সমগ্র বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল এক স্লোগানে!

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৫

সমগ্র বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল এক স্লোগানে!

Manual8 Ad Code

আলফ্রেড নোবেল |

৪৮ ঘন্টা নানা নাটকীয়তার পর ১২ ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল জামায়াত নেতা কসাই কাদের মোল্লার।

‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিতে তৎকালীন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, এমনকি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে ভয়ভীতি দেখিয়েছিলো। এই সেই কুখ্যাত কাদের মোল্লা যিনি ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, “বাংলাদেশ হয়েছে বলেই অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে।” এতেই স্পষ্ট কাদের মোল্লা দেশবিরোধী পাকিস্তানের এজেন্ট রাজাকার ছিলেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই কুখ্যাত খুনিকে ঘৃণা করে যাবে।

Manual7 Ad Code

রাজধানীর পল্লবী এলাকায় গণহত্যা, কবি মেহেরুন্নেসা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক তালেব হত্যা, কেরাণীগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খান বাড়ি হত্যাকাণ্ড, মিরপুরের হযরত আলী পরিবারের সকল সদস্যকে গণহত্যা, এছাড়াও লুটতরাজ, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞের অসংখ্য ফাইল বন্দী ঢাকার কুখ্যাত খুনি ও ধর্ষক রাজাকার কসাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানীদের প্রতাত্মা কসাই কাদের ছিলেন ঢাকা শহরের ত্রাস। মানুষের চেহারায় এই হিংস্র পশুর বিচার করতে রাষ্ট্রের ৪২ বছর সময় লেগেছিল। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছিল।

১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী নরপশুদের “অপারেশন সার্চলাইট”-এর ঠিক দুইদিন পর পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকার কাদের মোল্লার নেতৃত্বে কবি মেহেরুন্নেসা, তার দুই ভাই ও তার মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল কবি মেহেরুন্নেসার পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে শোনা শেষ ভাষণ। কসাই কাদেরের নেতৃত্বে কবি মেহেরুন্নেসার পরিবারের ৪ সদস্যকে জবাই করে হত্যা করে মিরপুরের জামায়াত নেতা কসাই কাদের মোল্লা।

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ আজকের ইসলামী ছাত্রশিবির ও তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কসাই কাদের মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলীর বাড়িতে গিয়ে হযরত আলীর দুই মেয়েকে হত্যা ও এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। হত্যা করা হয় তাদের পরিবারের দুই বছরের শিশুটিকে পর্যন্ত।

হযরত আলীর অপরাধ ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকায় ভোট দিয়েছেন। পাকিস্তানীদের বন্দুকের সামনে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে নৌকার পোস্টার লাগিয়েছেন। নিহত হযরত আলীর মেয়ে মোমেনার ভাষ্যমতে, “আব্বা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসে এবং বলতে থাকে – কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে। আক্তার গুন্ডা , বিহারীরা আর পাকিস্তান বাহিনীও তাদের সাথে দৌড়াইয়া আসছিল। আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগিয়ে দেয়।” তখনই কসাই কাদের মোল্লা চিৎকার করে উঠে , “এই হারামীর বাচ্চা দরজা গোল, বোম মার দেঙ্গা।” শেষ রক্ষা হয়নি হযরত আলীর পরিবারের।মোমেনার মাকে কসাই কাদের জবাই করে। চাপাতি দিয়ে বোন খাদিজা ও তাসলিমাকেও জবাই করে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা কসাই কাদের মোল্লা। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে মোমেনা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েছিলেন তিন বছর।

কসাই কাদের মোল্লার অপরাধ এখানেই শেষ নয়। মিরপুরের পল্লবীতে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব মুক্তিযুদ্ধের জন্য ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সেদিন পল্লবকে গাছে ঝুলিয়ে আঙ্গুল কেটে হত্যা করে কাদের মোল্লা। তার সাথে সেদিন হত্যা করা হয় আরো সাতজনকে। এছাড়াও মিরপুর দশ নাম্বার থেকে সাংবাদিক আবু তালেবকে কাদের মোল্লার জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ শে নভেম্বর কাদের মোল্লার নেতৃত্বে কেরাণীগঞ্জের ঘটারচর ও খানবাড়ি গ্রামে হামলা করে ৪২ জনকে হত্যা ও গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ফজরের নামাজের সময় পাকিস্তানি হেলিকপ্টার যখন তুরাগ নদীর পাড়ে তখন কাদের মোল্লা সহ পঞ্চাশ জন পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ে আলকদী গ্রাম ঘিরে ফেলে। সেদিন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে আলকদী গ্রামের ৩৪৪ জন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপরও যারা এই দেশে কসাই কাদেরের ছবি নিয়ে “জুলাই ঘোষণাপত্র” দিয়েছেন তাদের পতন ও ধ্বংস হবে বড় ভয়াবহ।

Manual2 Ad Code

টিএসসিতে যেসব মানসিক রোগী কসাই কাদের সহ রাজাকার জামায়াত নেতাদের ছবি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে তাদের পরিণতি কত ভয়াবহ হবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। এই বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো বাংলাদেশ, রাজাকারের আন্ডা বাচ্চাদের নয়। আজকে যারা কসাই কাদেরের জন্য ভি চিহ্ন দেখাচ্ছে তাদের পরিণতিও হবে কসাই কাদেরের মতো।

ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ার পরও যখন আন্তর্জাতিক শক্তির চাপে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তখন খুশিতে রাষ্ট্রের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাদের মোল্লা “ভি” মানে বিজয়ের চিহ্ন দেখান। তখনি সমগ্র বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। জন্ম হয়েছিল লক্ষ কোটি তরুণের স্বপ্নের “শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ”।

সমগ্র বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল এক স্লোগানে। ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, কসাই কাদেরের ফাঁসি চাই। ‘ক’ তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।

Manual2 Ad Code

সত্য সবসময় সুন্দর।

Manual1 Ad Code

#
আলফ্রেড নোবেল

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code