সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের বিচার দাবীতে লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৫

সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের বিচার দাবীতে লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক | লক্ষ্মীপুর, ১৪ আগস্ট ২০২৫ : দেশব্যাপী সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার বিচার সহ বিভিন্ন দাবীতে লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট ২০২৫) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন ও সমাবেশে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব জেলা শাখার আহ্বায়ক ভাস্কর বসু রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রকে আঘাত করে। দেশে মুক্ত সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের জেলা শাখার সদস্য সচিব ও সাংবাদিক নেতা মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে দেশে মত-প্রকাশের স্বাধীনতা আজ ভয়াবহভাবে সংকুচিত। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবাদিকরা নিরাপদ না থাকলে জনগণের কণ্ঠস্বরও নিরাপদ থাকে না।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবরে সাংবাদিকদের পক্ষে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ এবং টিএ ও ডিএ এবং সম্মানী প্রদানসহ বিভিন্ন দাবীতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লক্ষীপুর জেলা শাখার আহবায়ক ভাস্কর বসু রায় চৌধুরী ও সদস্য সচিব মেহেদী হাসান রাসেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অপর তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে, আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। বোঝাই যাচ্ছে গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও অবস্থান কোথায়! জনস্বার্থ অভিমুখী মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পূর্ণতা পায় না। সরকার ও প্রশাসনের অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়াসহ জনগণের সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে গণমাধ্যমকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হয়।
আসলে গণমাধ্যম হচ্ছে জনগণের সংগ্রামের সহযোদ্ধা, নীতি-আদর্শের যৌথ প্রচারক ও যৌথ আন্দোলনকারী, জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রের পাহারাদার। গণমাধ্যমই সঠিক পথ বাতলে দেয় যাতে সরকার, প্রশাসন ও জনগণ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে। গণমাধ্যম সরকার, প্রশাসন ও জনগণের প্রতিপক্ষ নয়; তবে জনস্বার্থে নজরদারী করবে। কাজেই বলিষ্ট ও শক্তিশালী গণমাধ্যম ছাড়া জনস্বার্থের রাষ্ট্রব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে না।
রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ভ নড়বড়ে হয়ে গেলেও চতুর্থ স্তম্ভ শক্ত থাকলে রাষ্ট্রকে গণমুখী রাখা যায়। আর চতুর্থ স্তম্ভ নড়বড়ে হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, রাষ্ট্র বিপদগ্রস্ত হয়।
গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাংবাদিকরা মাঠপর্যায়ে কাজ করার সময় প্রায়ই নানা ধরনের হুমকি, ভয়ভীতি, হামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সাংবাদিকরা মুক্তভাবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রকাশে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন, যা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।

আর তাই নিম্নলিখিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করে বলা হয়,
১. সাংবাদিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রয়োজনেই সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল সাংবাদিকদের জন্য টিএ ও ডিএ সহ সম্মানী প্রদান করতে হবে। জেলা পর্যায়ে সাংবাদিক তালিকা সংরক্ষণ ও প্রকাশ করা এবং সুরক্ষা মনিটরিং সেল গঠন করে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ।
২. সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হুমকিদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা।
৩. সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের জন্য পুলিশি সহায়তা ও জরুরি হটলাইন চালু করা।
4. মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে সাংবাদিকদের রক্ষায় প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান।
5. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আপনার উদ্যোগ ও সদিচ্ছার মাধ্যমে সাংবাদিকরা নিরাপদ পরিবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং এর ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা আরও সুদৃঢ় হবে।

এর আগে গত শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) সকালে উপজেলা হাজির হাট বাজারে কমলনগর প্রেসক্লাব কার্যালয়ের গলির সামনেও তুহিন হত্যার বিচার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

কমলনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো, ফয়েজের সন্ঞ্চালনায় সভাপতি ইউসুফ আলি মিঠুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কমলনগর উপজেলা সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্ত বারবার এমন ঘটনা ঘটায় আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপরাধের বিচার না হলে সমাজে অশান্তি ছড়িয়ে পড়বে”।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। দেশে ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে, যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। তারা বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে তুহিন হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ