পদ্মাসেতু এবং আমার অনুভূতি

প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২২

পদ্মাসেতু এবং আমার অনুভূতি

Manual4 Ad Code

মীরা মেহেরুন |

ধরা যাক, বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ কোটি পরিবার নিয়ে বিশ কোটি মানুষের বসবাস। এই পাঁচ কোটি পরিবারের আয়ের যে একেবারে সমতা থাকতে হবে, তা নয়। তবে আমি উন্নয়ন বলতে যা বুঝি, তা হলো এই পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা ও জীবন নির্বাহ এমন হতে হবে, যেন সেখানে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময়তা বিরাজ করে।

Manual4 Ad Code

পদ্মাসেতু নিয়ে যারা বিরোধিতা করেছেন তারা বাদে বাকি মানুষগুলোর মতো আমারও ভাবাবেগ ছিলো প্রবল উচ্ছ্বাস ঘটা করে অন্য সবার মতো প্রকাশ করিনি। কারণ আমি তো আমার মতোই। প্রচন্ড চাঁপা উত্তেজনা কাজ করেছে উদ্বোধনের দিন পর্যন্ত।

Manual7 Ad Code

৫২ বছর বয়সী একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে এমন পাঁচটি সেতু, মেট্রোরেল থাকবে রাষ্ট্রপ্রধান সহ রাষ্ট্রের গণমানুষের চোখে সে স্বপ্ন এবং তার বাস্তবায়নের প্রয়াস থাকবে, সেটাই ছিলো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সে হাল ধরার সাহসিক প্রেক্ষাপট রচিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এই শুভ উদ্যোগ গ্ৰহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য আমরা দক্ষিণ বাংলার মানুষগুলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং একইসঙ্গে তাঁর প্রতি স্বাগত ও অভিবাদন।

Manual4 Ad Code

কিন্তু সেতুকে কেন্দ্র করে যেসব নেতিবাচক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে, তা একটি সভ্য জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এর ইউটিলিটি কি? সেটা যত সময় পর্যন্ত একটি মানুষ উপলব্ধি করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর সার্থকতা খুঁজতে খুঁজতে একটু পেছনে হাঁটতে হবে ।

একজন নিরক্ষর মানুষের হাতে সেক্সপিয়ারের একটি নাটক ধরিয়ে দিলে যে প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাই ঘটে চলেছে ওখানে। জানিনা আরো কত ঘটনা অপেক্ষা করছে আগামী দিনগুলোতে।

সেতু কেন্দ্রিক বৃহৎ উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের কিছু ছোট ছোট উন্নয়ন দরকার; যেমন সেতুর আশেপাশের স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন।

Manual7 Ad Code

সাইকেলে অথবা টুকরি মাথায় নিয়ে হাটুরে তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় আসবে না। সে কিন্তু গ্রামের হাটে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীর নিকট দামে ঠকে বিক্রি করবে, সেই স্বল্পমূল্যেই যেখানে তার উৎপাদন খরচও উঠবে না। আর ফড়িয়ারা পদ্মা সেতুর ট্যাক্সের কথা বলে পূর্বের তুলনায় সেসব পণ্য ঢাকায় এনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করবে। প্রকৃতই কৃষক বা উৎপাদকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

এখানে একটি কথা বলার আছে, সেটা হচ্ছে সরকারিভাবে স্থানীয় বাজারগুলোর পণ্যমূল্য নির্ধারণ, বাজার ব্যবস্থার অবকাঠামগত উন্নয়ন ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

আর হ্যাঁ সর্বপ্রথম যে বিষয়টি দরকার তা হল মানুষের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষা, ব্যবহারিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ পরিবর্তনে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গভীর মননের মাধ্যমে দেশ প্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে। কারণ আমাদের একটি একাত্তর আছে, আমাদের একটি সংস্কৃতি আছে। সেই সংস্কৃতি যেন তারিখ ভিত্তিক লোক দেখানো না হয়ে, তা যেন হয়ে ওঠে চিরন্তন। কারণ শিক্ষা ও শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার ভিতর দিয়েই একটি সভ্য জাতি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে; যার উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সবশেষে বলবো, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক, মননশীল ও দেশাত্মবোধ সমৃদ্ধ এক আলোকিত জাতি হিসেবে তৈরি হোক আজ থেকেই। আগামী বিশ/পঁচিশ বছর পর হয়তো আমরা একটি অগ্ৰসরগামী প্রজন্ম পাবো।

জয় বাংলা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code