আজ খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’

প্রকাশিত: ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আজ খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’

Manual6 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ : খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠানটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Manual8 Ad Code

আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৪) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে এ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে।

Manual1 Ad Code

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ বছর অনুষ্ঠানটি না হওয়ার কথা আরপি নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, শেষ পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আগ্রহে ও প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসে এবং খাসি নেতৃবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত উৎসবটি আয়োজন সম্ভব হচ্ছে বলে আয়োজকরা জানান। এখন চলছে শেষ সময়ের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী জানান, খাসিদের আয়ের উৎস পান ব্যবসায় এবার চরম মন্দা চলছে। খাসিরা পানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এজন‌্য চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন খাসিয়ারা। টাকা জোগাড় করতে না পারার কারণে এ বছর অনুষ্ঠানটি বা‌তিল করা হয়ে‌ছিল। তবে সরকা‌র ও খা‌সি নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে অনুষ্ঠান‌টি হচ্ছে।

কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুচিয়াং বলেন, আমাদের আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও সরকার ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা এই আয়োজন করতে পেরেছি। এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক বন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অন্যতম সম্প্রদায় খাসিয়া। খা‌সিয়া সম্প্রদায়ের মূল জী‌বিকা পাহাড়ে পান চাষ। তাদের এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ যোগ দেন। আসেন দেশ-বিদেশের পর্যটকেরাও।

Manual3 Ad Code

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচেগানে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। উৎসবের দিন মাছ শিকার, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।

প্রতি বছরের ২৩ নভেম্বর দিনব্যাপী কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ বর্ষবিদায় ও নতুন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান (খাসিয়া উপজাতির ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীন খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবার কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জিতে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটির তাৎপর্য ও এর ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

Manual5 Ad Code

নতুন বর্ষবরণ ও বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষের এবং জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। উৎসব উপলক্ষে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

সেং কুটস্নেম উৎসবের দিনব্যাপী সবাই মিলে মাছ শিকার, ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে তারা আনন্দ ফুর্তি করে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।

সেং কুটস্নেম উপলক্ষে সকাল থেকে মাগুরছড়া পুঞ্জির মাঠে বসবে ঐতিহ্যগত মেলা। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসবেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তীর, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হবে। খাসিয়া তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি, বাংলাদেশে খাসিয়াদের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা ও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ষ বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব’ অনুষ্ঠানটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় পালন করার সুসংবাদ পেয়ে, এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় সরকার ও প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “খাসিয়াসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও তাদের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।”

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code