বুদ্ধিবৃত্তির বলয়ের বাইরেও নিজেকে বিস্তৃত করেছিলেন আনিস স্যার

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২০

বুদ্ধিবৃত্তির বলয়ের বাইরেও নিজেকে বিস্তৃত করেছিলেন আনিস স্যার

Manual1 Ad Code

রাশেদ খান মেনন, ১৭ মে ২০২০ : আনিস স্যার চলে গেলেন। আনিস স্যার আমার সাক্ষাৎ শিক্ষক ছিলেন না। কিন্তু তিনি আমাদের সবার শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষক ছিলেন মুক্তবুদ্ধি চর্চার। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার। শিক্ষক ছিলেন বাঙালি জাতীয়তা, বাংলা ভাষা প্রীতির ও সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসার। আরও অনেক কিছু, যা কিছু ভালো, যা কিছু আঁধার কাটা আলো, তার সবকিছুর।

আমাদের ছাত্রজীবনে এবং পরবর্তী জীবনেও বেশ কিছু অসাধারণ শিক্ষক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য পাওয়ার, তাঁদের স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে তাঁরা তাঁদের বলয়ের মধ্যেই অসাধারণ ছিলেন। আনিস স্যার সেই বলয়ের বাইরে নিজেকে বিস্তৃত করেছেন সর্বক্ষেত্রে। ছাত্রজীবনে ভাষা আন্দোলনের সংগঠনে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ করেছেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সময়েই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করেছেন এ দেশের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের। নিজে যুক্ত হয়েছেন প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে। বাংলাদেশে ফিরে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান বাহাত্তরের সংবিধানের ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষান্তরে। তাঁর সেই বাংলাই সংবিধানে প্রাধান্য পেয়েছে। তেমনি তিনি যুক্ত ছিলেন কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনে।

বাংলা ভাষার প্রশ্নে যেমন, তেমনি শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ ও সাবলীল বিচরণ, তাঁর বিদগ্ধ মনন দেশের মধ্যে যেমন, দেশের বাইরেও তেমনি তাঁর জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘স্বাধীনতা পদকে’ তিনি যেমন ভূষিত হয়েছেন, তেমনি ভারত সরকার তাঁকে ভূষিত করেছে ‘পদ্মভূষণ’-এ। দেশ-বিদেশে আরও কত সম্মাননা পেয়েছেন, তার তালিকা বেশ দীর্ঘ হবে।

Manual3 Ad Code

তবে তিনি এসব সম্মাননায় ভারাক্রান্ত হননি। বরং নির্মোহভাবে জীবনকে উপলব্ধিতে নিয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে দরকারি কথাগুলো সংক্ষিপ্ত অথচ সাবলীলভাবে উচ্চারণ করেছেন। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার যে প্রশ্নগুলো আমাদের রাজনীতিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, কৌশলের নামে যেখানে আত্মসমর্পণ, সমঝোতার নিদর্শন দেখেছেন, সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় তাঁর কথা উচ্চারণ করেছেন। জাতিকে সাবধান করেছেন, শাসকসহ সব রাজনীতিক, সমাজপতিকে সাবধান করেছেন।

Manual5 Ad Code

আনিস স্যার কেবল দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও শান্তি ও প্রগতির বাণী নিয়ে সাবলীল ছিল তাঁর পদচারণ। যৌবনে সাম্যবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সেই বোধকে লালন করেছেন জীবনভর। ছিলেন আফ্রো-এশীয় পিপলস সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সভাপতি। সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পরও আশা ছাড়েননি এই আন্তর্জাতিক মৈত্রীর। শান্তি আন্দোলনেও ছিলেন অগ্রণী।

Manual3 Ad Code

আনিস স্যারের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান মুক্তবুদ্ধির চর্চা। এখানে তিনি কোনো বেড়ার মধ্যে আটকে থাকেননি। নিজে যেমন উন্মুক্ত ব্যক্তি ছিলেন, তেমনি উন্মুক্ত ছিল তাঁর চিন্তাধারা। মানুষের জন্য মানুষের প্রয়োজনে। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর পথের সারথি হিসেবে।

Manual5 Ad Code

স্যার নেই। আমরা অভিভাবকহীন হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, অভিভাবকের গাম্ভীর্য নয়, ভালোবাসায় আপন করেছেন সবাইকে, দেশকে, বিশ্বকে।
শান্তিতে ঘুমান স্যার। জাতি জেগে থেকে আপনাকে স্মরণ করবে।

রাশেদ খান মেনন এমপি
সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

সভাপতি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code