সিলেট ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৫
মৎস্য শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচয় নিশ্চিত করা এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ : মৎস্যজীবী শ্রমিকদের আইনি অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এফইএস-এর সহায়তায় বিলস এর উদ্যোগে রাজধানীতে আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে বক্তারা বলেন, সারাদেশের আনুমানিক এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষ মৎস্যখাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত এবং চৌদ্দ লক্ষ মানুষের জীবনজীবিকা সরাসরি মৎস্যখাত নির্ভর হলেও শ্রমিকদের আইনগত সুরক্ষা ও জীবনরক্ষা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল এবং তাদের জন্য নেই সামাজিক নিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত কর্মসূচি।
তারা মন্তব্য করেন, শ্রম আইনে শুধুমাত্র ফিশিং ট্রলার ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তবে দেশের অন্য সকল মৎস্য শ্রমিক আইনগত সুরক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। এ ছাড়াও চিংড়ি এবং ট্রলার ইন্ডাস্ট্রি’র বাইরে কোন মজুরী কাঠামো নেই।
বক্তারা মৎস্য শ্রমিকদের জন্য আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা বিশেষত সকল শ্রমিকের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি, পরিবারগুলোর সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম চালু করা, শ্রমিকদের জীবনরক্ষা তথা পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ এবং মৎস্য শ্রমিকদের জীবিকার অবলম্বন রক্ষায় আইনগত বিধান ও প্রশাসনিক নির্দেশনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর ২০২৫) দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এই জাতীয় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিলস উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও জাতীয় মৎস্য শ্রমিক অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক নইমুল আহসান জুয়েল এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল ও সুপারিশ তুলে ধরেন বিলস উপপরিচালক এডভোকেট নজরুল ইসলাম।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিলস নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফন্ট (এএলএফ) সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বিলস নির্বাহী পরিষদ সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরী, সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম নাসিম, শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ আব্দুল তারিক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন সহ জাতীয় মৎস্য শ্রমিক অধিকার ফোরামের সদস্যবৃন্দ।
বক্তারা উল্লেখ করেন, সিংহভাগ মৎস্যশ্রমিকই শ্রম আইন ও শ্রম পরিদর্শনের বাইরে। মৎস্য শ্রমিকদের কর্মে নিয়োগ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণসহ কর্মপরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রম আইনের বিধিবিধান অনুসরণ করা হয় না। মজুরি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সকল শ্রমিকের জন্য নির্ধারিত হয়নি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নেই বললেই চলে। সাধারণভাবে শ্রমিকরা দাদন ও ঋণের জালে আবদ্ধ। কর্মক্ষেত্রে জীবনরক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে ঝড়, জলোচ্ছাস কিংবা জলদস্যুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা দুর্বল। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় প্রদত্ত সরকারি সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যায় না। ফলে শ্রমিকরা জীবনযাপনের উপযোগী অর্থ আয় করতে পারেন না। সাগরে সিগনাল সিস্টেম আধুনিক নয় যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সংলাপে শ্রম অধিকার উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, দেশের সংবিধান, শ্রম নীতি ও কর্মসংস্থান নীতিসহ অন্যান্য নীতিমালা, আইএলও কনভেনশন নং ১৮৮ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কনভেনশনসমূহের নির্দেশনা বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচয় নিশ্চিত করা, শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা, সকল শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা চালু করা, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
এই সংলাপের লক্ষ্য ছিল মৎস্যজীবীদের আইনি অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালার সংক্ষিপ্তসারের ফলাফল এবং সুপারিশগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের অবহিত করা এবং মতামত সংগ্রহ করা, ঐকমত্য তৈরি করা এবং বাংলাদেশে মৎস্যজীবীদের আইনি অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত সংস্কারের পক্ষে সমর্থন তৈরী করা।

সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি