রিভেঞ্জ অব নেছার বলে কথা!

প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৫

রিভেঞ্জ অব নেছার বলে কথা!

সীমা আখতার |

হুমায়ূন ফরীদি এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী মিনুর সংসার ছিল সর্বসাকুল্যে ৪ বছরের। সেই সংসারে ফুটফুটে এক মেয়েরও জন্ম হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৮৪ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাদের। সেই বছরেই হুমায়ূন ফরীদি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করে নতুন সংসার সাজিয়ে বসেন।
এই দৃশ্যটি দূর থেকে দেখার কষ্ট সহ্য
করতে হয় মিনুকে।

সন্দেহ নেই, পৃথিবীর ভয়াবহতম কষ্টগুলোর একটি হলো নিজের প্রিয়জনকে অন্যের হতে দেখা।

পৃথিবী মানুষের পাওনা বুঝিয়ে দিতে পছন্দ করে। যে কষ্ট হুমায়ূন ফরীদি তাঁর প্রথম স্ত্রী মিনুকে দিয়ে এসেছিলেন, সেই একই কষ্ট ফিরে পেতে দুই যুগের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না তাঁর।
২০০৮ সালে ফরীদিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চেয়ে চৌদ্দ বছরের ছোটো বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করে ফেললেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই দৃশ্যটি ফরীদিকে দেখতে হলো দূর থেকে, অনেক বছর আগে যেমনটি দেখেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী মিনু।

বাংলাদেশের কোনো এক জেলায় সংঘটিত হওয়া একটি ঘটনা শুনে শিউরে উঠেছিলাম। বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যা করার সময় সে ছিল মাতাল। এক কোপে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলেছে ছেলে। পুলিশ তদন্তের পর জানা গেল আরেক ভয়ঙ্কর তথ্য। যে বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি অনেক বছর আগে তার নিজের মাকে
খুন করেছিল। প্রকৃতি তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছে কড়ায়-গণ্ডায়। একটুও কৃপণতা করেনি।

হুমায়ূন আহমেদের একটি খুব জনপ্রিয় ছোটোগল্পের নাম ‘পিঁপড়া’। এই গল্পে দেখা যায়-মকবুল নামে এক ধনী গৃহস্থকে সারাক্ষণই পিঁপড়া তাড়া করে। এর থেকে বাঁচার জন্য এহেন কোনো ব্যবস্থা নেই, যা সে করে না। রাতে ঘুমানোর আয়োজনেও আনে বিশেষত্ব। খাটের চার পায়ার নিচে পানির পাত্র রাখার ব্যবস্থা রাখে, যেন পিঁপড়া না ওঠে। কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হয় না। সর্বশেষ এক চিকিৎসকের কাছে সে খুলে বলে তার বৃত্তান্ত। তার বাড়িতে থাকা দুঃসম্পর্কের এক কিশোরী আত্মীয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিল সে। তার লাশে ওঠা পিঁপড়াই প্রথম পিছু নেয়,
মানুষের চূড়ান্ত বিচারের জন্য আল্লাহ পরকালের ব্যবস্থা রেখেছেন। কিন্তু অনেক পাপের শাস্তি তিনি দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। আধুনিক সমাজ যেটাকে ‘Revenge of nature’ বলে থাকে। এটা সত্য, কোনো অংশেই মিথ্যে নয়। আমরা আজ অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দিলে কাল হয়তো অন্য কেউ একই কষ্টটা আমাদের দেবে। পৃথিবীটা এভাবেই ফাংশন করে। কাজেই নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকাটা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।