আগামী ১০-১২ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে ট্যুরিজম বোর্ডের তিনদিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যাল মেলা

প্রকাশিত: ১০:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

আগামী ১০-১২ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে ট্যুরিজম বোর্ডের তিনদিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যাল মেলা

বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ : নতুন বছরের শুরুতেই চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণিল জীবন ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন তিনদিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যাল মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড প্রথমবারের মতো এ মেলা’র উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

অঞ্চলভিত্তিক এ হারমোনি ফেস্টিভ্যাল মেলাকে সফল ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক করছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

আগামী ১০-১২ জানুয়ারী ২০২৫ বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্থানীয় বিভিন্ন নৃ-জাতি-গোষ্টির কালচারাল প্রোগামের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরনের স্টল থাকবে বলে আয়োজকরা জানান।

পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক দেশব্যাপী অঞ্চলভিত্তিক হারমোনি ফেস্টিভ্যাল মেলার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে একে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “টেকসই উন্নয়নে দেশে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অনেক দেশের জাতীয় আয়ের বড় অংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভাবমূর্তিকে তুলে ধরার সহজ উপায় হলো পর্যটন শিল্পের প্রসার। পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশ ভ্রমণ করে। এভাবে পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হয়। পর্যটন শিল্প থেকে বিপুল আয়ের সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও আমাদের দেশে এ শিল্প সেভাবে গড়ে উঠছে না।
গোটা বাংলাদেশেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো অজস্র দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের কুয়াকাটা যার সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে সারা বছরই দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসছে। প্রকৃতির হাতে গড়া সুন্দরবন দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসে। সুন্দরবনের বাঘ ও হরিণের আকর্ষণ বিশ্বব্যাপী। আকর্ষণীয় স্থান নীলফামারীর নীলসাগর। শীতকালে মনোহারিনী নীল সাগরে সুদূঢ় সাইবেরিয়া এবং তিব্বতের মতো সফেদ তুষার রাজ্য থেকে নানা প্রজাতির হাজার হাজার পাখি উড়ে আসে। তাদের কোলাহলে সরব থাকে এ নীল সাগরের তীর। তা ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বহু দুর্লভ পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হওয়ায় পর্যটকদের দৃষ্টি সেদিকে কেড়ে নিচ্ছে। দেশের প্রায় সর্বত্রই রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। রয়েছে জাতির কৃতী সন্তানদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। দেশের উত্তরাঞ্চলে অর্থাৎ কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামন থানার ঐতিহাসিক ‘দিল্লির আখড়া’র খবর আমাদের কজন রাখে। অথচ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা পাঠে এ আখড়া সম্পর্কে জানা যায়, সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ২২৬ একর জমি সম্রাট জনৈক ফকিরকে দান করেন এবং এ জমির ওপর সম্রাট একটি উপাসনালয় নির্মাণ করে দেন। পরবর্তীকালে এটাই ‘দিল্লির আখড়া’ নামে পরিচিতি লাভ করে এবং আজ পর্যন্ত স্থানীয় লোকদের কাছে সে নামেই পরিচিত। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে প্রাচীনকালের হিজল গাছ ঘেরা দিল্লির আখড়া এখনও স্থানীয় লোকদের আকর্ষণ করছে। অনুরূপভাবে দেশের প্রায় জেলাতেই রয়েছে দর্শনীয় স্থান, রয়েছে ঐতিহাসিক মর্যাদা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যেমন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই, চট্টগ্রামের ফয়েজ লেইক, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল, কর্ণফুলী নদীর অপূর্ব দৃশ্য, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, মৌলভীবাজারের হাকালুকি ও হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, এম আর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলা, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ স্থল, মাধবকুন্ড, চা বাগান সমূহ ও হামহাম জলপ্রপাত, জাফলং, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের সৌন্দর্যের লীলাভূমি হাওর এলাকা ও চা-বাগান, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, চলনবিলসহ সারা দেশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এসব স্থানে যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
রয়েছে সিলেটের হজরত শাহজালাল, হজরত শাহপরান, হবিগঞ্জে মুফতিয়ে আজম সাইয়্যেদুনা আবুতাহের রহমানপুরী, মুড়ারবন্ধে সৈয়দ নাসিরুদ্দিন সিপাহশালার, আউশপাড়ার খাজা আবুতাহের বোগদাদি, সুলতানশী ও লস্করপুর হাবেলি, চট্টগ্রামের বায়জীদ বোস্তামী ও বাগেরহাটের খান জাহান আলীসহ অসংখ্য পীর দরবেশ ও আওলিয়ার মাজার, সিলেটকে ব্রিটিশদের দখলমুক্ত রাখতে গিয়ে সৈয়দ হাদি ও সৈয়দ মেহদীর মাজার যারা ১৭৮২ সালে আশুরার দিনে ব্রিটিশদের হাতে শহীদ হন। রাঙামাটি দেশের অন্যতম পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান। এখানে আছে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু, কৃষি খামার, শুভলং ঝরনা ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য, পেদা টিংটিং রেস্টুরেন্ট, সাংফাং রেস্টুরেন্ট, চাকমা রাজার বাড়ি, রাজ বনবিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, জেলা প্রশাসকের বাংলো, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের সমাধিসৌধ এবং উপজাতিপাড়া ও জীবনযাত্রার দৃশ্য। কাপ্তাই লেকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শুভলং ঝরনা ও এর আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য কার না মন কাড়ে। বর্ষায় ঝরনাটি পরিপূর্ণ রূপ মেলে ধরে। চারদিকে বিশাল সবুজ পাহাড়ঘেরা এ ঝরনার পানি পতনের দৃশ্য সত্যিই অপরূপ।
পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পর্যটন করপোরেশনকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বহু জায়গা রয়েছে যেখানে কৃত্রিম উপায়ে হ্রদ সৃষ্টি করে তাতে নৌ-বিহার ও মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করা যায়। এসব করতে হলে সরকারিভাবে ভূমি দখল করে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরাসরি পর্যটন করপোরেশনের অধীনে আনা যায়। অথবা নির্বাচিত স্থানের মালিকদের সমবায় সমিতি গঠন করে প্রকল্পের মাধ্যমেও করা যায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থাও করতে হবে। বিশেষ করে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া উন্নয়ন প্রচেষ্টা সফল হয় না। পর্যটন নীতি যদি এই হয় যে, সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাবে, তাহলে দেশে পর্যটন শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ করবে, দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিবছরই অধিক হারে পর্যটক আসতে থাকবে। অবশ্য ইদানীং দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারিভাবে আকর্ষণীয় পর্যটন সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে।
পর্যটন শিল্প শুধু বিদেশিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে এমন নয়। দেশের নাগরিকরাও দেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখতে উদগ্রীব হয়। এ থেকেও পর্যটনের আশাতীত হওয়ার সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হয় যে, আমাদের দেশে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে দেশের সর্বত্র অবাধে ভ্রমণ করা যায়। কিন্তু বর্ষাকালে সর্বত্র যাওয়া যায় না। নৌপথে সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে ভ্রমণকারীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশে সফর করার জন্য বর্তমান সময় অত্যন্ত সুসময়। দেশের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও এটা উপযুক্ত সময়। এ সময় বহু শিক্ষার্থী দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে আগ্রহী হয়।
এ ব্যাপারে পর্যটন কর্তৃপক্ষ যদি দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দানসহ বাসের ব্যবস্থা করেন, তাহলে শীত মৌসুমে বহু ছাত্রছাত্রী ভ্রমণে উৎসাহিত হবে এবং পর্যটনের আয় অনেক বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। আমাদের পর্যটন সম্পর্কে যতটুকু প্রচার চালানো হচ্ছে, শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তা অপ্রতুল বলেই মনে হয়। পর্যটনের প্রতি দেশবাসীকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আরও ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন যা পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মূল ভিত্তি। বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের বিশেষ করে পর্যটন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ