সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০২২ : ‘বছরের পর বছর ধরে নানা অনিময়ই যেন জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনুদান প্রদানের নীতিমালাকে অবজ্ঞা করে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক তদবির ও অন্যান্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহৎ এই উদ্যোগটিকে ধ্বংস করা হচ্ছে।’
সোমবার (৪ জুলাই ২০২২) রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এমন দাবি করেছে বাংলাদেশের ৩৩টি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরাম, বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ, বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট এলামনাই এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিল্ম অার্কাইভ এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাব, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ (জাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিনে সোসাইটি, চলচ্চিত্র অান্দোলন (জাবি), জগন্নাথ ফিল্ম সোসাইটি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি ক্লাব, চলচ্চিত্র অান্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্র, বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি, ঋত্তিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাব, খুলনা ফিল্ম সোসাইটি, সিলেট ফিল্ম সোসাইটি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, চোখ ফিল্ম সোসাইটি, শ্রীমঙ্গল চলচ্চিত্র সংসদ, কাকতাড়ুয়া (স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন), কীর্তনখোলা ফিল্ম সোসাইটি (ববি), হীরালাল সেন চলচ্চিত্র কেন্দ্র, টাঙ্গাইল চলচ্চিত্র সংসদ, এনলিভেন সিনেমা ক্লাব, টরেন্টো ফিল্ম ফোরাম, স্ট্যানফোর্ড ফিল্ম ফোরাম ও ইন্টারন্যাশনাল একাডেমী অব ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া।
চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় অসংগতির প্রতিবাদে আয়োজিত চলচ্চিত্রকর্মীদের এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মানজারে হাসিন মুরাদ, তানভীর মোকাম্মেল, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ফরিদুর রহমান, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, আবু সাইয়ীদ, কাওসার চৌধুরী ও এন রাশেদ চৌধুরীসহ দেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগঠক।
নেতৃবৃন্দ এই সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিভিন্ন প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
চলচ্চিত্র অনুদান ২০২১-২২ এর সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক অসংগতির প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদী চলচ্চিত্র কর্মী সমাবেশে সরকারের প্রতি বিভিন্ন দাবি পেশ করে বক্তারা বলেন, ‘অনুদান প্রদানের সরকারি নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখবে এবং একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ গল্পের চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে পূর্ণদৈর্ঘ্য বিভাগে কোন প্রামাণ্যচিত্র অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হয় না যাতে স্বাভাবিক ভাবেই অনুদানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তেমনিভাবে বাণিজ্যিক ধারার প্রযোজক, পরিচালক যখন বেশিরভাগ সংখ্যায় অনুদানের জন্য নির্বাচিত হন তখন অনুদানের মান নিয়েই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আশঙ্কাজনকভাবে এ বছর থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্যে অনুদানের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দেয়ায় তরুণ চলচ্চিত্রকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এমন পরিচালকও অনুদান পাচ্ছেন যাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। যারা পূর্বে অনুদান নিয়ে নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেননি তাদেরকেও পুনঃরায় অনুদান দেয়া হয়েছে’।
প্রতিবাদী চলচ্চিত্রকর্মী সমাবেশ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় গতিশীল রাখতে এবং স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রকর্মীদের সৃষ্টিশীলতাকে ধারণ ও অনুদান প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক তদবির বা অন্যান্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অবসানে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
চলচ্চিত্র কর্মীদের ১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-
১. জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানে স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রের সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে এবং বাণিজ্যিকধারার চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যা অনুদান নীতিমালায় বর্ণিত ‘মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ’ চলচ্চিত্র নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতার বিরোধী। জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানে স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
২. অনুদান নীতিমালায় ও প্রস্তাব আহ্বানকালে প্রামাণ্যচিত্রের উল্লেখ থাকলেও গত তিন বছর ধরে পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রে কোন অনুদান দেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি এই যে, কাহিনীচিত্রের সমপরিমাণ অর্থ ও সংখ্যা সাপেক্ষে প্রতি বছর প্রামাণ্যচিত্রে অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও প্রামাণ্যচিত্রের জন্য পৃথক জুরি বোর্ড গঠন করতে হবে, যার সদস্যগণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা/প্রযোজক/শিক্ষক অথবা দীর্ঘসময় প্রামান্যচিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।
৩. গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আশঙ্কাজনক হারে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদানের সংখ্যা কমে গেছে। অথচ একটি মানসম্মত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রভাব কোন অংশেই পূর্ণদৈর্ঘ্যের চেয়ে কম নয়। আমরা প্রতিবছর নূন্যতম ২০ টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদান প্রদান এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ১৫-৪০ মিনিট সুনির্দিষ্ট করে দেয়ার দাবি জানাই।
৪. নির্মাতার উপর অপ্রয়োজনীয় বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেহেতু এফডিসির বাইরেও কারিগরি সহায়তার সুযোগ আছে, তাই এফডিসির কারিগরি সরঞ্জাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা লোপ করতে হবে। এছাড়াও এফডিসির এবং অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতি প্রভৃতির ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা লোপ করতে হবে।
৫. চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নির্মাতাকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে। এজন্য-
(ক) ১ম কিস্তিতে প্রোডাকশন খরচের সম্পূর্ণ অর্থ (প্রদানকৃত অনুদানের নূন্যতম ৬০ ভাগ) প্রদানের নিময় চালু করতে হবে।
(খ) মেন্টর পদ্ধতি বিলোপ করতে হবে।
(গ) চলচ্চিত্রের নির্মাণকালের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।
৬.নির্মিত চলচ্চিত্র সিনেমা হলে মুক্তির দায় প্রযোজককে না দিয়ে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনের ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
৭.অনুদান প্রদানের জন্য স্বতন্ত্র বোর্ড/দপ্তর গঠন করে বাছাই কমিটি, অনুদান কমিটি ও প্রিভিউ কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত এবং এই প্রক্রিয়াগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অনুদান সংশ্লিষ্ট মিটিং/প্রিভিউ মন্ত্রণালয়ের বাইরে উক্ত বোর্ডে কিংবা তথ্য ভবনে করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অনুদান নীতিমালার সংশোধন করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
৯. চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অনুদান প্রদানের চুক্তিপত্রে বিদ্যমান শর্তাবলী সংশোধন করতে হবে।
১০. প্রাথমিক বাছাইয়ের পর বাছাইকৃত প্রস্তাবকদের সাথে সাক্ষাৎকার গ্রহণ রীতি চালু ও তার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি