নরসিংদীতে “ইসলামী” পোশাক না পরার জন্য যে মেয়েটিকে অপমান ও শারীরিক লাঞ্ছনা করা হয়েছে, এই সহিংসতা কেন?

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২২

নরসিংদীতে “ইসলামী” পোশাক না পরার জন্য যে মেয়েটিকে অপমান ও শারীরিক লাঞ্ছনা করা হয়েছে, এই সহিংসতা কেন?

Manual1 Ad Code

খান অাসাদ |

এই সহিংসতার কারণ বুঝতে হলে, এই অপরাধীদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনীতি আগে বুঝতে হবে। সেই বোঝার কাজটি আমরা সাধারণত করতে চাইনা। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে, ‘শরীরের রাজনীতি’ ও ‘পোশাকের রাজনীতি’ আপনাকে বুঝতেই হবে।

Manual5 Ad Code

শরীরের দর্শন ও রাজনীতি মানে, শরীর সম্পর্কিত দর্শন (দৃষ্টিভঙ্গি) ও শরীর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। একটি সমাজে ‘শরীর’ কিভাবে দেখা হয়, বোঝা হয়? এই দেখা ও বোঝার সাথে কি ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা সম্পর্কিত? এই বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে কারা লাভবান হয়? কারা এই সহিংস ক্ষমতা চর্চা ও কাঠামো টিকিয়ে রাখছে? কারা এই প্রশ্নে নিশ্চুপ বা মেনে নিচ্ছে? – এই সব প্রশ্ন আপনাকে করতে হবে।

Manual7 Ad Code

ভারতীয় কাস্টসিস্টেম বা বর্ণবাদ বা জাতপাত ভেদ একটি ঐতিহাসিক ‘শরীরের দর্শন’ ও শরীরের রাজনীতির উদহারন। এটি থিও-পলিটিক্স বা ধর্মীয় রাজনীতি, ব্রাহ্মণ্যবাদের। কাস্টসিস্টেম একধরনের শ্রেণিবিভাজনও। ধর্মীয় যুক্তি, কোন শ্রেণীর মানুষের সামাজিক অবস্থান কি হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। ধর্মবিশ্বাস যে, ব্রাহ্মণরা এসেছে ব্রহ্মার মাথা থেকে, এবং শূদ্ররা পা থেকে। অর্থাৎ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন ‘সামাজিক মর্যাদা’ আছে, যা আবার নির্ধারণ করছে মানুষের অধিকার ও ক্ষমতা, নির্ধারিত হচ্ছে বৈষম্য ও সহিংসতার বৈধতা।

‘রাজনৈতিক ইসলামের’ যে শরীর দর্শন, সেটি প্রধানত নারীর শরীর ও নারীর পোশাক সম্পর্কিত, যা নারীকে মূলত যৌনবস্তু হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গী হিসেবে প্রচার করে। পর্দা বা হিজাবের ও গৃহে অবরোধের, মুহররম পুরুষ অভিভাবকত্বের, সম্পদে বৈষম্যের সহ অনেক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে, যা মূলত পুরুষআধিপত্যের, ফলে চূড়ান্ত পিতৃতান্ত্রিক। কিছু মুসলমান নারীও যে নারীর প্রতি সহিংসতায় যোগ দেয়, নারী হয়েও, সেটার কারণ ঐ পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় শিক্ষা।

পুঁজিবাদেরও শরীরের দর্শন ও রাজনীতি আছে। শরীরকে শুধু শ্রম উৎপাদনের ভিত্তি নয়, শরীর ‘পণ্য’, বিক্রয়যোগ্য দ্রব্য মাত্র। পতিতাবৃত্তি নিয়ে একটি ফিল্ম ‘গাঙ্গুবাই’ খুব স্পষ্টতায় শরীরের রাজনীতি প্রকাশ করেছে। বৈধতা দিচ্ছে পতিতাবৃত্তির ‘পেশা’ যা ছাড়া সমাজ খুবই বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে, কারণ পুরুষগুলো এমন যৌনকাতর পশু যে তাঁদের পক্ষে পতিতালয় ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ‘যুক্তি’ মানবাধিকারের নামে। এর বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক শরীরের রাজনীতি পাই সোভিয়েত ইউনিয়নের শুরুতে কলন্তাইদের পুরুষের দ্বারা শরীর বাণিজ্য বন্ধ ও নারীর শরীরের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদহারনে।

“পোশাক ব্যক্তির অধিকার” হওয়া উচিৎ, কিন্তু বাস্তবে এই অধিকার নির্ধারিত হয় শরীরের দর্শন ও শরীরের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। শরীরের রাজনীতির সাথে পোশাক পছন্দের অধিকার বা সুযোগ নির্ধারিত হয়।

আমি ধর্ম ‘ইসলাম’ ও ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ আলাদা করে দেখি। ১৯৭১ সালে এই পার্থক্য খুব স্পষ্ট হয়েছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা জামাতে ইসলাম ও অন্যান্য রাজনৈতিক ইসলামের লোকেরা রাজাকার আলবদর হিসেবে বাঙালি হয়েও বাঙালি নারীর প্রতি যে পৈশাচিক আচরণ করেছে, তা সকলেই জানি। ফলে, নরসিংদীতে যে নারীর প্রতি হামলা, সেটিও শেষ বিচারে, বাংলাদেশে রাজাকার আলবদরের রাজনীতির ধারাবাহিকতার প্রকাশ।

শরীরের রাজনীতি, পোশাকের রাজনীতি ও নারীর প্রতি সহিংসতা বুঝতে হলে, বাংলাদেশের রাজনীতির ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ভুলে গেলে হবেনা। এই ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকে আসলে আপনি পরোক্ষে, রাজাকার আলবদরের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির একটি সাংস্কৃতিক প্রচারণার পালেই হাওয়া দেবেন।

Manual8 Ad Code

মানুষ সভ্য ও মানবিক হয়ে উঠুক। সাম্য ও শান্তির পৃথিবীর জন্য আপনার সক্রিয় ভূমিকা হোক। সকল জাতির মানুষের প্রতি ও বিশেষ করে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতাকে “না” বলুন।

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code