ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক সমাবেশ ও জাতীয় সম্মেলন ২৯ জুন

প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৫

ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক সমাবেশ ও জাতীয় সম্মেলন ২৯ জুন

বিশেষ প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৬ জুন ২০২৫ : ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ ও প্রথম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে চা শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি। চা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশ ও সম্মেলন সফল করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি চা-শ্রমিকের অধিকার আদায়ে নিরবচ্ছিন্ন লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ২৯ জুন ২০২৫ সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে  চা-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে  সংগঠনের নতুন নাম, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হবে।

প্রথম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান সবুজ তাঁতি ও সদস্য সচিব কৃষ্ণদাস অলমিক আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, সম্মেলনে আপনার/আপনাদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে বেগবান করবে।

সংহতি ও অতিথি বক্তা –

ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ ও প্রথম জাতীয় সম্মেলনে সংহতি জানিয়ে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিবেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।

চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিনামা –

১) মজুরি: ক) প্রচলিত সব সুযোগ-সুবিধা বহাল রেখে (রেশন, ঘর, চিকিৎসা ইত্যাদিসহ) শ্রমিকদের মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ওভার টাস্ক এর জন্য ওভার টাইম হিসেবে দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে। লিপ পাই (অতিরিক্ত পাতা ভোলার জন্য) কেজি প্রতি ১২ টাকা দিতে হবে। ওজনের হিসেবে কারচুপি বন্ধ করতে হবে। অ্যানালগের পরিবর্তে ডিজিটাল মেশিনে পাতার ওজন করতে হবে এবং শ্রমিকরা যাতে দেখতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। শ্রমিকদের বার্ষিক ১০% চায়ে ইনক্রিয়েন্ট দিতে হবে। ২০২৩ সালে ১ আগষ্ট প্রকাশিত চা-শ্রমিকের স্বার্থ বিরোধী গেজেট বাতিল করতে হবে। খ) শ্রম আইন অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়েটি এবং বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬-এর ২৩৪ ধারা মোতাবেক প্রতিবছর কোম্পানির লভ্যাংশের ৫% শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন, কল্যাণ তহবিল ও অংশগ্রহণ তহবিলে প্রদান করতে হবে। ২০১৬ সালের চুক্তি অনুসারে যত বছর কাজ করেছে, তার মোট বছরের গড়ে দেড় মাসের বেতন একজন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিককে পেনশন হিসেবে দিতে হবে। দুর্ঘটনায় কর্মরত চা-শ্রমিককে তার কর্মজীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
* প্রতি বছর মাসিক মজুরির সমান দুটি উৎসব বোনাস (কর্মে উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে উৎসাহ বোনাস নয়) ও একটি উৎসব বোনাস দিতে হবে। ঘ) চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) ও অর্জিত ছুটি (প্রতি ১৮ দিনে ১দিন) কার্যকর করতে হবে।
২) চা ও রাবার শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ রেশন হিসেবে একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজন অনুসারে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি/গুড, সাবান, চা-পাতা, কেরোসিন প্রদান করতে হবে। শ্রমআইনের ৫৯ ধারা অনুযায়ী পায়খানা নির্মাণ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান এবং কৃষিজমির জন্য রেশন কর্তন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
৩) জমির অধিকার: চা-শ্রমিকদের বসতভিটাসহ ভোগদখলকৃত ভূমির আইনি স্বত্ব দিতে হবে। অব্যবহৃত জমি বেকার চা-শ্রমিক সন্তানদের মাঝে বণ্টন করতে হবে।
৪) শিক্ষা প্রতিটি চা-শ্রমিকের জাতিসত্তা, ভাষা ও সংস্কৃতির স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রতিটি বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে । চা-শ্রমিক সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা নিজেদের ভাষায় প্রদান করতে হবে। প্রতি ভ্যালিতে বিশেষায়িত মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি বিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপন করতে হবে।
৫) স্বাস্থ্য: প্রভিটি বাগানে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ডাক্তারসহ কমিউনিটি ক্লিনিক ও পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাগানে কীটনাশকের ব্যবহারে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বাগানে বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ ও প্রতি ২০ পরিবারে জন্য একটি টিউবওয়েল স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি চা-বাগানে ন্যূনতম একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকতে হবে।
৬) নারী শ্রমিক নারী চা-শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে। প্রতি মাসে মাসিকের সময়কালীন নারী চা-শ্রমিককে ২ (দুই) দিনের সবেতন ছুটি দিতে হবে। প্রতিটি চা-বাগানের কমিউনিটি ক্লিনিকে নারীদের জন্য বিনামূল্যে স্যানেটারি প্যাড প্রদান করতে হবে। প্রতিটি বাগানে প্রসূতি নারীর জন্য উন্নতমানের নিরাপদ ডেলিভারির ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে। প্রতি বর্ষাকালে প্রত্যেক নারী চা-শ্রমিককে একটি রেইনকোট বরাদ্দ দিতে হবে। প্রতি সেকশনে নারী চা-শ্রমিকদের জন্য একটি করে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। বাগানে বাল্য বিয়ে ও নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭) চা-বাগানের কর্মরত বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী শ্রমিককে স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। বেকার চা-শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। চা-বাগানে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে কোটা নির্ধারণ করতে হবে। চা-বাগানের শিক্ষিত নারীকে ষ্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
৮) ঐতিহাসিক মুল্লুকে চলো আন্দোলনের’ শহিদদের স্মরণে ২০ মে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘চা-শ্রমিক দিবস’ পালন ও চা-বাগানে সবেতন ছুটি ঘোষণা করতে হবে। চা-শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চা-শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন এবং তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করতে হবে। চা-বাগানে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত স্পট ও অচিহ্নিত স্পটসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
৯) চা-বাগানভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করতে হবে। চা-শিল্পাঞ্চলভিত্তিক উপজেলা গঠনের সুযোগসমূহ কাজে লাগাতে হবে।
১০) চা-শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী সব কালো আইন বাতিল করতে হবে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। চা-শিল্পে শ্রম আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। চা-শিল্পে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে মজুরি নির্ধারণ করার নিয়ম চালু করতে হবে। অবিলম্বে শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত কার্যালয় স্থাপন করতে হবে। দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনে ৯০ দিনের মধ্যে সব মামলা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভূমির অধিকারের দাবিতে চা শ্রমিক সমাবেশ ও প্রথম জাতীয় সম্মেলন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন –

সবুজ তাঁতি
চেয়ারম্যান

কৃষ্ণদাস অলমিক
সদস্য সচিব
প্রথম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ
01770591452
01736217253
teaworkerstuc@gmail.com
চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
#১ম_জাতীয়_সম্মেলন
#চা_শ্রমিক_ট্রেড_ইউনিয়ন_কেন্দ্
#চা_শ্রমিক_সমাবেশ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ