নয় রানী ছিল ফেরাউনের!

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২০

নয় রানী ছিল ফেরাউনের!

Manual8 Ad Code

ফজলুল বারী, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া), ১৬ মে ২০২০ : রামসিস টু তথা ফেরাউন নিয়ে যেহেতু মানুষের আগ্রহ বেশি তাই তাকে নিয়ে গবেষনাও বেশি। যদিও এসব গবেষনার কতটা সত্য কতটা মিথ সে নিয়েও বিতর্ক আছে। ইসলামের ইতিহাসের ফেরাউন একজন অত্যাচারী রাজা।

Manual8 Ad Code

আর রামসিস টু’র ইতিহাস একজন প্রজাবান্ধব শাসকের। যিনি ৯১ বছর বেঁচেছিলেন। ৬৬ বছর ধরে রাজ্য চালিয়েছেন। তাই প্রজাদের অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন এই রাজা বুঝি আর কোন দিন মরবেননা!
প্রজাদের অনেকে বিশ্বাস করতেন এই রাজার সঙ্গে দেবতাদের সম্পর্ক আছে। সে কারনে তাদের অনেকে চাইতেন রাজা বেঁচে থাকুন দীর্ঘদিন। এতে করে তারা রোগবালাইর বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যাবেন। তাদের ফসল ভালো হবে।
অথবা এমনওতো হতে পারে প্রজাদের এভাবে বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছিল। আরেকটি ধারনা দেয়া হচ্ছিল ফেরাউনের দীর্ঘ জীবন পাবার কারন তার অনেকগুলো বিয়ে এবং সন্তানলাভ করা!
সন্তানদের বরাত অথবা সৌভাগ্যও রাজার দীর্ঘজীবন পাবার কারন বলা হতো! রাজাদের অনেকগুলো বিয়ে করা জায়েজ অথবা এমনটি শুধু তাদেরই অধিকার, এ ধরনের একটি ধারনা প্রচলিত ছিল ফেরাউন সাম্রাজ্যে।
বলা হয় তার স্ত্রী তথা রানী ছিলেন নয় জন। এই সংখ্যাটি কোন কোন গবেষনায় সাত বলা হয়েছে। নয় রানী মধ্যে ফেরাউনের তিন মেয়েও ছিল! যাদের ফেরাউন বিয়ে করেছিলেন!
কারন ফারাও রাজারা নিজস্ব বংশের বাইরে বিয়ে করতে পারতেননা। ইসলামের ইতিহাসে অবশ্য ফেরাউনের একজন মাত্র স্ত্রীর উল্লেখ করা আছে। তার নাম আছিয়া। আছিয়া চরিত্রটি কষ্ট-সহিষ্ণু, মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন এক নারীর।
দ্বিতীয় রামসিসের নিজের মেয়েদের বিয়ে করা নিয়েও ঐতিহাসিকরা দ্বিধাবিভক্ত। যারা ফেরাউন বা রামসিস টু চরিত্রকে জনপ্রিয় বোদ্ধা হিসাবে বিবেচনা করেন তারা এ তথ্যটির সঙ্গে একমত নন।
আরেক পক্ষের মত যেহেতু ফারাওরা বংশের বাইরে বিয়ে করতে বা বিয়ে দিতে পারতোনা তাই মেয়েদেরও তাকে বিয়ে করতে হয়েছে। সেই সময়ে এটি স্বাভাবিক ছিল।
ফেরাউনের স্ত্রী হেনুতমায়ার তার মেয়ে না বোন ছিলেন তা নিয়েও ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত হতে পারেননি। বলা হয় মৃত্যুর সময় তার সন্তান সংখ্যা ছিল একশ’র বেশি! এরজন্যে শুধু রাজ্যশাসন নয়, সংসার নিয়েও তাকে অনেক সময় দিতে হয়েছে।
ফারাও রাজাদের অনেকে তখন গুপ্তহত্যার শিকার হতেন। কিন্তু ফেরাউন দীর্ঘজীবন পাওয়ায় তার আমলের নানা অর্জন-স্মৃতি বেশি। এরজন্যে বলা হয় তার নানা অর্জনের প্রশংসা নিতে চায় অনেক মিশরীয়।
দেশের বাইরে গিয়ে নিজেদের তারা ফেরাউনের বংশধর বলে পরিচয় দিতেও পছন্দ করেন!
এখন ফেরাউনের যত মূর্তি পাওয়া যায় এর বেশিরভাগ তার জীবিত অবস্থায় বানানো। এরজন্যে শুধু রাজার মূর্তি বা ভাষ্কর্য বানানোর জন্যে বিশেষ কিছু শিল্পী তার ছিলো মনে করা হয়।
দীর্ঘ জীবন পাওয়ায় মৃত্যুর পর তার মমি কিভাবে তৈরি করা হবে, মমি কোথায় সংরক্ষন করা হবে এসব ধারনাও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন। তার মমি কেভিসেভেন নামের এক সমাধিতে প্রথম রাখা হয়।
রত্মরাজি ডাকাতির লোভে ডাকাতরা মমিটি সেখান থেকে টিটিথ্রিটুয়েন্টি টু নামের একটি সমাধিতে নিয়ে রেখেছিল। এসব ঘটনা রামসিস টু’র মমির গায়ে জড়ানো কাপড়ে হায়ারোগ্লিফিক্স লিপিতে লেখা ছিল।
ফ্রান্সে যখন তার মমি নেয়া হয় সেখানকার রাসায়নিক পরীক্ষায় বলা হয় শেষ বয়সে আরথ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন ফেরাউন। এরসঙ্গে দাঁতের সংক্রমনে তার মৃত্যু হয়। এই তথ্যটি ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ইসলামের ইতিহাসের ফেরাউনের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার রাসায়নিক পরীক্ষায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে সেটিও লেখা হয়েছে কোন কোন ইসলামী সাহিত্যে।
ফেরাউনের মমির ফরসেনিক পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত পিয়ারে ফার্নাড সিকাল্ডি তার রিপোর্টে মৃত্যুর কারন সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখেছেন। এর বিরোধিতা করে কোন কোন ইসলামী লেখক লিখেছেন ফেরাউনের ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ করতে মমিটি ফ্রান্সে নেয়া হয়েছিল।
কায়রো জাদুঘরে রাখা ফেরাউনের মমিটি ১৮৯৮ সালে এক পিরামিডের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। মৃত রাজাকে পরবর্তী রাজারা এভাবে মমি করে পিরামিডের ভিতর রেখে সংরক্ষন করতেন।
নোনা মাছ যেমন লবন দিয়ে সংরক্ষন করা হয় সব মমির মত ফেরাউনের মমিও ন্যাট্রন লবন দিয়ে শুকানো হয়েছিল। পিরামড স্থাপত্যকলার মতো সেই যুগে সেই কালে মমি শিল্পীদের রাসায়নিক বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে এখনও চলছে গবেষনা।
ইসলামী সাহিত্যে আছে ফেরাউনের লাশ পানির নীচে ছিল ৩১৩৫ বছর। যেটি ১৮৮১ সালে উদ্ধার হয়। আরেক মত দ্বিতীয় রামসিস মারা যাবার পর তার মমি ভ্যালি অব দ্য কিংস নামের একটি সমাধিতে রাখা হয়।
পরে সেটি স্থানান্তরিত করা হয় পিরামিডের ভিতর। এই ফারাও রাজারা মিশরে নগর সভ্যতা গড়ে তুলেছিল খ্রিস্টের জন্মেরও ৫ হাজার বছর আগে। নীলনদকে কেন্দ্র করে এই নগর সভ্যতা গড়ে ওঠায় গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান নাম দিয়েছিলেন।
প্রাক-রাজবংশীয় যুগে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল মিশর। এগুলোকে নাম দেয়া হয় নোম। পাহাড়ে ওপরে নীচে তখন পৃথক রাজার শাসন চলতো। মেনেস নামের এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি নগর রাষ্ট্র গড়েন।
মেস্ফিস হয় এর রাজধানী। প্রাচীন এই শহরটি দক্ষিন মিশরে। এভাবে মিশরের রাজবংশ এবং সভ্যতার সূচনা। ফারাও রাজাদের মাধ্যমে পরে এই সভ্যতার সংঘবদ্ধ ধর্মীয় ও প্রশাসনিক বিকাশ ঘটে।
ফারাওরা নিজেদের সূর্যের বংশধর মনে করতো। নিজেদের দেবতা মনে করায় তারা বংশের বাইরের কাউকে বিয়ে করতোনা। ভাইবোনদের মধ্যেও তাদের বিয়ে হতো। দীর্ঘজীবন আর দীর্ঘ রাজত্ব পাওয়ায় দ্বিতীয় রামসিসকে তাই নিজের মেয়েদেরও বিয়ে করতে হয়েছে।
ফারাওরা বিশ্বাস করতো মৃত্যুর পর তাদের আত্মা দেবতা হরুসের সঙ্গে মিশে যাবে। এরজন্যে তারা বিশ্বাস করতো মৃত্যুর পরও তাদের আরেকটি জীবন আছে। সেই জীবন যাতে ফিরে এসে তাদেরকে পায় সে জন্যে বানানো হতো মমি।
সেই মমির ভিতর ফিরে আসা জীবনের ভোগ বিলাসের চিন্তার কথা ভেবেই পিরামিডের ভিতরের সমাধিক্ষেত্রে রাখা হতো সমস্ত সরঞ্জাম। মৃতদেহকে পচন থেকে রক্ষার জন্যে বানানো মমি স্বর্নালংকারে মুড়ে রাখা হতো শবাধারে।
এমন সব মমি আবিষ্কারের সঙ্গে এসব রত্মরাজি, শবাধার, পিরামিড বৃত্তান্তও ইতিহাসে উঠে এসেছে।

Manual4 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code