শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃবৃন্দের সাথে অপরাজিতাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২১

শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃবৃন্দের সাথে অপরাজিতাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

Manual1 Ad Code

সৈয়দা হাজেরা সুলতানা শানজিদা, বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১৭ নভেম্বর ২০২১ : শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃবৃন্দের সাথে অপরাজিতাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে অাজ।

Manual4 Ad Code

অপরাজিতা’র নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পের অাওতায় ডেমোক্রেসি ওয়াচ, রূপান্তর, খান ফাউন্ডেশন ও প্রিপ ট্রাস্টের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বুধবার (১৭ নভেম্বর ২০২১) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার কৃষি অফিসের হলরুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্তের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অপরাজিতা প্রকল্পের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা পারভীনের উপস্থাপনায় এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান; বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি ও তৃণমূল নারী উদ্দোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)-এর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা তাহমিনা বেগম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড জলি পাল, নারী মুক্তি সংসদের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সহসভাপতি খোদেজা বিবি, মহিলা অাওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও তৃণমূল নারী উদ্দোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)-এর সদস্য রিনা সরকার, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি মৌ দেব, কমিউনিস্ট পার্টির নারী সেলের সদস্য বিউটি অাক্তার, অাওয়ামী লীগের সদস্য এলিনা রহমান কাকলী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ শাখার নেত্রী সামিয়া ইসলাম সহ অন্যান্যরা।

এতে অপরাজিতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্যগণ যথাক্রমে অামেনা, পারভীন চৌধুরী, রীতা গোয়ালা, শাহেনা অাক্তার, রাজমতি বেগম, ইয়াসমিন অাক্তার, বিউটি চৌধুরী, মাহমুদা অাক্তার, পিয়ারা, অাম্বিয়া বেগম, তাছলিমা অাক্তার, জেসমিন অাক্তার, শোভা রানী গোয়ালা, পলিনা কেরকেটা ও অক্র সূত্রধর প্রমূখ।

সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো আমাদের সংবিধানেও নারীর অধিকার নিয়ে স্পষ্ট বলা আছে। সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে অত্যন্ত সুনিপুণ ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে নারীর অধিকারগুলো। যা তাদের আপন সত্ত্বাকে উদ্ভাসিত, গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত করেছে।
আমাদের সংবিধান দিয়েছে নারীর অধিকারের প্রতি এক অসাধারণ স্বীকৃতি। সাংবিধানিকভাবে নারী-পুরুষে বৈষম্য করার কোনও সুযোগ নেই। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী,বর্ণ, নারী-পরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না’। সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরের নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন’।
সংবিধানের ২৮(৩) অনুচ্ছেদে আছে, ‘কেবল ধর্ম,গোষ্ঠী,বর্ণ,নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না’। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে,‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’।
সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের সমতা থাকবে। সংবিধানের ২৯(৩)(ক)অনুচ্ছেদে বলা আছে, নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মী উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধা-প্রণয়ন করা হইতে‘
(খ) কোনো ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ সম্প্রদায়ভুক্তব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যেকোনো আইন কার্যকর করা হইতে,(গ) যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেই রুপ যে কোনো শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর সংরক্ষন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিভৃত করিবে।সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদের বলা আছে নারীর প্রতিনিধিত্ব করার কথা। নারীর জন্য জাতীয় সংসদে ৫০ টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ৯ অনুচ্ছেদের অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়নে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন যদি না হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন হলেও তার কাঙ্খিত ফল আমরা দেখতে পাবো না৷ আমি মনে করি, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অনেক বড় বিষয়৷ এটা চর্চার মাধ্যমে আসতে হবে৷ সেটার জন্য চর্চার ক্ষেত্রটা তৈরি করতে হবে আমাদেরকে৷ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হচ্ছে একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস। এই দৃষ্ঠিভঙ্গী থেকে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

Manual3 Ad Code

সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য, নারী মুক্তি সংসদের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি ও গ্রাসরুটসের মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা তাহমিনা বেগম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, শ্রমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে মানুষ হিসেবে নারীরও মর্যাদা নিশ্চিত হবে। নারী হিসেবে অামরা করুণা চাই না। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন মানে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়তা বা অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র পুরোপুরি বিকশিত হয়না। অনেক কথা বলার থাকলেও, সরাসরি কিছু সুপারিশ করছি, ১. রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে সম্মানী ভাতা চালু করতে হবে। ২. রাজনৈতিক দলসমূহের কেন্দ্রীয় পর্যায়সহ সকল পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩% পদ নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।”

Manual8 Ad Code

অপরাজিতা প্রকল্পের জেলা কো-অর্ডিনেটর মর্জিনা আক্তার ও উপজেলা কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা পারভীন জানান, “নারী জনপ্রতিনিধিরা শুধু নারীদের নয়, প্রতিনিধিত্ব করেন পুরুষ সমাজেরও। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে নারী-পুরুষের সমানধিকার তথা ন্যায্য সুযোগ সুবিধা লাভের দিকনির্দেশনার আলোকে এ যাবত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যারমধ্যে ১৯৯১’র সংসদ নির্বাচনের পরে নির্বাচন কমিশনের জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী প্রথমবারের মতো দলীয় রাজনীতিতে সকল কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শতকরা ৩০ ভাগ নারীর জন্য সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের একটি বড় সুযোগ তৈরী হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোতে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সভাপতি বা সম্পাদক পদে নারীদের নির্বাচিত হতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে নারীদের কি করণীয় তা আলোচনা করাটা খুবই জরুরী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোতে যে নারীরা রয়েছেন তাদের চ্যালেঞ্জগুলো শুনা এবং সে অনুযায়ী এগুনোটা এখন সময়ের দাবী।”

 

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code