কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে: কমরেড জাফরের স্মরণসভায় বক্তারা

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৫

কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে: কমরেড জাফরের স্মরণসভায় বক্তারা

Manual1 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৯ মে ২০২৫ : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, “চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা থেকে দেশ ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উচ্ছেদ হয়নি। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে না। সংস্কারেরও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। মৌলবাদী শক্তির আস্ফালন দেখা যাচ্ছে। জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছেই। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা আমরা কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেব না।”

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক, গণমানুষের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক আয়োজিত স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) বিকেলে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ কমরেড ডা. ফজলুর রহমান।

Manual3 Ad Code

প্রয়াত সাধারণ সম্পাদকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কমরেড সৈয়দ জাফর আহমদ দৃঢ় ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের গণতন্ত্র ও শোষণমুক্তির আকাঙ্খার বিপরীতে অনেকে এখন অবস্থান নিচ্ছে। গত ১০ মাসে জনজীবনের সংকট দূর হয়নি। দারিদ্র্য, বেকারত্ব বাড়েছে। মানুষের নিরাপত্তাহীনতা কাটছে না। ‘মব’ সন্ত্রাস চলছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার তার এখতিয়ারের বাইরে করিডোর প্রদান, বন্দর লিজ, বিদেশিদের সমরাস্ত্র কারখানা অনুমোদন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূ-রাজনীতিতে আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। জনগণের বিরোধিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। স্বাধীন বিচার বিভাগ, নিরপেক্ষ প্রশাসনের কথা বলা হলেও, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা বেকসুর খালাস পাচ্ছে। কিন্তু জেল পলাতক জঙ্গি গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

স্মরণসভায় কমরেড প্রিন্স আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছে। এমনকি সিপিবি, বাম জোটসহ ৫০টিরও বেশি দল এ বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, মাত্র একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরা বার বার বলছি, বর্তমান সংকট সমাধানে আর বিলম্ব না করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করতে হবে। একইসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শোষণমুক্তির লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

Manual3 Ad Code

স্মরণসভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আদর্শহীনতার বিপরীতে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ছিলেন সততা, আদর্শনিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশের সংকট মোচনে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে কমরেড জাফরের ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে নতুন প্রজন্মের বিপ্লবীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কমরেড জাফরের বিপ্লবী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেই তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।

Manual6 Ad Code

কমরেড সেলিম আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে নানা টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’ বলে হাসিনা গণতন্ত্রের কবর দিয়েছিলেন। এখন বলা হচ্ছে, ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’। উন্নয়নের সঙ্গে যেমন গণতন্ত্রের বিরোধ নেই, সংস্কারের সঙ্গেও তেমনি নির্বাচনের বিরোধ নেই। আমরা প্রকৃত সংস্কার চাই বলেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এরশাদের পতনের পর তিন মাসের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা গেলে, এখন কেন করা যাবে না?

অন্য বক্তারা বলেন, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য কমরেড জাফর জীবন উৎসর্গ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তেল-গ্যাসসহ জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নিপীড়িত ক্ষেতমজুর, চা-শ্রমিক ও ‘শব্দকর’ জনগোষ্ঠীর মুক্তির লড়াইয়ে। পার্টিতে বিলোপবাদীদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর অনুপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে আমরা উপলব্ধি করছি।

স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয় এবং দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে প্রয়াত নেতার শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code