প্রথিতযশা লেখক ও শিক্ষাবিদ কমরেড যতীন সরকার আর নেই

প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৫

প্রথিতযশা লেখক ও শিক্ষাবিদ কমরেড যতীন সরকার আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক | নেত্রকোনা, ১৩ আগস্ট ২০২৫ : প্রথিতযশা লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার (৮৯) আর নেই।

আজ বুধবার (১৩ আগস্ট ২০২৫) বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে সুমন সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত জুন মাসে ঢাকার একটি হাসপাতালে যতীন সরকারের অস্ত্রোপচার হয়। এর পর থেকে বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি কিডনিসংক্রান্ত জটিলতাসহ বাধ্যর্কজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। দিন কয়েক আগে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড শেখ বাহার মজুমদার জানান, হাসপাতাল থেকে যতীন সরকারের মরদেহ জেলা উদীচী কার্যালয়ে নেওয়া হবে। সেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে। সেখানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে।

যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ছিল।

লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনি ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসরগ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোনায়। তিনি সেখানে শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাড়িতেই থাকতেন। ছেলে সুমন সরকার, মেয়ে সুদীপ্তা সরকারসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন যতীন সরকার।

ছাত্রজীবনে লেখালেখি শুরু হলেও যতীন সরকারের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে, ৫০ বছর বয়সে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের কবি গান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, মানবমন মানব ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, পাকিস্তানের ভূত দর্শন, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান চেতনা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূতভবিষ্যৎ, বিনষ্ট রাজনীতি ও সংস্কৃতি, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, ভাবনার মুক্তবাতায়নসহ অর্ধশত বই। সেই সঙ্গে তিনি সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র নামে তত্ত্বমূলক ত্রৈমাসিক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি।

যতীন সরকারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, নেত্রকোনা উদীচী, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ জেলা শাখা, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

প্রথিতযশা লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড নূর আহমেদ বকুল। এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।

সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শোক

লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্টের প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।