গিরিঙ্গি, কিলিক আর হাঁপানি সাংবাদিকতা: জয়পুরহাট প্রেসক্লাব কি পথ হারাচ্ছে?

প্রকাশিত: ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২৫

গিরিঙ্গি, কিলিক আর হাঁপানি সাংবাদিকতা: জয়পুরহাট প্রেসক্লাব কি পথ হারাচ্ছে?

Manual2 Ad Code

শফিউল বারী রাসেল |

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট এক সময় সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা, নীতিনিষ্ঠতা ও দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্মানিত পেশাটির ওপর যেনো নেমে এসেছে ‘গিরিঙ্গি’, ‘কিলিক’ এবং ‘সাংবাদিক গড়ার ঠিকাদার’ নামক অদ্ভুত এক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ শুধু ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ এবং সাংবাদিকতার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে প্রতিনিয়ত।

Manual5 Ad Code

জয়পুরহাট প্রেসক্লাব—যেখানে একসময় চলতো নীতি নির্ভর সাংবাদিকতার আলোচনা, প্রশিক্ষণ ও দায়িত্বশীল সংবাদ চর্চা—সেই ক্লাব আজ স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘গিরিঙ্গি ভবন’ বা ‘কিলিক ভবন’ নামে। কেনো এমন তকমা? কারণ একটাই—এখানে এখন জ্ঞান চর্চার চেয়ে বেশি হয় পরচর্চা, সমালোচনার নামে চরিত্র হনন, সাংবাদিকতার আড়ালে ‘চেয়ার দখল’ ও দল ভারী করার অপচেষ্টা।

এই প্রেসক্লাবটিকে ঘিরে সম্প্রতি নতুন এক ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হচ্ছে—জুলাই পরবর্তীকালে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের নামে একাংশের অপতৎপরতা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় সত্যিকার সাংবাদিকদের মতামত উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে, আর উঠে আসছে বিতর্কিত ও অযোগ্য নাম।

একদিকে এলোপাতাড়ি অনিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়ার ছড়াছড়ি, অন্যদিকে টিভি রিপোর্টিংয়ে মান ধরে রাখা সাংবাদিকদের সংখ্যা দিনকে দিন কমে আসছে। কিছু কিছু প্রতিবেদক এখনও পেশাগত সততা নিয়ে কাজ করছেন, তবে সংখ্যায় তারা নগণ্য। সংবাদ কাভার করতে গিয়ে ‘হাঁপাতে হাঁপাতে’ লাইভ করা, তথ্যের চেয়ে গলা চড়া করে সংবাদ পরিবেশন করাকে এখন যেনো সাংবাদিকতা বলে মনে করছে একশ্রেণির নবীন সাংবাদিক।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে—আমরা সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণে কী শিখেছিলাম? আমাদের শেখানো হয়েছিল, হেডলাইন হবে সংবাদের আত্মা, যার মধ্যে পুরো সংবাদের সারাংশ এক কথায় উঠে আসবে। রিপোর্টে থাকবে ভারসাম্য, নিরপেক্ষতা ও জনস্বার্থ। কিন্তু এখন কী দেখছি? হেডলাইনে নেই সংক্ষিপ্ততা, রিপোর্টে নেই গভীরতা, বরং আছে পক্ষপাত, বানোয়াট মন্তব্য আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চিত্র নির্মাণ।

তথাকথিত ‘মিডিয়া হাউজ’—যাদের নেই কোনো সম্পাদকীয় নীতি, নেই গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইনানুগ নিবন্ধন, নেই দায়বদ্ধতা। তাদের হাত ধরেই জেলা জুড়ে চলছে অপ-সাংবাদিকতা। আর এই পথ খুলে দিয়েছে সাংবাদিক নামের এক কুখ্যাত ব্যক্তি বা সাংবাদিক গড়ার ঠিকাদার। তার মদদেই সাংবাদিকতার নামে একদল কাগুজে বাঘ, যারা প্রেসক্লাব দখল, পদ-পদবী ভাগ-বাটোয়ারা আর সামাজিক মিডিয়ায় ‘কিলিক’ বাড়াতে ব্যস্ত।

সাংবাদিকতা কি তবে গিরিঙ্গি আর কিলিকবাজিরই অপর নাম হয়ে দাঁড়াবে? এই প্রশ্নটি আজ শুধু জয়পুরহাটের নয়, সারাদেশের সাংবাদিকতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এক সতর্কবার্তা।

Manual7 Ad Code

প্রেসক্লাবের দায়িত্বশীলদের উচিত এখনই এই নৈতিক পতনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া। নয়তো একদিন ‘হাঁপানি সাংবাদিকতা’ আমাদের সাংবাদিকতা চর্চার শেষ নিঃশ্বাস কেড়ে নেবে।

প্রকৃত সাংবাদিকতা ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন—

১. প্রেসক্লাব ও সংগঠনসমূহে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান;

২. অনিবন্ধিত ও অবৈধ মিডিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ;

৩. নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিত করা;

৪. সাংবাদিকদের তালিকা যাচাই এবং ‘সাংবাদিক কার্ড বাণিজ্য’ বন্ধ করা।

জয়পুরহাটের গৌরবময় সাংবাদিকতা ঐতিহ্য যেনো ধুলিসাৎ না হয়, সেই প্রত্যাশায়…

সাংবাদিকতা হোক সত্য, সাহস আর সততার!

লেখক: শফিউল বারী রাসেল, (কবি, গীতিকার, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক)

Manual5 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code