বন্দরের দায়িত্ব বিদেশিদের দিতে ড. ইউনূসের এত আগ্রহ কেন: আনু মুহাম্মদ

প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৫

বন্দরের দায়িত্ব বিদেশিদের দিতে ড. ইউনূসের এত আগ্রহ কেন: আনু মুহাম্মদ

Manual4 Ad Code

বিশেষ প্রতি‌বেদক | ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫ : চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির কাছে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় ডিপি ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর সেরা। শেখ হাসিনাও এই বন্দর ইজারা দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। তার (শেখ হাসিনা) তো একটা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থাকতে পারে, কিন্তু মোহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থটা কী? তিনি কেন এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তা প্রশ্নের দাবি রাখে।

Manual1 Ad Code

শনিবার (২১ জুন ২০২৫) সকাল ১০টায় রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এই সভার আয়োজন করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, হাসিনা সরকার এলএনজি আমদানিনির্ভর দেশ তৈরি করে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে। স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এখন বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সবদিক থেকেই দেখা যাচ্ছে সরকার উল্টোপথে হাঁটছে।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম হতে গেলে নিজেদের জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তারা সক্ষমতা তৈরি করতে পারছে না কেন? বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর না করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ডিপি ওয়ার্ল্ড কীভাবে তাদের সক্ষমতা অর্জন করেছে সেই সম্পর্কে জানতে হবে।

বিশ্বব্যাংক, এডিবি কিংবা আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনার আমলে প্রাণ প্রকৃতি বিনাশকারী ও দেশবিরোধী কী কী ক্ষতিকর চুক্তি হয়েছে তা জাতির সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। ক্ষতিকর চুক্তি বাদ দিতে হবে। ড. ইউনূস কেন সেগুলো উন্মুক্ত করছে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, রামপাল, রূপপুরের মতো বড় ধরনের প্রকল্পের বিষয় কথা বললে একসময় বলা হতো শেখ হাসিনা কখনও দেশের স্বার্থের বাইরে কোনো চুক্তি করেন না। এখন মোহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরেও তার আস্থাভাজনরা তেমনই বলছেন। এটা উদ্বেগজনক। এসব নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তাদের প্রতিহত করতে হবে, এমন মনোভাব দেখা যায় প্রেস সচিবের। মোহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে যেন কেউ প্রশ্ন না তোলে, এমন মনোভাবও অগ্রহণযোগ্য।

Manual2 Ad Code

বিদেশি বিনিয়োগ এলে সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না এ প্রবণতা সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন, কী উদ্দেশ্য বিদেশি বিনিয়োগটি এলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আশীর্বাদ হবে না, অভিশাপ হবে তা দেখতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয় না।

আনু মুহাম্মদ জানান, আগামী ২৭ ও ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ও বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা নিয়ে বামধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় মঞ্চ গঠিত হবে। তারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম লংমার্চ করবেন। এই উদ্যোগ সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি। এটি ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় শেখ হাসিনার আমলে ২০২৩ সালে, সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি) আলোচনার মাধ্যমে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্দর নিয়ে একই নীতি অনুসরণ করছে। শুধু বিদেশি অপারেটর আনলেই দক্ষতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয় না। অবকাঠামো, জনবল ও সুশাসনের ঘাটতি থাকলে তারাও ব্যর্থ হয়।

Manual4 Ad Code

লেখক ও গবেষক ড. মাহা মির্জা বলেন, কৌশলগত খাতে বেসরকারিকরণ টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। বরং আয়বৈষম্য, শ্রমবাজার সংকোচন এবং সামাজিক অসন্তোষ বেড়েছে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম প্রমুখ।

 

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code