সিলেট ২৫শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা | ২২ অক্টোবর ২০২৫ : কৃষক আন্দোলনের কিংবদন্তি, কমিউনিস্ট রাজনীতির পরিচ্ছন্ন ও নিবেদিতশ্রেণীর সংগ্রামী নেতা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সক্রিয় ব্যক্তিত্ব কমরেড আমিনুল ইসলাম গোলাপ আর নেই।
বুধবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর ২টার দিকে ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৯ বছর।
অনন্য ও ত্যাগী নেতৃত্ব
জনগণের সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে দীর্ঘ জীবনের বৈশিষ্ট্য বহন করা এই নেতাকে কয়েক দশক ধরে শ্রমজীবী, কৃষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘদিন রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ১৯ অক্টোবর পেটব্যথা নিয়ে রংপুরের এক বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হন; সেখানে অবস্থার অবনতি হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলেও চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ বর্তমানে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের হিমাগারে রাখা আছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) গাইবান্ধায় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
মৃত্যুর কারণ ও চিকিৎসা পরিস্থিতি
পরিবার ও চিকিৎসাসংক্রান্ত সূত্র বলছে, কমরেড গোলাপ বহু বছর ধরে ব্লাড সুগার (ডায়াবেটিস), উচ্চ রক্তচাপ ও প্যানক্রিয়াস ইনফেকশনসহ বহুগুণে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯ অক্টোবর পেটব্যথা নিয়ে রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হন; পরে তার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ঢাকায় স্থানান্তরের পর চিকিৎসা শুরুর আগেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসা দল এবং পরিবার সংশ্লিষ্টরা পরবর্তী আইনি ও ধর্মীয় রীতি মেনে দ্রুত মরদেহ হস্তান্তর, দাফন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
রাজনৈতিক সংগ্রাম ও সামাজিক ভূমিকা —
আমিনুল ইসলাম গোলাপ দেশের বামপন্থী রাজনীতি ও কৃষক আন্দোলনের একজন সুপরিচিত নেতা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবুরোর সদস্য ছিলেন এবং জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি হিসেবে কৃষক অধিকার, জমিসংকট ও কৃষি নীতিনির্ধারণ নিয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। একই সঙ্গে তিনি গাইবান্ধা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার কার্যকরী সভাপতি ছিলেন — ছাত্রজীবন থেকেই সাংগঠনিক রাজনীতিতে সক্রিয়, পরবর্তীতে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে শ্রমিক-পরিশ্রমী মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
সহকর্মী ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকপ্রকাশ
কমরেড আমিনুল ইসলাম গোলাপের আকস্মিক বিসময়ের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢোকেরে শুরু করে দেশব্যাপী, বিশেষত গাইবান্ধা শহরজুড়ে শোক ছেয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড নূর আহমেদ বকুল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সন্ধ্যার পরে তাঁর মরদেহ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে আনা হলে কেন্দ্রীয় কমিটি ও গণসংগঠনগুলো ফুলেল শ্রদ্ধা ও লাল সালাম জানান। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে প্রতিনিধিদলও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও আরপি নিউজের সম্পাদক, কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে তার মৃত্যুজনিত শূন্যতা পূরণ করা সহজ হবে না— বহু সহকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বেরা সামাজিকভাবে তাঁর অসম্ভব অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
পারিবারিক ও জানাজা-দাফন সংক্রান্ত তথ্য
পারিবারিক সূত্র জানায়, কমরেড গোলাপের মরদেহ বর্তমানে ঢাকা শহরের বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের হিমাগারে রাখা রয়েছে। পারিবারিক ও পার্টি সমন্বয়ে শুক্রবার গাইবান্ধায় তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হবে। জানাজা ও কবরদাফনের সঠিক সময় ও স্থান সম্পর্কে পরবর্তী নোটিশ পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হবে—তবে স্থানীয় গাইবান্ধা প্রশাসন ও পার্টি সংগঠন দাফন-অনুষ্ঠানকে শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সমন্বয় করছে।
অবদান ও স্মৃতি — আন্দোলন, সংস্কৃতি ও সংগ্রাম
কমরেড গোলাপের রাজনৈতিক পরিচয় কেবল একটি পদ বা সংগঠনের শিরোনামই ছিল না; তিনি এমন এক কাঁধ ছিলেন যেখান থেকে বহু তরুণ ও কৃষক-শ্রমিক নেতা উত্থান করেছে। তিনি:
কৃষক অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে আন্দোলন সংগঠনে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন; জমির অধিকার, ন্যায্য ফসলমূল্য ও কৃষক নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি দীর্ঘমেয়াদী কাজ করেছেন।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন ও পরিচালনায় অবদান রেখেছেন, গান-নাট্য-চর্চার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন।
রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংগঠনকে গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রজীবন থেকে মানুষের মনে রাজনৈতিক অবিচলতা রোপণ করেছেন—এই ধারাবাহিকতা ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম শক্তি।
তাঁর অধীনে কাজ করা বহু সহকর্মী ও ছাত্র-নেতা এখনো তাঁর বিচার্যতা, ধৈর্য ও সংগঠনিক দক্ষতা স্মরণ করে তাদের কর্মজীবনকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।
দেশের বাম-সমাজে শূন্যতা ও আগামীকাল
কমরেড গোলাপের মৃত্যু বামপন্থী ও কৃষক আন্দোলনের জন্য একটি যুগান্তকারী ক্ষতি। তিনি ছিলেন ঐতিহ্যগত অনুশাসন ও নীতির ধারক—যারা মাঠে আন্দোলনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও সমাজতাত্ত্বিক কাজকে যুক্ত করতে পারতেন। তাঁর অনুপস্থিতি বাম এজেন্ডা, বিশেষত গ্রামীণ কৃষি ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক উদ্যোগে ভোক্ত শূন্যতা তৈরি করবে; তবে পর্যায়ক্রমে নতুন নেতৃত্বের খোঁজ ও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শক্তিবৃদ্ধিই সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে। ভবিষ্যতে তাঁর সংগ্রামী শিক্ষাগুলি নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত করা হলে বাংলাদেশে কৃষক ও শ্রমিক দাবির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে—এটাই সহকর্মী ও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা।
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের এক সারথি’র বিদায়
কমরেড আমিনুল ইসলাম গোলাপ ছিলেন এক শিল্পীশৈলীর সংগ্রামী নেতা—রাজনীতির মাঠে তীক্ষ্ণ চেতনায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কোমল স্পর্শে এবং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে অটল। তাঁর প্রয়াণে দেশের বাম, কৃষক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা অনুভব্য। বাংলাদেশে শ্রমিক-কৃষক-সংস্কৃতির এক দীর্ঘ অধ্যায় আজ সমাপ্তি ঘটাল — তার স্মৃতি ও কর্মশক্তি যে অনেকেই আগ্রহ করে স্মরণ রাখবেন, তা নিশ্চিত।

সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি