে, পুঁজিবাদী এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রচারিত নৈরাজ্যবাদী এবং সাম্প্রদায়িক নোংরামিকে প্রত্যাখ্যান করবে।
অ্যাকশন কমিটির কর্তৃত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক ক্ষমতার অঙ্গ হয়ে উঠবে, উপরোক্ত সমাজতন্ত্র কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিক ও কৃষক সরকারের জন্য লড়াইয়ের ভিত্তি প্রদান করবে। এই সংগ্রামে শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের অপরিহার্য মিত্র হল বিশ্বজুড়ে তাদের শ্রেণী ভাই বোনেরা।
এই কর্মসূচীর সাথে একমত সকল শ্রমিক ও যুবকদের উচিত যোগদান করা এবং SEP-কে শ্রমিকশ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তোলা।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D