ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম প্রধান কারিগর শহীদ কমরেড ঘাসান ফৈজ কানাফানি

প্রকাশিত: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৪

ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম প্রধান কারিগর শহীদ কমরেড ঘাসান ফৈজ কানাফানি

Manual2 Ad Code

ওমর রাব্বি |

ঠিক ৫২ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম প্রধান কারিগর কমরেড ঘাসান ফৈজ কানাফানি শহিদ হন।

Manual1 Ad Code

১৯৬২-তে প্রথম উপন্যাস ‘রিজাই ফি-আ শামস’ (সূর্যস্নাত মানুষেরা) প্রকাশিত হতেই সাহিত্য রসিকদের নজর কেড়েছিলেন ফিলিস্তিনি ঘাসান ফৈজ কানাফানি। ‘৬৯-তে এসে তাঁর নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর ছাপ নিয়ে জন্ম নিলো তৃতীয় উপন্যাস ‘উম্ম সা’আদ’ (সা’আদের মা) – যেখানে মা তাঁর সন্তানকে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অস্ত্র হাতে তুলে ফিদাইন-এর জীবন বেছে নিতে সাহস জোগাচ্ছেন। আরব প্রতিরোধ সাহিত্য নতুন সংজ্ঞা পেল। উপন্যাসে একেবারে নতুন ধারার আঙ্গিকের আধুনিকতা – ফ্ল্যাশব্যাক এফেক্ট ও একইসাথে অনেক ন্যারেটিভ স্বরের ব্যবহার – তাঁকে আরব সাহিত্যে অনন্যতার মর্যাদা দিয়েছিল পৃথিবীর সামনে। কিন্তু এটুকুই জানলে কানাফানির একটা টুকরোকে শুধু জানা হবে।

ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে বিতাড়িত সাহিত্যের ছাত্র কানাফানি ছাত্রজীবনে এবং সাহিত্যচর্চা, পত্রপত্রিকার সম্পাদনার প্রথম পর্বে ‘আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’-এর গভীর প্রভাবে ছিলেন। তাতে বিপ্লবী বাঁকবদল ঘটল অশান্ত ১৯৬৭-তে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) গড়ে ওঠার পর্বে, যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এর দু’বছর বাদে পিএফএলপি যখন মার্কসবাদ লেনিনবাদকে, মাও ৎসে তুঙের দেখানো পথকে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের তাত্ত্বিক ভিত হিসেবে গ্রহণ করল, সেই ইশতেহারের অন্যতম প্রধান কারিগরও ছিলেন কানাফানি। সে সময়ে তিনি দৈনিক সংবাদপত্র আল-আনোয়ার-এর প্রধান সম্পাদক। সে পদ ছেড়ে দিয়ে দায়িত্ব নিলেন পিএফএলপি-র সাপ্তাহিক আল-হাদাফ-এর (‘আল-হাদাফ’ মানে ‘লক্ষ্য’)। এই সময় থেকেই স্থির লক্ষ্যে নিজের সাহিত্যের ভুবনকে ভেঙে নতুন করে গড়ে পিটে নিয়েছিলেন তিনি – ‘উম্ম সা’আদ’ ও পরবর্তী উপন্যাসগুলি ছিল তারই ফসল। আরব প্রতিরোধ সাহিত্যের দিশা সত্যি করে নিরূপণ করলেন কানাফানিই।

ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক হিসেবে খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীনই কিন্তু তিনি সরাসরি সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। ১৯৭২-এ জাপানিজ রেড আর্মির সহযোগিতায় ইসরায়েলের লড এয়ারপোর্টে ঐতিহাসিক আক্রমণ সহ ইসরায়েলকে সন্ত্রস্ত করে তোলা একাধিক ‘অফেন্সিভের’ পিছনে তাঁর মস্তিষ্কও কাজ করেছিল। মনে রাখতে হবে, এই সময়েই পিএফএলপি প্যালেস্টাইনে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে এসেছিল। তার আন্তর্জাতিক মুখপাত্র কানাফানি। সুতরাং তাঁর মৃত্যুর পরদিন ডেইলি ষ্টার যে লিখেছিল, “কানাফানি এক কম্যান্ডো ছিলেন যিনি একবারও একটি গুলি ছোঁড়েননি। তাঁর অস্ত্র ছিল বল-পয়েন্ট কলম আর যুদ্ধক্ষেত্র ছিল সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা” – তা সর্বাংশে সত্যি ছিল না। ঘাসান কানাফানি শুধুই ন্যায়যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। যুদ্ধে ছিলেন।
১৯৭২-এর জুলাই মাসের ৮ তারিখ, তখন ৩৬ বছর বয়স তাঁর, ইসরায়েলের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক সংস্থা মোসাদ তাঁকে হত্যা করে। এবং আরও অনেক ঘাসান কানাফানির জন্ম সুনিশ্চিত করে। আজ যাঁরা প্যালেস্টাইনে লিখছেন। এবং যুদ্ধক্ষেত্ৰে লড়ছেন।
প্রতিরোধের ভাষা

Manual4 Ad Code

০৮ জুলাই ২০২৪
লিখা – ওমর রাব্বি
ছবি – Golam Nowzab Power Chowdhury

Manual8 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code